অতিরিক্ত ঘামের সমস্যার সমাধান কী

58

উষ্ণ আবহাওয়ায় কিছুক্ষণ থাকলে বা কোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় যদি মাত্রাতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়?
বগলের নিচে, হাতের বা পায়ের তালুতে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়ার সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ১% মানুষের এই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকে। ইংরেজিতে এটিকে হাইপারহাইড্রোসিস বলা হয়ে থাকে।
শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়া যেমন কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, শরীরে উপস্থিত অন্য কোনো রোগের কারণে হতে পারে আবার তেমনি কোনো কারণ ছাড়াও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
শরীরের যে কোনো অংশে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হতে পারে। আবার শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশেও অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হতে পারে। সাধারণত বগলের নিচে, হাতের বা পায়ের তালুতে, কপালে, উপরের ঠোটে এবং ঘাড়ে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হতে দেখা যায়।
ঠিক কী কারণে শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, এ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

ধারণা করা হয়, এটি হাইপারথ্যালামাসে ত্রুটির কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে। হাইপারথ্যালামাস মস্তিষ্কের ঐ অংশ যেটি শরীরে ঘাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ভাসকুলার সার্জন মার্ক হোয়াইটলি বলেন, সামাজিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিকর ঘামের সমস্যা হলো হাতের তালু ঘামা।
হোয়াইটলি বলেন, অনেক মানুষই হাত ঘামার কারণে আরেকজনের সাথে করমর্দন করতে অস্বস্তি বোধ করেন। কারণ করমর্দনের পর যখন ঐ ব্যক্তি তার হাত মোছেন, সেটি অপমানজনক।
বাংলাদেশের মত উষ্ণ আবহাওয়ার দেশে অতিরিক্ত ঘামের সাথে শরীরে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়াও একজন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অপদস্থকর অবস্থায় ফেলতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত ঘামে কাপড় ভিজে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে।
শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়ার সমস্যা যথেষ্ট অস্বস্তিকর এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবমাননাকর হলেও, খুশির বিষয় হলো প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হলে ক্ষেত্রবিশেষে ডারমাটোলজিস্টরা ওষুধ গ্রহণ, বোটক্স ইনজেকশন নেয়া বা সার্জারির মাধ্যমে ঘাম তৈরি করা গ্রন্থিগুলো অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন। তবে শরীরের কোন অংশে ঘাম হয়, তার উপর নির্ভর করে কোন ধরনের চিকিৎসা নেয়া হবে।
বগলের নিচে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যা থাকলে বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন কার্যকর হতে পারে। বোটুলিন এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যেটি ঘাম তৈরি করা গ্রন্থিগুলোর সাথে যুক্ত স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা থামিয়ে দেয়, ফলে ঘাম তৈরি হয় না। তবে এই পদ্ধতি স্থায়ী নয়, ওষুধের ডোজের ওপর নির্ভর করে প্রতি ছয় থেকে নয় মাসে এই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করতে হয়।
ঘামের সমস্যার স্থায়ী সমাধান পেতে সার্জারি করতে হবে, যেটিকে এন্ডোস্কোপিক ট্রান্সথোরাসিক সিম্যাথেকটমি বলা হয়। এই সার্জারির মাধ্যমে ঘাম তৈরি হওয়ার গ্রন্থিগুলোর সাথে সংযুক্ত স্নায়ুর সংযোগ ছিন্ন করা হয়। এই সার্জারি করে হাত ঘামার সমস্যা সমাধানে প্রায় ৯৯% সফলতা পাওয়া যায়। তবে এই সার্জারির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
একটি সমস্যা হলো, শরীরের যেসব অংশে ঘাম তৈরি হওয়ার কথা ছিল সার্জারির ফলে সেসব অংশে ঘাম সৃষ্টি হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু ঘাম তৈরিকারি গ্রন্থিগুলো শরীরে ঘাম উৎপন্ন করছে। এরকম ক্ষেত্রে, উৎপন্ন ঐ ঘাম শরীরের অন্যান্য অংশ দিয়ে নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অর্থাৎ, আপনি হাতে অতিরিক্ত ঘামের জন্য সার্জারি করার ফলে হাতে ঘাম তৈরি হলো না কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশে ঘামের পরিমাণ সাধারণ সময়ের চেয়ে বেড়ে গেলো। সাধারণত শরীরের নিচের অংশে বা ঘাড়ে এই অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়ে থাকে। আরেকটি ঝুঁকি হলো, সার্জারির পর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যত কম বয়সে হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের এই সমস্যা সমাধান করা যায় ততই ভাল। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরণের অষুধ গ্রহণ করা কোনভাবেই উচিত নয়।
ঢাকার মিলেনিয়াম হাসপাতালের চিকিৎসক পলাশ দেবনাথ বলেন নিয়মিতভাবে শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশ ঘামলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ঘামের সমস্যা যদি এত বেশি থাকে যে আপনার দৈনন্দিন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এছাড়া হঠাৎ যদি ঘামের সমস্যা শুরু হয়, তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পারিবারিকভাবে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকলে বা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি সময়ে, যেমন রাতে, ঘামলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।