স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সম্মাননা জানালো কণিকা

17

রক্তদানে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সম্মাননা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে রক্তদাতা সংগঠন কণিকা। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি।
এসময় রক্তদান ও রক্ত নিয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬৩ ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা জানানো হয়। এরমধ্যে ৪০ জনকে সুপার ডোনার সম্মাননা, ৫ জনকে নতুন রক্তদাতা সম্মাননা, ৩ জনকে দুঃসাহসিক রক্তদাতা সম্মাননা, ৩ জনকে বর্ষ সেরা রক্তদাতা সম্মাননা, ২ জনকে কণিকা সেরা সংগঠক সম্মাননা, ১ জনকে উদীয়মান সংগঠক সম্মাননা এবং ৩ টি সংগঠনকে রক্তদানে অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও রক্তদান বিষয়ক সংবাদের জন্য দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সরোয়ার সুমন ও সিভয়েস টোয়েন্টিফোর ডট কমের বার্তা প্রধান আলম দিদারকে সাংবাদিক সম্মাননা প্রদান করা হয়।
কণিকার সহ-সভাপতি নাঈমুল হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান তানির সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসউদ। এসময় তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যারা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, তাদের জন্যই আমাদের এই আয়োজন। তাদের সম্মানিত করতে পারলে সাধারণ মানুষ রক্তদানে আরো উদ্বুদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস আমার।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সিকান্দর খান বলেন, ‘আমার মা চট্টগ্রামে সফলভাবে রক্তগ্রহণ করা প্রথম ব্যক্তি। আমি মায়ের জন্য সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় রক্ত দিয়েছিলাম। আমরা যে রক্ত দিই, আমার রক্ত হিন্দুর কাছে যাচ্ছে নাকি মুসলমানের কাছে যাচ্ছে, নাকি বৌদ্ধের কাছে যাচ্ছে আমরা জানিনা। যারা রক্ত দেয়, রক্ত নিয়ে কাজ করে তারা বিশাল হৃদয়ের মানুষ। আপনার রক্ত কার শরীরে গিয়ে কাকে বাঁচিয়ে রাখে, আমরা কেউ জানি না। এটা তো মহাপুণ্যের কাজ। মানুষের উপকারে আমরা রক্ত দিই, এতেই আমরা সন্তুষ্ট৷ নিজের স্বার্থ ভুলে গিয়ে এই কাজ যারা করে তাদের চেয়ে মহৎ আর কে ?’ ‘আমরা হতাশ হয়ে বলি আমাদের ছেলে মেয়েরা উচ্ছন্নে গেছে। এখন বলা হয় কিশোর গ্যাং, এই কিশোর গ্যাংকে চাইলেই রক্তদাতা গ্যাং করা যায়। কণিকার মাধ্যমে ৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে, এটা সোজা কথা নাকি? ৫ হাজার মানুষকে যুক্ত করে যারা এই কাজ করেছে তারাও এর ফজিলত পাবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে কিশোর গ্যাং থাকবে না, তাদের সমাজসেবা মূলক কাজে জড়াতে হবে। বাংলাদেশ মানুষ ভালো, বাংলাদেশের মানুষ পরস্পরের কথা চিন্তা করেন। বাংলাদেশের মানুষ নিজের যা আছে তা দিয়ে অন্যজনকে সহযোগীতা করে।’
প্রধান আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজের ডিন ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রক্তদান অনেক মহৎ কাজ, রক্তদাতার যে আত্মতুষ্টি, এটা অনেক বড় পাওয়া। আমার নিজের ছেলেরও দুই বছর বয়স থেকে রক্ত দিতে হয়েছে টানা তিন বছর। তখন আমি বুঝেছি রক্ত কত মূল্যবান। কারো যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন তারা বুঝতে পারে রক্তদাতাূের ত্যাগ কত বড়।
অনেকের মধ্যে রক্তদানের বিষয়ে ভয় কাজ করে। এই ভয় দূর করার জন্য কণিকার মত সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কণিকার সাথে যে তরুণরা আছে, এভাবে যদি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব সংগঠনে আসে, তাহলে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ কমে যাবে, তরুণরা খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হবে না।’ এসময় কণিকার সদস্যদের রক্তনিয়ে নিঃস্বার্থ কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, কলামিস্ট ড. মুহাম্মদ মাসুম চৌধুরী, কণিকার সাদারণ সম্পাদক তারেক সাব্বির প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি