সিআরবিতে জাতীয় উদ্যান প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী

13

চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবির শত বছরের ঐতিহ্য প্রকৃতি ও সৌন্দর্য এবং মুক্তিযোদ্ধার সমাধিসৌধ ধ্বংস করে কোন হাসপাতাল হবে না, এখানে একটি জাতীয় উদ্যান হবে আর এর নাম হবে ‘বঙ্গমাতা জাতীয় উদ্যান’-এমনটি দাবি নিয়ে গতকাল সিআরবিতে নাগরিক সমাজ সর্বশেষ মহাসমাবেশ করেছে। চট্টগ্রামের ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, মেয়র, এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বলা যায়, সমাবেশটি নগরীর আপামর সাধারণ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সমাবেশে মন্ত্রী, মেয়র,এমপি ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের প্রদত্ত বক্তব্যের সূত্র ধরে বলা যায়, এটি যদিও নাগরিক সমাজের দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময়ের সিআরবি রক্ষার ধারাবাহিক আন্দোলনের সমাপনি কর্মসূচি ছিল, বাস্তবে আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিতব্য প্রধানমন্ত্রীর গণসমাবেশকে সামনে রেখে নাগরিক সমাজের দাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার একটি সুযোগ সৃষ্টি করাই মূল উদ্দেশ্য। যা মহাসমাবেশের প্রধান অতিথি সাবেক মন্ত্রী, প্রবীণ রাজনীতিক এবং সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়। তিনি সিআরবির মহাসমাবেশে বলেছেন, ‘চট্টগ্রামবাসী ৪৮৩ দিন ধরে আন্দোলন করছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের যত সংসদ সদস্য আছি আমরা একটি দরখাস্ত লিখলাম রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। সকল এমপি-মন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার সেই দরখাস্তে স্বাক্ষর করেছেন। সেই দরখাস্ত নিয়ে আমরা রেলমন্ত্রীর কাছে গেলাম। সঙ্গে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং নওফেলও ছিল। রেলমন্ত্রী কথা দিয়েছেন এখানে হাসপাতাল হবে না। সারাদেশ সহ পৃথিবীতে যারা চট্টগ্রামের লোক আছে তারা কোনোদিন এখানে হাসপাতাল চায় না। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীও একমত হবেন। প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ড থেকে জনসভা শুরু করবেন। সেখানে আমরা, আপনারা সবাই যাব, নাগরিক সমাজও যাবে মিছিল ব্যানার নিয়ে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইব। তখন তিনি নিজে ঘোষণা দিবেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।’ বিশেষ অতিথি তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ টেলিফোনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যের সাথে মিল রেখে বলেন, ‘সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই আছেন। আমরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। রেলমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করার পর তিনি বলেছেন, পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট করে কিছু হবে না। কেউ কেউ ভুলবশত পরিবেশের ক্ষতিকারক প্রকল্প নিয়ে ফেলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশ প্রকৃতির প্রতি আন্তরিক।” বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হলো, দেশে উন্নয়ন হবে মানুষের অগ্রগতি হবে। তবে অগ্রাধিকার দিতে হবে মানুষ কি চায়। নেত্রী বলেছেন, প্রতিটি প্রকল্পে স্থানীয় যারা সুবিধাভোগী তাদের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে বাস্তবায়ন করা। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা এই স্থানের পরিবর্তে প্রকল্প অন্য স্থানে করার যে দাবি তা সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’ সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আহŸায়ক ড. অনুপম সেন বলেন, “যখন জানতে পারলাম এখানে পিপিপিতে হাসপাতাল হচ্ছে তখন সবাই মিলে সভা করে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রয়োজনে আমৃত্যু আন্দোলন করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সারাবিশ্ব পরিবেশ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। হাসপাতাল অনেক জায়গায় হতে পারে। সিআরবির মতো সুন্দর জায়গা খুব কম আছে। শত প্রজাতির গাছ আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোজাসুজি আবেদন প্রেরণ করলাম। সেদিনই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে এখানে আর কোনোদিন হাসপাতাল হবে না। যিনি বিশ্বজুড়ে পরিবেশের জন্য আন্দোলন করছেন তিনি এ পরিবেশ নষ্ট হতে দিবেন না। তাঁর নির্দেশেই সংসদীয় কমিটি হাসপাতালের জন্য অন্যত্র জায়গা খুঁজছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সিআরবিতে বঙ্গমাতার নামে উদ্যান করা হোক। আজ এখান থেকে সিআরবিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব উদ্যান ঘোষণা করছি।” এসময় মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে এখান থেকে হাসপাতাল সরে গেছে। মেয়র হিসেবে প্রস্তাবনা মালিকানা রেলের থাক। সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে আমাদের অর্থায়নে এখানে বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান নান্দনিকভাবে করে দেব।’ আমরা নাগরিক সমাজের একটি সফল আন্দোলনের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। তবে মোশাররফ হোসেনের ভাষায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে আরো কিছুদিন অর্থাৎ ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজনীতির পৌড়খাওয়া এ নেতার বক্তব্য অনুধাবন করে আর কয়টা দিন আন্দোলন অব্যাহত রাখা জরুরি। সর্বশেষ চট্টগ্রামবাসী আশায় বুকবেঁধে থাকবে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না। তবে এখানে প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিসৌধকে আরো সুরক্ষা, দৃষ্টিনন্দন করে সাধারণের কাছে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সেই হিসেবে নাগরিক সমাজের দাবি যথার্থ। সিআরবিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হোক। প্রস্তাবিত নামকরণের প্রতিও চট্টগ্রামবাসীর পূর্ণ সমর্থন থাকবে-এমন প্রত্যাশা আমাদের।