সরকারের টানা এক যুগ পূর্তি উন্নয়নের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক

33

গত ৬ জানুয়ারি বুধবার আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের ২বছর এবং ধারাবাহিক সরকার পরিচালনায় এক যুগ পূর্তি হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসৃত দল আওয়ামী লীগ বঙ্গকন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একযুগ ধরে ধারাবাহিক সরকার পরিচালনা করে আসছে। এ দীর্ঘ শাসনকালে বাংলাদেশকে সামগ্রিক উন্নয়ন ও অর্জনে এক অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। বর্তমানে সারা দেশে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রিংরোড, কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই মেগা প্রকল্পগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যেও প্রতিটি ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রাবহ বেড়েছে রেমিট্যান্স। ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। রিজার্ভের ক্ষেত্রেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ অবস্থান করছে ৪ হাজার ২০৯ কোটি (৪২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন) ডলারে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ। ষাটের দশক থেকে দেশের মানুষ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা শুনে এলেও বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কন্দ্রের যুগে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১০ সালে। পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মতপার্থক্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন অনেকেই একে অবাস্তব বলে সমালোচনা করেছিলেন। দিনে দিনে সেই পদ্মা সেতু পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানির মতো বাংলাদেশের মানুষও যে মেট্রোরেলে চড়বে, সেই স্বপ্নও পূরণ হতে চলেছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহর চীনের সাংহাই নদীর মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে উঠবে। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য মাথাপিছু জিডিপি ৪ শতাংশ বেড়ে হতে পারে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার? এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারিতে গত এপ্রিলে রপ্তানি আয় তলানিতে পৌঁছালেও এরপর ধীরে ধীরে বাড়ছিল, তবে ডিসেম্বরে এসে আবার হোঁচট খেয়েছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েই যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করে চলেছেন, তেমনি ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমানা বিরোধেরও নিষ্পত্তি করেছেন শেখ হাসিনা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বুলেট ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার। বুলেট ট্রেনটি চালু হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে মাত্র ৫৫ মিনিটে। অর্থাৎ ছয় ঘণ্টার জায়গায় সময় বাঁচবে পাঁচ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে ঢাকা-মাওয়া চার লেনের সড়কটিও শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।
এ জন্য বর্তমান সরকার অবশ্যই প্রশংসা পেতে পারে। আমরা সরকারের যুগপুর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর ১৩ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে বছরের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনা করে। মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সেই (আওয়ামী লীগ) সরকারের দুই বছরও পূর্ণ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। আমরা আশা করি, এ সরকার উন্নয়নের যে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছে, তা যথাসময়ে শেষ হবে, দেশ শিগগিরই উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হবে। সরকারের আরো বেশি সফলতা কামনা করছি।