সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের জন্য প্রয়োজন টেকসই উন্নয়ন

18

গতকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের দায়িত্বগ্রহণের ৩বছর পূর্তি হয়েছে। এ উপলক্ষে মেয়র গত বুধবার চসিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনে তিনি তাঁর বিগত তিন বছরের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, নগরের উন্নয়নকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে কাজ করছেন তিনি। তড়িগড়ি নয়, বরং সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়েই তিনি চট্টগ্রাম নগরীকে গড়ে তুলতে চান বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। এক্ষেত্রে তিনি নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাঁর দায়িত্ব পালনকালে গত তিন বছরে সড়ক যোগাযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়কবাতি স্থাপন, নগরপরিকল্পনা এবং পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের উন্নয়নে বাস্তবায়িত বিভিন্ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরেন। উল্লেখ্য যে, ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। সে দায়িত্বগ্রহণের তিন বছর পূরণ হয়েছে ১৫ ফেব্রæয়ারি, ২০২৪, বৃহস্পতিবার। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী তার ঘোষিত ৩৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আরো কিছু বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসময় তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করে মানুষের হাঁটার উপযোগী করা হয়েছে, চসিকের সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা দেনা পরিশোধ করা হযেছে, অসন্তোষ দূর করে সহনীয়ভাবে গৃহকর আদায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়নকে নিজের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। এছাড়া যানজট নিরসনে ৩৮ ফুটওভার ব্রিজ ও দুটি মোড়ে আন্ডারপাস নির্মাণ, নগর ভবন নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আন্ডারগ্রাউন্ড এসটিএস নির্মাণে গৃহীত উদ্যোগকে সাফল্য হিসেবে অবহিত করেন। তিনি বলেন, প্রায় ১১০০ কোটি টাকা দেনা নিয়ে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। গত তিন বছরে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ শোধ করা হয়েছে। পরিশোধ করা হয়েছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এবং ঠিকাদারদের পাওনা। মেয়র পর্যায়ক্রমে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে সৌন্দর্যবর্ধন করে নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়া হবে বলে সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ পিসি রোডের কাজ শেষ করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সব কাঁচা সড়ককে পাকা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, পতেঙ্গা টানেল এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণ ও এয়ারপোর্টের প্রবেশমুখে বিশ্বের ২য় বঙ্গবন্ধুর ভ্যাটিক্যাল ম্যুরাল নির্মাণ করেছি। জংশনগুলোতে শৃঙ্খলা আনতে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে ‘ইন্টারসেকশন ডেভেলপেন্ট’ ও পে পার্কিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরাতন চান্দগাঁও থানা এলাকায় চসিকের জমিতে টার্ফ খেলার মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে। হালিশহর বি বøকে খেলার মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে। আগ্রাবাদ বেপারীপাড়া কাঁচা বাজারের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। মোহাম্মদপুর ফ্লাইওভারের নিচে দৃষ্টিনন্দন জানাজার স্থান নির্মাণ করা হয়েছে। শহরের মূল সড়কের বিভিন্ন মোড়ে দৃষ্টিনন্দন গোলচত্বর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সড়কের মিড আইল্যান্ড আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। মেয়র বলেন, শহরের প্রধান সড়কগুলোকে আলোকিত ২৬১ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নগরের একাধিক প্রধান সড়কে স্থাপন করা হয়েছে নৌকা ও প্রজাপতির আদলে বাতি। মেয়র বলেন, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাসযোগ্য নান্দনিক নগর প্রতিষ্ঠার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি গত তিন বছর দায়িত্বপালন করেছি। সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারলেও ভবিষ্যতে যারাই দায়িত্বে আসবেন তারা তা বাস্তবায়ন করবে-এমনটি প্রত্যাশা করেন তিনি। চসিক সূত্রে জানা যায়, আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে মেয়রের ৩বছর পূর্তিতে একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে চসিক। সেখানে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরবেন বলে জানা যায়। আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগরী ও প্রধান বাণিজ্যিক শহর। হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ নগর দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখে আসলেও বাস্তবে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে অনেক পিছিয়ে। প্রয়াত মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন। চসিককে স্বাবলম্বিকরণসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অনন্য শোভায় বর্ধিত করেছেন। পরবর্তীতে সেই ধারা অব্যাহত থাকলে তা আজ পূর্ণতা পেত। দীর্ঘ একদশক পর বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নগরবাসীর প্রত্যাশা বেড়ে যায়। তিনি সেই প্রত্যাশা পূরণে কতটুকু পেরেছেন নগরবাসী হয়ত মূল্যায়ন করবেন, তবে নগরবাসী মনে করেন, একজন দেশপ্রেমিক মেয়র হিসেবে তাঁর কাছ থেকে আরো বেশি দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রত্যাশা ছিল। তিনি স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়নে বেশ কিছু কাজ করেছেন এবং ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করে নগরবাসীর প্রীতি অর্জন করেছেন-তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বৈর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তদারকি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। চসিকের প্রায় সব বিভাগের কর্মচারিদের স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নিলেও শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ না হওয়ায় মানুষ গড়ার কারিগরদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। মেয়র এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নিবেন প্রত্যাশা। আমরা মেয়রসহ নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানাই।