শ্রমবাজার খুলছে মালয়েশিয়ায় ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট

7

অবশেষে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগের সফলতা মিলছে মালয়েশিয়ায়। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। দেশটির মন্ত্রিসভায় সব পেশার শ্রমিক নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশের নাম রয়েছে। সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ এর শুরু আরো একবছর আগে থেকে দেশটির সরকার বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের শ্রমিক নেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নতুন করে বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার খবর ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের (রেমিটেনস্ প্রবাহ) অন্যতম প্রধান খাত বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি। আর সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখনো জনশক্তি রপ্তানির প্রধান টার্গেট। তবে আশঙ্কার কথা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এ নিয়ে সংবাদপত্রে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু বাজার সম্প্রসারণের তেমন কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি এখনও। বলা অপেক্ষা রাখেনা যে, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে সরকার নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। সরকারিভাবে (জিটুজি পদ্ধতি) কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান (সিন্ডিকেট) দুর্নীতি করায় গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। গত আড়াই বছরে শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে কমপক্ষে পাঁচবার ইতিবাচক ঘোষণা এলেও ওই সিন্ডিকেটের জন্যই তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা যায় নি। জানা যায়, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জিটুজি প্লাস বাতিল করে দেয় মালয়েশিয়ার সরকার। জিটুজি প্লাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যেতে প্রথমে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। পরে তা ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে প্রায় সব কর্মী মালয়েশিয়া যেতে তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। এর মাধ্যমে দুদেশের এজেন্টরা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে বলে মালয়েশিয়া সরকারের অভিযোগ। জিটুজি প্লাসে কর্মী পাঠানোর কাজ পেয়েছিল ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। যারা সিন্ডিকেট হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের বিশেষ পদ্ধতি থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়। এর ফলে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। একই সঙ্গে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনিয়মিত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানা রকম হয়রানি শুরু হয়, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। মালয়েশিয়ায় আমাদের বিশাল এক কর্মী বাহিনী রয়েছে, যারা গায়ের ঘাম ঝরিয়ে এ দেশটির জন্য রেমিটেন্স পাঠায়, দেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স প্রবাহ সমৃদ্ধ হয়। ফলে আমরা মনে করি, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে অবশ্যই আগের ভুলত্রæটি মোকাবিলা করে এই শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সহনশীল ব্যয়ের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করাটাই এখন বড় কর্তব্য। সিন্ডিকেট সমস্যাটি এখানে প্রকট। কেউ কেউ জনশক্তি নিয়োগের বিষয়টি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বলছেন। তবে অনেকে মনে করেন, অনিয়ম-প্রতারণা বাড়বে। এই অবস্থার মধ্যেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বাজার স¤প্রসারণ ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক সংসদীয় ককাসের ২৪ দফা প্রস্তাব পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে এ খাতে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। প্রায় অভিযোগ শোনা যায়, ভেতরে বাইরে যেকোন বাণিজ্যিক বিষয়ে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কথিত সিন্ডিকেটের হোতাদের আইনের আওতায় আনা হয় নি। এ সিন্ডিকেট কিন্তু সরকারের অনেক অর্জনকে ধূলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি। কোনোভাবেই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে যাতে ব্যয় বেড়ে না যায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাতে কেউ নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে- সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মালয়েশিয়ায় আবারও শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের যে সুযোগ হয়েছে, তাকে স্থায়ী রূপ দিতে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট।