মিয়ানমারকেই থামাতে হবে আত্মঘাতি সংঘাত

4

দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সামরিকজান্তার শাসন চলছে। তারা মানছে না আন্তর্জাতিক রীতিনীতি। গণতন্ত্র ধ্বংস করে বন্দুকের নল উঁচিয়ে শাসন করছে সমগ্রদেশ। এদেরকে বিশ্বরাষ্ট্রসভার অধিকাংশ সদস্য গণতন্ত্র ও শান্তির পথে ফিরে আসার আহবান জানালেও গুটিকয় পরাশক্তি তাদের সেনা শাসনকে আসকারা দিচ্ছে। গোপনে দিচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। অর্থনৈতিক ভাবেও কেউ কেউ তাদের সাহার্য্য করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবৈধ সহায়তা করছে। যে কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সে দেশের মানুষের হৃদয়ের ভাষা উপেক্ষা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার ফলে সাধারণ সচেতন নাগরিকরা গড়ে তোলেছে বিদ্রোহী বাহিনী। সেনা শাসনের অত্যাচার নির্যাতনের বিপক্ষে সাধারণ মানুষের পক্ষে যুদ্ধ করছে অস্ত্র হাতে একদল মিয়ানমারের নাগরিক। তারা মারামারি করে মরলে আমাদের কি ? কিন্তু তাদের সংঘাত আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যার উল্টোস্রোত আমাদের দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবনকে চরম উৎকন্ঠায় রেখেছে। তার পরও পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ধৈর্য্যরে সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশ সরকার ধৈর্য্যরে চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারের সংঘাতের গুলি ও মর্টারশেল উড়ে এসে পড়ছে আমাদের তুর্মরু সীমান্তে ও ঘুমধুম এলাকায়। যার কারণে গতপরশু তিন জন বাংলাদেশি গুলিতে আহত হয়েছে দু’জন হয়েছে নিহত ও এলাকার মানুষ বশতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। যা দেশের জন্য একটা বাড়তি ঝামেলা। এমনিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীর জ্বালায় আমরা নানামুখি ক্ষতির সম্মুখিন, তার উপর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত আমাদের কাটাঘায়ে লবণে ছিটা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির কোন ধার না ধারলেও মিয়ানমার সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে প্রাণরক্ষা করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার যোগেও বিদ্রোহীদের ওপর আক্রমণ করছে। তারপরও বিদ্রোহীদের দমানো যাচ্ছে না। মিয়ানমারের ঘটনাসমূহ জানান দিচ্ছে লাঠিগুলির জোরে চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। মিয়ানমারের ৫৮ সীমান্তরক্ষি বাংলাদেশ ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বান্দরবানের তুমর্রু বিজিবি তাদের হেফাজতে রেখেছে। এতে বোঝাযায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বেকায়দায় সময় পার করছে। যে কোন দেশের জনগণ জেগে ওঠে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হলে সে দেশ আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে না। বিষয়টি মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে। তারা দেশের বিদ্রোহী নাগরিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতে পারে।
মিয়ানমার সরকার বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনায় বসলে আমাদের দেশের নাগরিকরা স্বস্তিপেত। যেহেতু মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাষ্ট্রসংঘসহ কারো কোন পরামর্শকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেহেতু তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের করার কিছুই নেই। মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চাইলে সংঘাত এড়াতে আন্তর্জাতিক মহল অবশ্যই মানবিক চিন্তা থেকে এগিয়ে আসবে। কিন্তু শান্তির উদ্যোগে মিয়ানমার জান্তা সরকারকেই নিতে হবে। জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে মিয়ানমারের দূরত্ব বেড়েছে অনেক আগেই। তাই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধ করতে তারা চীন, ভারত ও রাশিয়ার সাহায্য চাইতে পারে। হয়তো এমন একটা সময় আসবে মিয়ানমার সেনা বাহিনীকে তাদের সীমান্তরক্ষী বিজিপির মতো দেশ ছেড়ে পালাতে হতে পারে। পাঁচ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে তাদের ষাটের অধিক সেনা সদস্য নিহতের খবর তাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতি হতে রক্ষা পেতে চাইলে সমস্যা সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই। আমাদের উৎকণ্ঠা এবং সাধারণ বাংলাদেশিদের বিপদ হতে বাঁচাতে পারে একমাত্র মিয়ানমার জান্তাসরকার। তাই মিয়ানমারের আত্মঘাতি সংঘাত থামাতে এগিয়ে আসতে হবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে এমন মত বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের।