মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়াতে হবে

28

 

গত ২৮ জুলাই দেশে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে ১লাখ ৫৪ হাজার ৮১৯ জনের মধ্যে পাশ করেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬জন। পাশের হার ৭৮.২৯ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ- ৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৮৭১ শিক্ষার্থী। সার্বিক ফলাফলে গত বছরের চেয়ে পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে এবার। অপরদিকে দেশের সব বোর্ড মিলিয়ে পাশের হার ছিল ৮০.৩৯ ভাগ। মোট পাশের হার অনুযায়ী চট্টগ্রামসহ দেশে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার জন্য কলেজ সমুহে পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। এসব আসনে ভর্তি হওয়ার পরও এক তথ্য মতে কলেজ সমুহে প্রায় ৮ লাখ সিট খালি থাকবে। এরপরও দুঃচিন্তার কালো মেঘ ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর। বিশেষ করে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভালো করেও ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন। গত ২ জুলাই দৈনিক পুর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর প্রায় ৬৫ শতাংশই সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী নগরীর সরকারি কলেজ গুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে আসন রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪০০টি। এ বছর কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখার গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, নগরীর ৮টি সরকারি কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৯ হাজার ৭০০টি। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ৪০০টি, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৩ হাজার ৬৫০টি এবং মানবিক বিভাগের আসন সংখ্যা ২ হাজার ৬৫০টি। কিন্তু জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর পছন্দ হিসেব করলে আরো প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীকে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কলেজ কিংবা বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে হবে। এ অবস্থা শুধু চট্টগ্রামে নয় সারা দেশেই বিরাজমান। সাধারণত, পাশ করা শিক্ষার্থীর তুলনায় এ স্তরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসন বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। যেহেতু ভর্তির ক্ষেত্রে এবারও পছন্দের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানেই তুমুল প্রতিযোগিতা হবে, সেহেতু বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। বস্তুত সব স্তরেই ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ অবস্থায় দেশে শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত দুই দশকে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে; বেড়েছে ভর্তি ও পাশের হার। শিক্ষাবিদদের মতে, দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়ছে না মান। আমরা যদি আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে চাই, তাহলে শিক্ষার সব স্তরে মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে অনুধাবন করতে হবে শিক্ষার মান বাড়ানোর বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ খাতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দরকার যোগ্য, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য কেবল সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা যাতে অক্ষুণ্ন থাকে সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রমে যাতে কোনো রকম জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ করা যায়, প্রতিবছর নতুন শিক্ষাবর্ষে এবং নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘উন্নয়ন ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। নিয়মবহির্ভূত এসব অর্থ প্রদান করতে গিয়ে অনেক অভিভাবক দিশেহারা হয়ে পড়েন। এসব অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ করা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করার পর বহু শিক্ষার্থী গ্রাম ছেড়ে রাজধানী বা চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে। গ্রামীণ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ প্রবণতার অবসান হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।