ভয়াবহরূপে করোনার তৃতীয় ঢেউ! স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে

11

একি করোনার তৃতীয় ঢেউ! ভারতের মত শক্তিধর দেশটি যে ভ্যারিয়েন্টের কাছে পাত্তাই পায়নি,বাংলাদেশে সেই ভ্যারিয়েন্টের প্রবেশ এবং পাগলা ঘোড়ার মত জেলায় জেলায় বিস্তার নতুনভাবে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে দেশব্যাপী। গত কয়েকদিনে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বেড়েই চলছে করোনা সংক্রমণ। মৃত্যু ও আক্রান্ত গত মার্চ-এপ্রিলের মতই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। অনেকের ধারণা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক না পরা ও সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখার যে নিয়ম আবারও চালু হয়েছে-এর বড় খেসারত দিতে হতে পারে জাতিকে। সরকার কাগজে কলমে লকডাউন ঘোষণা করেই চলছে আর মানুষ লকডাউন ভেঙ্গেই চলছে, এতে মানুষের কাছে লকডাউন নামটি ঢিলেঢালা হরতালের মতই বিবেচিত হচ্ছে মাত্র। বাস্তবে এধরনের অকার্যকর লকডাউন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পথ খুঁজে পেয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিৎ করোনা সংক্রমণের -এ ঢেউ রুখতে কার্যকর লকডাউন অথবা শাটডাউনের মত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তবে একেবারে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সরকারের নানা পদক্ষেপ স¤প্রতি দেশে করোনা পরিস্থিতির অনেক উন্নত হয়েছে। মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছে। করোনা নিয়ে গত বছর এমন সময়ে যে ভয় ও আতঙ্ক ছিল এখন মানুষের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক নেই। কিন্তু বেশি নির্ভয় হতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধির ন্যূনতম বিধি না মানাটা দুঃখজনক। জনগণের উদাসীনতার কারণে পরিস্থিতির আবারও অবনতি হচ্ছে। দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। সরকার গত মাসের শুরু থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ক্রমান্বয়ে কঠোর লকডাউন দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছে, কিন্তু মানুষের অবাধ যাতায়াত ও মেলামেশা সংক্রমণ বরং বৃদ্ধিই পাচ্ছে। এ অবস্থায় রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় গত বুধবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) আরোপ করেছে সরকার; যা ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। লকডাউন চলাকালে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়বে না, বন্ধ থাকবে যাত্রীবাহী ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমারসহ যাত্রীবাহী নৌযান। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকার আশেপাশে লকডাউন ঘোষণা করায় ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকায় কোন ট্রেন প্রবেশ করবেনা, ঢাকা থেকেও কোন ট্রেন অন্য জেলায় ছেড়ে যাবে না। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ফটিকছড়ি উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউনসহ চট্টগ্রাম নগরসহ জেলার সর্বপর্যায়ে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া গত সোমবার থেকে থেকে এক সপ্তাহের জন্য খুলনা জেলায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয প্রশাসন। ফলে মোট আট জেলায় একসঙ্গে লকডাউন শুরু হল। এর বাইরে আরও ৯ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভায় বিধিনিষেধ অব্যাহত রয়েছে।
বস্তুত কিছু মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফল পুরো দেশবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে লকডাউনের নিয়ম লঙ্ঘন করে অনেকে রাজধানীর বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির জন্য এই বেপরোয়া মানুষগুলো অনেকাংশে দায়ী। কিছু মানুষের বেপরোয়া আচরণের ফল পুরো দেশবাসী ভোগ করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমানে যেসব জেলা বা এলাকায় বিধিনিষেধ চলছে, সেসব স্থানে কেউ যাতে বিধিনিষেধ অমান্য করতে না পারে এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। কেউ কৌশলে বিধিনিষেধ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। গত এক বছরে বিশ্বে করোনাভাইরাসের হাজার হাজার মিউটেশনের খবর পাওয়া গেছে। টিকা নেওয়ার পরও করোনা থেকে পুরোপুরি সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনুমোদিত টিকাগুলো বেশ কার্যকর হলেও করোনার বিরুদ্ধে সেসব শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন। কাজেই করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে জনগণকে বাধ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।