বিশ্ব পরিবেশ হুমকিতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

7

 

বিশ্বের জলবায়ু ও পরিবেশ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এর জন্য মানবজাতির বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও স্বেচ্ছাচারী স্বভাবই দায়ী। বর্তমানে ইউরোপে চলছে ভয়ানক যুদ্ধ। রাশিয়া আক্রমণ করেছে ইউক্রেন। চার মাসের অধিক সময় ধরে চলছে মানবতা বিধ্বংসী যুদ্ধ। এতে উসকানী দিচ্ছে আমেরিকা ও ন্যাটোভুক্ত দেশসমূহ। ফলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থামছে না। বেসামরিক-সামরিক লোকজনের পাশাপাশি যুদ্ধের অত্যাচারে আক্রান্ত ইউরোপের প্রাকৃতিক পরিবেশ। আকাশপথ, জলপথ ও স্থলপথের এ যুদ্ধে প্রকৃতির গাছপালা, পশুপাখি থেকে সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্য সংকট ও জ্বালানি সংকট চলছে। তার পাশাপাশি বিশ্বের জলবায়ু এবং তাপমাত্রার মধ্যেও তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তার উপর বিদ্যুতের লোডশেডিং আগুণে ঘি ঢেলে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে দেশে আরো দু’দিন অধিক তাপমাত্রার পরিবেশ চলতে পারে। শ্রাবণে বৃষ্টি হওয়া এদেশে স্বাভাবিক। কিন্তু এমন শ্রাবণ মাসে গ্রীষ্মের তাপদাহের পরিবেশ মানুষের জন্য অসহ্য। প্রকৃতির উপর মানবের অত্যাচার ও যুদ্ধের গোলাবারুদের বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন প্রকার মারনাস্ত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণে সমগ্র বিশ্বের পরিবেশে তার প্রভাব পড়ছে। সমুদ্রে নানা অস্ত্র ও বোমার বিস্ফোরণের কারণে খাল-নদী-সমুদ্রের প্রাণিরা আক্রান্ত হচ্ছে। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় আমাদের দেশের নদী ও সমুদ্রে ৪ বছরে অর্ধশত ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর হতে জানা যায় সমুদ্রের মাছ, কাঁকড়া, কাছিমসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি জলজ পরিবেশ দূষিত হবার কারণে মারা যাচ্ছে। বর্ষার প্রথম দিকে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে পুরো সিলেট বিভাগ ভেসে থাকলো। বর্তমানে ভরা বর্ষায় বৃষ্টি হচ্ছে খুবই কম এবং তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বিশ্বে বহু সম্মেলন হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার বিপরীতে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রভ‚ত্ব ফলানোর জন্য নানা অজুহাতে যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বকে অশান্ত করে যাচ্ছে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে চীন-ভিয়েতনাম উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্য সফর করে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বাঁধানোর পক্ষে উস্কানি দিচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আলামত স্পষ্ট। যেকোন সময় পরাশক্তিগুলো নিজেদের দাপট বোঝাতে বিশ্বযুদ্ধের দিকে বিশ্বকে ঠেলে দিতে পারে। যদি সর্বময় পারমাণবিক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তা হলে বিশ্ব আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না। কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে এবং যারা বেঁচে থাকবে তারাও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে না। বিশ্ব বর্তমানে ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয়ের দিকে হাঁটছে। এ অবস্থা বিশ্বের কোন দেশের মানুষের জন্য শুভ নয়। বিশ্বের মানুষ যে যেখানে থাকুক না কেন ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’ এ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বের সরকার প্রধানদের যুদ্ধ হতে বিরত রাখার সর্বময় আন্দোলন শুরুর সময় এসেছে। বাইডেন, পুতিন, সিজিং পিংসহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্র নায়কদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার পক্ষে রাষ্ট্রসমূহের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিশ্বের জলবায়ু, পরিবেশ ধ্বংসের কর্মযজ্ঞে কোন রাষ্ট্র যেন সাহস না করে তার জন্য বিশ্ব মানবকে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে। এ বিশ্বে সকল মানুষের বসবাস করা এবং খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অধিকার সমান। আর পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে ভয়াবহ বোমার পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ যুদ্ধ অবস্থা হতে বিশ্বকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত বিশ্ব, মধ্য আয়ের দেশ, উন্নয়নশীল দেশ, নিম্ন আয়ের দেশসহ সকল দেশের তাবৎ বৈষম্যের অবসান বিশ্বমানবের স্বার্থে প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে পরিবেশ ও জলবায়ু এবং বিশ্বের মানুষের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।