বিদেশি ফল রাম্বুটান দেশের বড় বাগান রাঙামাটিতে

16

রাঙামাটিতে বিদেশি ফল রাম্বুটান কিছুটা লিচুর মতো। আকারে লিচুর চেয়ে বড়, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা চ্যাপ্টা। ফলটির দাম বেশি। আবার জনপ্রিয়তা থাকায় বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। রাঙামাটি কৃষি অফিস বলছে, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাম্বুটান বাগান রাঙামাটিতে অবস্থিত। পাহাড়ের মাটিতে এক সময় ঝুম চাষের আধিক্য থাকলেও বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী কার্যক্রমের কারণে এখানে বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের মাটি কৃষির জন্য অত্যন্ত উৎকৃষ্ট। এখানে যা চাষ করা হয়, তাই চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপন্ন হয়, মানও ভালো হয়। তাই সরকারও কৃষির উন্নয়নে পাহাড়ে নিত্যনতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। পাহাড়ের মাটিতে বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন ঢাকা নিবাসী রাঙামাটির সন্তান প্রকৌশলী প্রবীণ চাকমা। জেলা সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের মুবাছড়ি এলাকায় নিজের চার একর পাহাড়ি জমিতে তিন বছর আগে ৩৫০টি রাম্বুটান গাছ লাগিয়েছেন তিনি। এ প্রকৌশলী ভারতের চেন্নাই থেকে রাম্বুটানের চারাগুলো কিনে এনেছিলেন।
ভারত থেকে প্রতিটি চারার দাম পড়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা করে। আর দেশে আনার খরচসহ প্রতিটি চারার দাম পড়েছে দুই হাজার ৬০০ টাকা। শখের বসে এসব চারা সংগ্রহ করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। এ বাগান থেকে চলতি মওসুমে দুইবার ফল বিক্রি করে আয় করেছেন তিন লাখ টাকারও বেশি। কৃষি বিভাগ জানায়, তিন দশক আগে থেকে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় অল্পস্বল্প রাম্বুটান চাষ হলেও এ ফল সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। রাম্বুটান দেখতে ডিম্বাকৃতি, খোসা নরম কাঁটাযুক্ত।
পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। পুরু খোসা ভেতরে সাদা শ্বাস। যা খেতে ও দেখতে লিচুর মতোই। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। অপুষ্ট ফলের রং সবুজ থাকে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। তবে পানি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি এ ফল চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
রাম্বুটান বাগানের কর্মচারী চন্দ্রজিৎ চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, এ বাগানে এক সময় আম, কাঁঠাল, লিচুসহ অন্যান্য ফল চাষ করলেও রাম্বুটানের দাম বেশি পাওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় বড় পরিসরে রাম্বুটান চাষ করা হয়েছে। অল্প পরিশ্রম এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিদের মধ্যে এ ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিংশুক চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এ ফল বাজারে আকার ভেদে কেজি প্রতি এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মণিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, রাম্বুটান দেশের মানুষের জন্য নতুন। এ ফল চাষের জ্ঞান সাধারণ কৃষকদের মধ্যে নেই। উচ্চমূল্যের এ ফলটি চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কৃষি প্রেমীরা বলছেন, সুস্বাদু রাম্বুটান পাহাড়ের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।