বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

13

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়- কক্সবাজারে হাসপাতাল ক্লিনিকে ঝটিকা অভিযানে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধের কথা বলেছেন। প্রবাদ আছে ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’। ঢিমেতালে নরম কথায় এদেশের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের সরকারি-বেসরকারী এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে সাধারণ মানুষ সঠিক ভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, অনুপস্থিতি, দায়িত্বে অবহেলার খবর পত্র-পত্রিকায় সবসময় আসে। ডাক্তাররা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন না করে প্রাইভেট ক্লিনিকে সময় দিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর তালে ব্যস্ত। হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা সময় মতো ডাক্তার পায় না। সরকারি ফ্রি ওষুধ পত্র নয়ছয় করে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা খেয়ে ফেলতে দেখা যায়। হাসপাতালগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবও চোখে পড়ে। সরকারিভাবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও রোগ চিহ্নিত করণের উপকরণাদি নষ্ট হয়ে গেলে তা সঠিক সময়ে ঠিক করা হয় না। যার ক্ষতির উল্টোটান টানতে হচ্ছে সাধারণ দরিদ্র রোগীদের। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত এখনো হয় নি। যার কারণে যে সকল রোগীর সামর্থ আছে তারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। যার ফলে প্রচুর দেশি অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের সরকারি-বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল সমূহের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত এবং সেবার মান নিশ্চিত করা গেলে দেশের গণস্বাস্থ্যের উন্নয়ন হতে বাধ্য। কিন্তু দেশে ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি, অবৈধ ভেজাল ওষুধের কারখানাগুলো বন্ধে সংশ্লিষ্টদের শক্ত পদক্ষেপ দেখা যায় না। একশ্রেণির অসাধু ডাক্তার এবং অসাধু ব্যবসায়ী দেশে চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। বাণিজ্য করে প্রচুর অর্থ রোজগার করলেও তারা চিকিৎসার মান রক্ষা এবং সরকারি অনুমোদনের তোয়াক্ষা করতে দেখা যায় না। দেশে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসার নামে মোটা অংকের বাণিজ্যে লিপ্ত। সুস্থ স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে সুস্থ জাতি ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয় যে কোন দেশে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে অনিয়ম চলছে তাতে দেশের গণস্বাস্থ্য হুমকির মুখোমুখি। সরকারি অনুমোদন ছাড়া, চিকিৎসার পরিবেশ তৈরি না করে, যদুমধুরা পর্যন্ত ক্লিনিক ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসে আছে। এসকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিক, ডাক্তার, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কাছে দেশের অসংখ্য মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না দেশের মানুষ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কক্সবাজারে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে নরম সুরে অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল ব্যবসা বন্ধের কথা বলেছেন। শুধু কক্সবাজার নয়, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অসংখ্য সরকারি অনুমোদনহীন এবং নিম্নমানের প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল চলছে। সেসব নিম্নমানের ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ভেজাল ওষুধের কারণে গণস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। একদিকে যেমন সরকারি হাসপাতালে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব, তেমনি বাজার হতে অবৈধ ভেজাল ওষুধ ঝেটিয়ে বিদায় করাও জরুরি। ভেজাল ওষুধের সকল কারখানাসহ ভেজাল ওষুধের সরবরাহ বাজার হতে বন্ধ করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য। সুস্থজাতি গঠন দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের উক্ত বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি। দেশ হতে চিকিৎসার নামে প্রতারণার পাশাপাশি ভেজাল মুক্ত ওষুধ বাজারে নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দায়িত্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের। জাতির স্বার্থে একটি সুশৃঙ্খল ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বশীল ভ‚মিকা আশা করে দেশের সমর্বস্তরের জনগণ।