পূর্বাঞ্চলসহ রেলওয়ের বিশাল সম্পত্তি সংরক্ষণ করা জরুরি

24

ইংরেজ আমলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রা শুরু। ইংরেজ সরকার রেলওয়ের জন্য দেশের বিশাল ভূমি অধিগ্রহণ করে। সে সব অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যুগপরম্পরায় রেলওয়ে হাজার হাজার একর সম্পত্তি বেদখল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা এবং রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা রেলওয়ের বহু সম্পত্তি অবৈধ ভোগ দখল করছে। যাতে রেল কর্তৃপক্ষের কোন লাভ হচ্ছে না। দেশে একসময় লক্ষ লক্ষ একর ভূমি অনাবাদী পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জায়গা জমির প্রতি মানুষের আগ্রহও তেমন ছিল না। ক্রমে দেশে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবাসন সমস্যা বেড়েছে। আর দেশে শিল্পকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাবৃদ্ধির কারণে ভূমির মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বর্তমানে এদেশের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়েছে। তার সাথে দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তারা তাদের শিল্প-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমির প্রযোজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো ছোট আয়তনের একটি দেশে ভূমির উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৯৭১ সালে স্বাধীন হবার পর থেকে বাংলাদেশ, কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সর্বক্ষেত্রে দিন দিন এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে এ দেশ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশের পরিচয় থেকে উঠে এসে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে চলেছে। যার ফলে স্কুল-কলেক, মেডিকেল, কলকারখানা, বাণিজ্যিক এলাকাসহ সর্বসধরণের উন্নয়নকে তরান্বিত করতে দেশের ভূমি সর্বোচ্চ উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশাল সম্পত্তি এখনো অবৈধ দখলদারের এবং অকেজো পড়ে থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠিত হবার পর দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চান্দগাঁও আবাসিক এলাকয় ভাড়া বাসায় তার কর্মকাÐ চালিয়েছে। অবশেষে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে মুরাদপুর এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সুন্দর ভাবে কাজ চালানোর সুযোগ পেয়েছে।
রেলওয়ের জায়গা সমূহ বেদখল ও অকেজো ফেলে রাখার কোন অর্থ নেই। বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ের জায়গায় নানা স্থাপনা নির্মিত হলে তার সুফল বাংলাদেশ রেলওয়ে ভোগ করতে পারবে। দেশের রেলব্যবস্থাপনা ও রেলওয়ের উন্নয়নে সে অর্থ ব্যবহার করা যাবে। রেলওয়ে কিছু কিছু কর্মকাÐ বিতর্কিত : (১) রেলওয়ের জায়গা কর্মচারীদের অবৈধ ভাবে দখল করে ভোগ করার সুযোগদান। (২) রেলওয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি পুনরোদ্ধার না করা। (৩) রেলওয়েতে ভয়ানক কোটা প্রথা বহাল রাখা (রেলওয়েতে বংশ পরম্পরায় তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চাকুরি করতে দেখা যাচ্ছে। রেলের চাকুরিতে দেশের সর্বসাধারণের অধিকার খুবই সীমিত। (৪) রেল লাইন সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ধীরগতিসহ বহু বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা অশান্বিত হয়েছি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ‘দখল মুক্ত রেল ট্রেনিং একাডেমি’র জায়গা’ শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদন দেখে। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি (আরটিএ) এর ৬৮ দশমিক ৩৯ একর জায়গার বেদখল থেকে উদ্ধার অভিযানের সুসংবাদ পেয়ে আমরা রেলকর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। আবার জনৈক যুবলীগ নেতা কর্তৃক ২৬ একর পুকুর উদ্ধার করতে না পারায় দুঃখ ও পেয়েছি।
চট্টগ্রামসহ সারাদেশের রেলওয়ের বেদখল জায়গা দখলে আনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। আর রেলের প্রতি ইঞ্জি জায়গা থেকে আয় করে রেলসেক্টরকে সুন্দর সুচারু ও লাভজনক সংস্থায় রূপান্তরে এগিয়ে আসতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে। প্রয়োজনে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দেশের অন্যান্য সেক্টরের কল্যাণেও ব্যবহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারি নীতি নির্ধারক মহলকে। আমরা চাই বাংলাদেশ রেলওয়ের নামে কোন ভূমি কারো অবৈধ দখলে না থাকুক। রেলওয়ের ভূমি দেশ, সরকার ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহৃত হোক।