পুণ্যময় রজনী শবে কদর জাতীয় জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনাই হোক আজকের প্রার্থনা

8

পবিত্র রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো লায়লাতুল কদর। ইসলামের ইতিহাসে এ রজনীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অধিক। পবিত্র কুরআনে এ রাতের ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণনা করে একটি সুরা রয়েছে। বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ রাতের গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ৩৪)। রমজানুল মোবারকের শেষ দশকের যেকোর বেজোড় তারিখে এ রাত অনুসন্ধারে জন্য ইসলামে ইতিকাফের বিধান চালু করা হয়েছে। কোরআন পাকে শবে কদরের রাতকে হাজার মাস হতে উত্তম বলা হয়েছে। হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। ভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যার এই রাতের ইবাদত নছিব হয়।
আরিব বর্ষ গণনায় রমজান মাসের যে গুরুত্ব তা মূলত শবে কদরের রাতকে কেন্দ্র করে। আর এ রাতেই মহানবী (সা.) এর ইপর প্রথম পবিত্র কুরআন তথা ওহি নাজিল হয়। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি তো নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; আমি তো সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই রাসুল পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন এবং সব জানেন। তিনি নভোমÐল-ভূমÐল এবং এ উভয়ের মাঝে যা আছে সেসবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস কর; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদেগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সেই দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূ¤্রাচ্ছন্ন হবে। (সূরা দুখান, আয়াত: ২-১০)।
শবে কদর নামের তাৎপর্য : আরবিতে লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত, ভাগ্য রজনী মহিমান্বিত রজনী। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি শবে কদর নামেই সমধিক পরিচিত।
এ রাতে ইবাদত করলে আল্লাহ পাক বান্দার ইবাদতে বরকত দান করেন, রহমত ও বরকত নাজিল করেন এবং বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামিন প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত ? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। আছে কি কেউ রোগাক্রান্ত? আমি তাকে সুস্থ করে দেব। কার কী অভাব? আমি দূর করে দেব; কার কী প্রয়োজন? আমি তা পূর্ণ করে দেব। এভাবে সুবেহ সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: খÐ-৩, পৃষ্ঠা: ৩৭৮)।
বরকতপূর্ণ এই রজনীতে অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার, দোয়া ও জিকির-আসকার করা, নফল নামাজ ও তাসবিহ-তাহলিল পড়া দরকার। আল্লাহর কাছে পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তি চাওয়া এবং সার্বিক সফলতার জন্য কান্নাকাটির মাধ্যমে রাত কাটানো শ্রেয়। পাশাপাশি কবর জিয়ারত করা; নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য দোয়া করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা।
এই কল্যাণময় রজনীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের ডাকে সাড়া দেন এবং দোয়া কবুল করেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় বিশেষ দিন-রাতসমূহকে কেন্দ্র করে যে লৌকিক আচার-উৎসব হয়ে থাকে, বলতে দ্বিধা নেই অবশ্যই তা বাহুল্য। এতে কোন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কল্যাণ নেই। এসব পরিত্যাগ করে নিজধ্যানে আল্লাহর ইবাদত করাই শ্রেয়। আসুন আমরা, আজকের পবিত্র রাতে মসজিদে ও ঘরে বসে নামাজ আদায়, কুরআন শরিফ তেলাওয়াত, জিকির আজকার, দরুদ শরিফ পাঠ করে নিজ নিজ মা-বাবা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ সকল অসহায় মানুষের কল্যাণ কামনায় ও মহামারি করোনা থেকে রক্ষায় রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের প্রার্থনা করি।
দেশ থেকে সকল প্রকার অমানবিকতা, হিংসা- বিদ্বেষ, হত্যা-রাহাজানি, অপরাধ প্রবণতা দূরীভূত হোক এ কামনায় আমরা সবাই মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোনরকম অধর্মের কাজ থেকে দেশবাসী মুক্ত থাকুক এ প্রতিজ্ঞা আমাদের সঠিক ধর্মীয় অনুভ‚তিকে শানিত করবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে আজকের শবে কদর জাতীয় জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক এ কামনাই হোক দেশের সর্বস্তরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য।