পাপন ও বিসিবির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন সাবের হোসেন চৌধুরী

20

সবধরনের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। এর মধ্যে এক বছর পুরোপুরি নিষিদ্ধ, আর বাকি এক বছরের সাজা স্থগিত। ২০১৮ সালে জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখায় এই শাস্তি পেয়েছেন তিনি।
প্রায় দেড় বছর আগের ওই ঘটনা এতদিন ধরে তদন্ত করেছে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ (আকসু)। তবে, এতদিন ধরে এসবের কিছুই জানা যায়নি। দু’দিন আগে হঠাৎই খবর আসে, নিষিদ্ধ হতে চলেছেন সাকিব। দিনভর জল্পনা-কল্পনা শেষে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ঘোষণা করা হয় সাজা। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ক্রিকেটারদের ১৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে তার মনোমালিন্যের খবর কারও অজানা নয়। একারণে সাকিবের শাস্তির পেছনে অনেকেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে দাবিও উঠেছে, পাপনের পদত্যাগ চাই।
একারণেই হয়তো সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কমাতে আইসিসির শাস্তি ঘোষণার পরপরই সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিবিসি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।
এসময় আকসুর তদন্ত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, সাকিব নিজেই সবচেয়ে বড় সাক্ষী। আমরা, বিসিবির সবাই কেউ কিছুই জানতাম না। সেই জানুয়ারি থেকে এই তদন্ত হচ্ছে, আমরা জানতাম না। ওরা শুধু সাকিবের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছে। আমরা শুধু রেজাল্ট জানতে পেরেছি। সাকিব আমাকে প্রথম বলেছে, এটা অস্বীকার করছি না। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের একদিন পরে আমাকে জানিয়েছে। শাস্তির বিষয়টি আমরা আজ বিকেল পর্যন্ত কেউ জানতাম না।’
তবে, বিসিবি প্রধানের এসব কথা বিশ্বাস করতে রাজি নন অনেকেই। কারণ, ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে এসে কথাচ্ছলে তিনি বলেছিলেন, ‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের খবর শিগগিরই আসবে। চিন্তা করেন না, ওইগুলা আসতেছে।’ তার এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠছে, সাকিবের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে না জানলে সেদিন কার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান?
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও। নাজমুল হাসান পাপনের ২২ অক্টোবরের বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে তিনি টুইটারে লিখেছেন, আমি মনে করি, বিসিবি সবই জানতো। দুঃখের সঙ্গে বলছি, পাপন যখন বলছেন, তার কোনো ধারণা ছিল না, তিনি সত্য বলছেন না। ২২ অক্টোবরের সংযুক্ত ভিডিও ক্লিপ দেখে মনে হচ্ছে, পাপন অধৈর্য হয়ে আইসিসির (ঘোষণার) জন্য অপেক্ষা করছেন।
এদিন আরও এক টুইটে তিনি ক্ষোভ ঝেড়েছেন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের ওপর। বিসিবির একটি টুইট শেয়ার করে তিনি বোর্ডের আচরণকে ভন্ডামি ও দ্বিমুখী বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, বিসিবি আইসিসির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায়, ক্রিকেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একই ধরনের বিশ্বাস তাদের। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে বিসিবি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, ম্যাচ ফিক্সিং বন্ধ করছে না।
সাবের হোসেন চৌধুরীর তৃতীয় টুইটেও ছিল বিসিবির কড়া সমালোচনা। তিনি লিখেছেন, বিসিবির উচিত ছিল (সাকিবের) শাস্তির মেয়াদ কমানোর চেষ্টা করা। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এ বিষয়ে সাকিবের পাশে দাঁড়ায়নি, এখন আবার মায়াকান্না করছে।
অনেকেই মনে করছিলেন, সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে আইসিসির তদন্ত এবং এ নিষেধাজ্ঞার শাস্তির পেছনে সম্ভবত ভারতেরও কোনো ভূমিকা থাকতে পারে।
এ বিষয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট প্রধান অজিৎ সিং জানান, বিষয়টা পরিপূর্ণভাবে আইসিসিই সামলেছে। কারণ, ওই সময় আইপিএলে দুর্নীতির বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব ছিল আইসিসির। আমাদের নয়।
তবে অন্যসব মৌসুমের মতো ২০১৮ সালেও দুর্নীতিবিষয়ক বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রে আইসিসিকে সব তথ্যপ্রমাণ দিয়ে সহায়তা করেছে বিসিসিআই।