নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে হোক ঈদযাত্রা

11

আর মাত্র এক বা দুইদিন পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর। কঠোর সিয়াম-সাধনার পর পুলক আনন্দে মেতে উঠার দিন পবিত্র ঈদ। এ ঈদকে সামনে রেখে নগরীর লাখো মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমানে যেই যেভাবে পারছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। সেই সাথে নানা বিড়ম্বনা, দুর্ঘটনা, চাঁদাবাজির মত ঘটনার স্বীকার হয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগে বিরতিহীন ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ায় যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঈদযাত্রার প্রথম ট্রেন সার্ভিস ছিল এটি। নিরাপদ ও আরামদায়ক ট্রেনের যখন এমনটি অবস্থা বাকি বাহনগুলোর কি অবস্থা হতে পারে-এ ভয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ যাত্রীরা। এছাড়া রেল, বাস ও লঞ্চের বড় একটি সমস্যা সীটের অধিক যাত্রী বহন। ট্রেন চলার পথে পাথর নিক্ষেপ আর বাসের প্রতিযোগিতামূলক নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে কেন্দ্র করে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়তে হয় বাহনগুলোকে। এতে ঈদের আনন্দই মাটি হয়না শুধু; অনেক পরিবারে শোক আর দুঃসহ কষ্টের জীবন শুরু হয়। এসব প্রতিটি ঈদ যাত্রার নিত্য ঘটনা হলেও প্রতিকারের স্থায়ী কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। একথা ঠিক, ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ এসময় মানুষ ভালবাসার আবেগে আপ্লুত হয়, যেকোন প্রকারে জন্মভিটেয় গিয়ে মা-বাবাসহ পরমাত্মীয়দের সাথে ঈদ করতে চায়। ফলে বাস, ট্রেন আর লঞ্চগুলো এ সুযোগ গ্রহণ করে লক্করঝক্কর বাস, ট্রেন ও লঞ্চগুলো ঘষামাজা করে যাত্রী বহন করে থাকে। এতে যাত্রীদের হয়রানীর নতুনমাত্রা যোগ হয় আর দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ভোগান্তি-বিড়ম্বনার অ্যতম কারণ। জোড়াতালি দিয়ে রঙচঙ করা বিপুলসংখ্যক বাস-লঞ্চ যাত্রী পরিবহণের জন্য কতটা নিরাপদ এবং এর ইঞ্জিন কতটা ক্রটিমুক্ত তা নজরদারির বিশেষ কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ঈদযাত্রায় নতুন করে যুক্ত হওয়া এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন কারা চালাবেন, তারা আদৌ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিনা এবং তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা- তা যাচাইয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নেই। এ সময় সড়কে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে তাই স্বাভাবিকভাবে সড়কে যানবাহন তদারকি বাড়াতে হবে। ঈদের সময় যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়কে মোটরসাইকেল নামার প্রবণতাও বাড়বে, এটাও কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে।
ভারী হোক, হালকা হোক কিংবা ছোট সড়ক হোক আর বড় সড়ক হোক, যানবাহন চলাচলের জন্য যে আইন ও বিধিনিষেধ আছে, সেটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, নিজে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে যেন অন্যের যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ না করে ফেলি। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। নানা বিড়ম্বনা যেমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কালোবাজারে চড়া দামে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা, টোল প্লাজায় অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ, রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি, রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নানা অব্যবস্থাপনা, হাইওয়েতে অব্যবস্থাপনা, ফেরিঘাটে যাত্রী এবং যানবাহনের চাপে দীর্ঘ যানজট এবং বিভিন্ন টোল প্লাজায় দীর্ঘ লাইন প্রভৃতি। সব মিলিয়ে ঈদযাত্রা একটা কঠিন যাত্রায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় প্রতি বছর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে যেহেতু অধিকাংশ মানুষ ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করার পাশাপাশি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
লঞ্চডুবির ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির প্রয়োজন। বিশেষ করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তোলা এবং ট্রেনের ছাদে যাতে কোনো যাত্রী ভ্রমণ করতে না পারে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা এবং তৎপরতা বাড়ানোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া জরুরি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বের হওয়ার পথগুলোয় যাতে কোনোভাবে যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ করে নজর দিতে হবে। ঈদযাত্রায় স্বস্তি নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি সড়ক ও মহাসড়কে শৃঙ্খলার সঙ্গে যানবাহন চলাচল করতে দিতে হবে। আনন্দের ঈদযাত্রা যেন শোকের যাত্রা না হয়, সে বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির বিষয়ে জেনেছি, প্রশাসন ভ্রাম্যমান অভিযান অব্যাহত রেখেছে, ঈদের আগে পরে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে-এমনটি প্রত্যাশা সাধারণ যাত্রীদের।