দ্বিতীয় ধাপে আশ্রয়ণ প্রকল্প কার্যক্রম গৃহহীন পরিবারের জন্য অনন্য পুরস্কার

9

মুজবিবর্ষ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে সরকারের বড় উপহার হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। সরকারের গৃহীত কর্মসুচির মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং মানবিক এ প্রকল্পে রয়েছে একটি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ গৃহপ্রদান কার্যক্রম। ইতোমধ্যে দুই দফায় প্রায় সোয়া একলাখ অসহায় পরিবারকে ভূমি ও ঘর প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, ভবিষ্যতে দেশের কোন মানুষ ভূমি ও গৃহহীন থাকবেনা। আমরা জানি সকল নাগরিকের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করা সাংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অধিকার বাস্তবায়নে একান্ত আন্তরিক।
গত মাসের শেষ রবিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ গৃহপ্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে দুই শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছে ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। সন্দেহ নেই, দরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য ভ‚মি ও ঘর এক অনন্য পুরস্কার। বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল দেশে এ ধরনের উদ্যোগ সরকারের সৎসাহসের বহিঃপ্রকাশ । আমরা সরকারের এ মহতী উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি। ইতোপূর্বে কোনো কোনো স্থানে গৃহহীনদের জন্য সরকারি বরাদ্দের বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে আমরা জানতে পারি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ শহরে গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দের সরকারি বাড়ি পেয়েছেন বিত্তশালী ও সচ্ছল ব্যক্তিরা। জাতির জন্য এটি অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক সংবাদ। এর ফলে গৃহহীনদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে। স্মতর্ব্য যে, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ। সরকার সামাজিক নিরাপত্তাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে -এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের সহায়তার জন্য সরকার এ ধরনের আরো বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমরা লক্ষ করে আসছি, দেশের দুস্থ-দরিদ্র-অসহায় মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাসে আক্রান্ত ও নদীভাঙনকবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম ক্ষমতায় আসে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় প্রথমবারের মতো ১৯৯৭ সালে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। এছাড়া সরকার ঘরেফেরা, গৃহায়ণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো-ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা। গত বছর কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয় কেন্দ্র খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। এছাড়া মুজিববর্ষে দেশের গৃহহীন, ভূমিহীন, দরিদ্র-অসহায় পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিনামূল্যে ঘর প্রদানের লক্ষ্যে বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার।
সরকারের এসব প্রকল্প সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্য দিয়ে ভূমি ও গৃহহীন এ পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তবে যে বিষয়টি দেখা জরুরি তা হলো, তড়িঘড়ি করে নির্মাণের ফলে এসব বাড়ির ভিত যেন দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ না হয়। সম্প্রতি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলাসহ কোনো কোনো স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভিত ছাড়াই বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। কাজেই গৃহহীনদের মাঝে বাড়ি হস্তান্তরের আগে বাড়িটি টেকসই হল কিনা সেই দিকটির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। সবচেয়ে বড় কথা, দরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত এ ধরনের প্রকল্পে কোনো ধরনের অনিয়ম যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। মনে রাখতে হবে গৃহহীন এ দরিদ্রদের জন্য সরকারের এ উপহার তাদের জীবনে পরম পাওয়া। তাদের হয়ত অধিকাংশের এমন কোন সামর্থ নেই, ঘর সহসা ভেঙে গেলে মেরামত করতে পারবে। তদুপরি সরকারের ভাবমুর্তির বিষয়টিও এ প্রকল্পের সাথে জড়িত। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে।