দেশে জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদের ছড়াছড়ি দুদকের সার্বিক তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি

13

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় ডজনখানিক পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীর নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অঢেল সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মচারী, কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা, প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তার দুর্নীতির সীমা পরিসীমা নেই। দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন কাগজে কলমে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা হলেও তাদের পক্ষে অনেকের অজ্ঞাত আয়ের তদন্ত করা সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের মধ্যেও দুর্নীতিবাজ অফিসারের খবর পাওয়া যায়। দুর্নীতি দেশের সব সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। দেশে লাগামহীন দুর্নীতির কারণে করোনাকালীন সময়েও দেশে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। যা আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন হতে জানতে পেরেছি।
পক্ষান্তরে দেশে বর্তমানে সাধারণ মানুষের অভাব অনটনের শেষ নেই। সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে দু’বেলা স্বাচ্ছন্দে খেতেও পারছে না। স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ এবং স্বল্প আয়ের কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ এই শ্রেণিভুক্ত। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ধকলে সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ জনগণ। একদিকে তথাকথিত অসাধু ব্যবসায়ী সমাজ এবং অন্যদিকে দেশের অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী দাপটের সাথে জীবন যাত্রার ব্যয়ভার সহজেই মিটিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘ দিন হতে দেশে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষ ও স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীরা ব্যয়ভার মিঠাতে হিমশিম খেলেও সরকার সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য বেতন স্কেল পরিবর্তন করেনি। এমতাবস্থায় দেশের সিংহভাগ মানুষ অতিকষ্টে জীবন যাপন করছে। সাধারণ মানুষ যেখানে দু’বেলা খেতে পারছে না, সেখানে দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা হতে শুরু করে বিভিন্ন অসাধু সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অর্থ ব্যাংকে জমা সাথে গাড়ি বাড়ি, অর্থ-সম্পদ ও সম্পত্তির পাহাড় তৈরি করছে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অগণিত মা-বোনের ইজ্জতের বদৌলতে অর্জিত দেশের স্বাধীনতার সুফল দুর্নীতিবাজ কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা লুটেপুটে খাচ্ছে। এমন অবস্থা তৈরির জন্য দেশের মানুষ স্বাধীনতা পক্ষে ছিলনা এদেশের সর্বস্তরের মানুষ। দেশের মানুষ চেয়েছিল সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন মুক্ত বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে দুর্নীতিবাজ ও অসাধু অনৈতিক ব্যবসায়ীর হাতে দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়বে এমনটা এদেশের সাধারণ মানুষ চায়নি। পত্রিকার প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তদন্ত রিপোর্টের কথা আসলেও অসংখ্য দুর্নীতিবাজ ছোটবড় সরকারি অফিসারের কথা ও তাদের স্ত্রী সন্তানের নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার কথা দুর্নীতি দমন কমিশন হতে আমরা পাচ্ছি না। দুর্নীতিদমন কমিশন বেছে বেছে কারো কারো কিংবা কোন কোন শ্রেণির অফিসারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তদন্ত করলে হবে না, দেশকে দুর্নীতির সয়লাব থেকে বাঁচাতে সকল দুর্নীতিবাজদের সম্পদ তদন্ত করা জরুরি মনে করে স্বাধীনতা প্রিয় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। আমাদের জানা মতে একজন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মাত্র দু’বছর চাকুরি করে কোটি টাকার বাড়ি বানাচ্ছে। অথচ তার বেতন স্কেল কত এবং সব মিলিয়ে মাসিক কত টাকা পান তা সচেতন নাগরিকদের অজানা নয়। এমন সব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদ যদি দুর্নীতিদমন কমিশন স্বাধীনভাবে তদন্ত করে আয়বহিভর্‚ত সম্পদ সরকারি কোষাগারে জমা করার ব্যবস্থা করে তা হলে দেশে দুর্নীতির নাম গন্ধ যেমন থাকবে না তেমনি সরকারি কোষাগারে উন্নয়ন কর্মকাÐ পরিচালনার জন্য অর্থেরও অভাব হবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটাকে উন্নতি অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি দেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গিকার করছেন। তার জন্য সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু করেছেন। কিন্তু দেশের দুর্নীতিবাজ অফিসার এবং অসাধু ব্যবসায়ীচক্র দেশের সাধারণ মানুষের অর্থ ও সরকারি অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে খেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাÐকে টেকসই হতে দিচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী এবং প্রশাসন, আইন-বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অফিসাররা দেশ ও দেশের মানুষের শত্রæ। আমরা মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের দুর্নীতিদমন কমিশনের মাধ্যমে সারাদেশের সকল দুর্নীতিবাজদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত আয় ও সম্পদের হিসাব করে অতিরিক্ত আয়বহির্ভূত সম্পদ জব্ধ করে সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট দেশে পরিণত করবেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ মত প্রকাশ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বস্তরের দুর্নীতিদমনের ব্যবস্থা করলে দেশ দ্রæত উন্নতআয়ের দেশে পরিণত হবে এবং দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারবে এমন অভিমত বিজ্ঞনাগরিকদের।