দলীয় প্রতীক বিহীন উন্মুক্ত নির্বাচন আশাব্যঞ্জক

5

আসন্ন মে ২০২৪ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আরপিও সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে রাজনৈতিক দল ও সুধী মহলে উপজেলা নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার থাকলে বিভিন্ন দলের তৃণমূলে একদিকে কোন্দল বাড়ে অন্যদিকে সরকারি দল ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে হতাশা তৈরি হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দামামা বাজছে উপজেলা নির্বাচনের। সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপজেলায় নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশন আগামী মে মাসেই নির্বাচন শেষ করার ঘোষণা দেয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতীক বাদ দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করার ঘোষণার কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নমনীয় আচরণ করছেন। অনেকেই দলের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতাদের পক্ষে ভিড়াতে আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন। দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকার কারণে প্রার্থীদের কাছে নেতাকর্মীদের গুরুত্ব বেড়েছে। গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক দিলেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় অনেক আসনে নৌকার প্রার্থীকে বয়কট করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এবার উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি প্রতীকও তুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আবেগের জায়গায় থাকায় অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিতে বিব্রত হয়েছেন। এবার প্রতীক তুলে দেয়ার ধাক্কা ভালোভাবেই টের পাবেন প্রার্থীরা। প্রতীক তুলে দেয়ার ঘোষণায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেশিরভাগই খুশি থাকলেও অতীতে নৌকায় ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া প্রার্থীরা আছেন দুশ্চিন্তায়।
সারাদেশের ন্যায় জেলায়ও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভোটের মাঠ উন্মুক্ত রেখে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করেছেন। উপজেলাতেও সেটি হলে নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করতে পারবেন। তবে এটি করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে যাতে কোনো সংঘাতের মুখোমুখি না হয় সেটি খেয়াল রাখা প্রয়োজন মনে করে বিজ্ঞজনেরা। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় চট্টগ্রামে ১৫টি উপজেলায় শতাধিক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে তৎপর আছেন। এরমধ্যে বাঁশখালীতে চারজন, লোহাগাড়ায় তিনজন, সাতকানিয়ায় তিনজন, চন্দনাইশে চারজন, পটিয়ায় চারজন, বোয়ালখালীতে তিনজন, আনোয়ারায় তিনজন, রাঙ্গুনিয়ায় তিনজন, রাউজানে দুইজন, ফটিকছড়িতে চারজন, হাটহাজারীতে তিনজন, সীতাকুন্ডে তিনজন, স›দ্বীপে চারজন, মিরসরাইয়ে তিনজন মিলে অর্ধশত নেতা আছেন যারা উন্মুক্ত ভোটে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে মুখিয়ে আছেন। গত শনিবার গণভবনে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্মুক্ত ভোটের ইঙ্গিত দিলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। দলীয় প্রতীক ছাড়াই ভোট হবে- এটা অনেকটা নিশ্চিত হয়েই প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের প্রার্থীরাই এক্ষেত্রে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সভা, মাহফিল ও সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাতায়াত বাড়িয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীরাও ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান জানান দিচ্ছেন। দলীয় প্রতীক তুলে দেয়ায় নিঃসংকোচেই ভোটের মাঠে তৎপর থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দেশের অন্যান দল ও সাধারণ প্রার্থীরা অনেকখানি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, এমন ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। উপজেলা নির্বাচন দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার রদবদল করবে না সত্য, তবে সাধারণ জনগণ তাদের পছন্দমত উপযুক্ত সেবক নির্বাচিত করতে পারবে। বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।