দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যা উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ

31

 

টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ৬টি উপজেলার লাখো মানুষের জীবন প্রায় বিপন্ন। পানিতে আটকে আছে হাজারো শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। পানির স্রোতে ভেসে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ বেশ কয়েকজন। ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজারের অধিক ঘর বাড়ি, গবাদি পশু, ক্ষেত খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতদঅঞ্চলের সাধারণ মানুষ বিগত পঞ্চাশ বছর এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা দেখেন নি বলে বিভিন্ন সংবাদ কর্মীদের কাছে মতামত ব্যক্ত করেন। পুরো বর্ষাকালজুড়ে বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবণের শেষ দশকে এসে টানা ৫দিনের ভারি বৃষ্টিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে এমনটি বন্যা হবে-কারো কল্পনায় থাকার কথা নয়। উদ্বেগের কথা হচ্ছে এমন সব এলাকায় বন্যা দেখা গেছে, যেসব এলাকা নিম্নাঞ্চল নয়। এলাকার মানুষ কোনদিন বন্যার পানি দেখেনি। কিন্তু কেন হঠাৎ এসব এলাকায় বন্যা দেখা দিল? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা মন্তব্য চায়ের হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকার দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে রেললাইন নির্মাণ করেছে, তা যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও রেললাইন নির্মাণে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বড় ধরনের ত্রæটি রয়েছে। পাহাড় ও খাল-নদী অধ্যুষিত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া চন্দনাইশ থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কের পাশে গ্রামগুলোর অধিকাংশ জলাশয়, খাল-বিল ও নদী-নালা ভরাট করে মানুষ অপরিকল্পিতভাবে পাকা দালান নির্মাণ করে চলছে, পানি নিষ্কাশনের জন্য কোন ড্রেনেজ সিস্টেম রাখা হচ্ছে না, স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন এতে নিরব ভ‚মিকা পালন করছে, ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়ে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া পটিয়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার ৪টি প্রধান নদী, ইন্দ্রোপুল, শ্রীমাই খাল, সাঙ্গু ও ঢলু খালের ভয়াবহ ভাঙ্গন, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার ভেড়িবাঁধগুলোতে ফাটল ও জোয়ারের পানি সমতল এলাকায় ঢুকে পড়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব উপক‚লীয় এলাকার হাজার হেক্টর জমিতে চাষকরা চিংড়ির ঘের ভেসে গেছে। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষিদের।
বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, কক্সবাজার ও এ জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু এবং তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে বাঁধ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ বানের পানিতে ভাসছে। পানিবন্দি অনেকেই খাদ্য সংকটে পড়েছেন। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চন্দনাইশ এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার শঙ্খ তীরবর্তী ধোপাছড়ি, দোহাজারী পৌরসভা, বৈলতলী, সাতবাড়িয়া, বরকল, বরমার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত। এদিকে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীসহ গৃহপালিত প্রাণি সরানোর কাজে ব্যস্ত মানুষ। আউশ ধানের বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এসব এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে বান্দরবানের অবস্থা আরো শোচনীয়। হঠাৎ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামে অস্বাভাবিক বন্যা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরো খারাপের দিকে যাবে। এর আগেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরী করা। একই সাথে এ অঞ্চলের যেসব ছোট ছোট খাল, পাহাড়ি ঝর্ণাধারাই প্রবাহিত ছড়া, জলাশয় বেদখল হয়েছে, মানুষ অন্যায়ভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে সেইসব খাল, বিল, ছড়া উদ্দার করে নতুনভাবে খননের উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে অনেকসময় দেখা যায়, বড় বড় সেতু আছে, কালভার্টও আছে কিন্তু খালের দেখা নেই। এসব এলাকা চিহ্নিত করে খালগুলো খননের উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রীমাই খাল, সাঙ্গু ও ঢলু খালের বালুর মহালগুলো বন্ধ করা না গেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। বন্যা পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দ্রæত ব্যবস্থা জরুরি। কিন্তু এতে ক্ষান্ত না হয়ে আগামীতে আরো ভয়াবহ বন্যার যে অশনি সংকেত তা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম পানিতে বিলীন হতে সময়ের বেশি প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। আমরা আশা করি, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করবেন।