ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমিসেবা খাজনা দাবির বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে

70

সরকার ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সবকিছু সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে সরকার। ‘ভূমি সেবা ডিজিটাল, বদলে যাবে দিনকাল’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং এটুআই-এর সহায়তায় জমির মালিকদের হয়রানি ও ভূমি সেবা সহজীকরণে সব কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। এ অংশ হিসাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ চলছে। পাশাপাশি প্রকৃত ভূমি মালিকরা যাতে অনলাইনে ঘরে বসেই ভূমির খাজনা পরিশোধ করতে পারেন সেই উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এ লক্ষে দেশব্যাপী চলছে ভূমি মালিকদের অনলাইন ডাটা নিবন্ধন কার্যক্রম। এ কার্যক্রম শেষ করে আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে অনলাইন খাচনা পরিশোধ কার্যক্রম। সেইসাথে বিদায় নেবে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধে ম্যানুয়াল পদ্ধতি। এ পদ্ধতি কার্যকর হলে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে জমির মালিক ভূমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) পরিশোধ করতে পারবেন। এ জন্য ১০টি মডিউলসমৃদ্ধ ভূমি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (এলআইএমএস) নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে।
এই সফটওয়্যারের আওতায় অন্য মডিউলগুলো হচ্ছে- ভূমি নামজারি ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা, ভূমি নামজারি পর্যালোচনা ব্যবস্থাপনা, ভূমি মিস কেস ব্যবস্থাপনা, বাজেট ব্যবস্থাপনা, খাজনা সনদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অন্যতম। এরই মধ্যে সবকটি পদ্ধতিই প্রস্তুত করা প্রায় শেষ। ভূমি সেবার বাকি কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে এর আওতায় আসবে বলে জানা গেছে। ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে।
এর ধারাবাহিকতায় ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রচলিত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আর ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হবে না। ফলে ভূমি সংক্রান্তে দুর্নীতি নামবে শূন্যের কোটায়, বাড়বে কর আদায়ের পরিমাণ। এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও ১৫ লক্ষ ভূমি মালিককে অনলাইন নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমি মালিক নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। তবে কোন ভূমি মালিক একবার নিবন্ধন করলে পরবর্তীতে আর কেউ খাজনা দাবি করতে পারবেনা। এক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমি মালিকরা যাতে নিবন্ধন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কোন প্রতারক, ভূমিদস্যু যেন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নিবন্ধন করতে না পারে সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বলার অবকাশ নেই যে, ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। যার মাধ্যমে জমি নিয়ে ভোগান্তি, হয়রানি, অনিয়ম, দুর্নীতি স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে। জমি বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খাস বা পরিত্যক্ত জমি-পুকুর ইজারা গ্রহণ, হাটবাজারের ভিটি ইজারা, ওয়ারিশান জমি হস্তান্তর, জমি বন্ধক কোনো কিছুতেই আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। ভূমি মালিক ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে অতি সহজেই এসব কাজ নিষ্পন্ন করতে পারবেন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই। ওয়ানস্টপ সেবা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে এ পদ্ধতির পাইলট প্রকল্প সফলতার সঙ্গে শেষ হওয়ায় সরকার এখন ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করি, এ ডিজিটাল পদ্ধতি ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমি মালিকদের প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে, সেইসাথে প্রতারক চক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।