চলমান পরীক্ষাসমূহে করণীয়

57

প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষার মধ্যদিয়ে গত ২ নভেম্বর শনিবার থেকে শুরু হয়েছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা সংক্ষেপে জেএসসি পরীক্ষা ২০১৯। অতীতে দেখা গেছে, আসন্ন জেএসসি পরীক্ষা সমূহে, কয়দিন আগে থেকে আমার বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী বা তাদের অভিভাবক যেমন বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত, পরীক্ষা সম্পর্কীয় নিয়ম নীতি জানতে চেয়েছিল, তেমনি অন্যান্য বিদ্যালয়ের অভিভাবকও একইভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার থেকে জানার চেষ্টা করেছিল। তাই ভাবছিলাম একেবারে প্রিন্টিং মিডিয়ায় জেএসসি পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু লিখে প্রকাশ করলে সকলেই একই সাথে উপকৃত হবে। তাই কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলাম কিছু লিখতে। লেখার প্রারম্ভে যে কথা বলছিলাম গত শনিবার থেকেই পরীক্ষা শুরু হয়েছে জেএসসি পরীক্ষা। সেই হিসাবে রুটিন অনুযায়ী আজ ৩য় পরীক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এখন একমাত্র বিষয়, যেটি ২ ঘন্টা সময়ে ৫০ নম্বর পরীক্ষা দিতে হয়। সেই হিসাবে আজকের পরীক্ষা কিছুটা হলেও চাপমুক্ত।
যাই হোক, এখন কথা হচ্ছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রধান পরীক্ষক, হল সুপার, কেন্দ্র সচিব ইত্যাদি দায়িত্ব পালন কালে স্বাভাবিকভাবে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। উল্লেখ্য গতবার জেএসসি পরীক্ষায় ‘হল সুপার’ এর দায়িত্ব পালন করলেও এই বছর জেএসসি’তে ‘কেন্দ্র সচিব’ এর দায়িত্ব পালন করছি। সেই হিসাবে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ আগ্রহী অভিভাবক শিক্ষার্থী পরীক্ষার্থী শুভাকাঙ্খীর সম্মুখে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি; যা সংশ্লিষ্ট সকলে অনুসরণ করলে নিজেরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি শিক্ষক শিক্ষিকা তাঁদের প্রিয় ছাত্র ছাত্রীসহ অভিভাবক, মাতা পিতা তাদের ¯েœহের সন্তানদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে নিতে পারবে, একইসাথে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা হলের চাপ কমিয়ে আরো অধিক নম্বর পাবার উপযোগী হবে। আর আমার এই পরামর্শ গুলো হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে প্রথমতঃ পরীক্ষা গ্রহনের ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার কক্ষে উপস্থিত হতে হবে। তারপর যথাসময়ে উত্তরপত্র হাতে পাবার পর—
* টপশীটে যথাস্থানে পরীক্ষার্থীর তথ্য সমূহ, যেমন- নাম, রোল, বিষয়, স্বাক্ষর ইত্যাদি যথাস্থানে লিখতে হবে।
* উত্তরপত্রে বামে এবং উপরে পরিমান মত সমানভাবে মার্জিন টেনে নিতে হবে।
* ইনভিজিলেটরের নির্দেশনা ভালোভাবে শুনতে হবে এবং তা অনুসরন করতে হবে।
* প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে সবগুলো প্রশ্ন মনোযোগ সহকারে দ্রæত একবার পড়ে নিতে হবে।
* প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন প্রশ্নের আগে কোন প্রশ্নের উত্তর দিলে ভালো হবে।
* যে প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে জানা আছে তা অবশ্যই সর্ব প্রথমে দিতে হবে।
* হাতের লেখা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সুস্পষ্ট হতে হবে।
* উত্তরপত্রে কাটাছেঁড়া ঘষামাজা যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
* প্রতি শব্দে এবং প্রতি চরণে নির্দ্দিষ্ট ফাঁক রেখে লিখতে হবে ।
* বানান যাতে ভুল না হয়, সবসময় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে শুদ্ধ করে লিখতে হবে।
* প্রতিটি প্রশ্নের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
* অহেতুক অতিরিক্ত শব্দ বা বাক্য সংযোজন পরিহার করতে হবে।
ďপ্রশ্নের মান অনুযায়ী সময় বন্টন করে যথাযথ উত্তর লিখতে হবে।
* সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দশ-পনের মিনিট সময় হাতে রাখতে হবে।
* সবশেষে পুরো উত্তরপত্র ঐ হাতে রাখা সময় দিয়ে একবার দেখে নিতে হবে।
এইতো গেল পরীক্ষা কক্ষে পরীক্ষার্থীর করণীয়। এবার আসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের কিছু পরামর্শ। শিক্ষার্থী তথা পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নি¤েœাক্ত কিছু পরামর্শ গ্রহন করলে, শিক্ষার্থী বা পরীক্ষার্থী নিজেরাও যেমন উপকৃত হবে তেমনি পিতা-মাতা তাঁদের প্রিয় সন্তান আরো সক্রিয় হয়ে সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বা করাতে পারবে, একইভাবে পরীক্ষায় নম্বরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রত্যাশা পূরনে সহায়ক হবে।
আর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমার এই সংক্ষিপ্ত পরামর্শগুলো হলো:

যে কথা আগেই বলেছি, ইতোমধ্যে দুটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষার মধ্যদিয়ে ৩য় পরীক্ষা চলছে। সেই হিসাবে কিছুটা হলেও পরীক্ষা সম্পর্কে পরীক্ষার্থীর ধারণা হয়েছে। তাই অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলোর জন্যে আমার আরো কিছু পরামর্শ বা উপদেশ থাকবে-
* এই পরীক্ষায় (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা) নতুনভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা নিজে শিখন কিংবা অভিভাবক বা শিক্ষক কর্তৃক শেখানো বিশেষ কোন প্রয়োজন নেই। তবে পূর্বে শেখা প্রশ্নের উত্তর গুরুত্ব অনুযায়ী বার বার পুনরাবৃত্তি খুবই জরুরি।
* শেষ হয়ে যাওয়া পরীক্ষায়, শিক্ষার্থীদের যদি, কোন ছোটখাটো ভুলত্রæটি হয়ে থাকে, সে জন্যে কোন পরীক্ষার্থী নিজে বা কোন অভিভাবক চিন্তা বা টেনশন না করার জন্যে পরামর্শ প্রদান করা হল।
* শেষ হয়ে যাওয়া পরীক্ষায়, শতভাগ উত্তর দিতে না পারলেও ক্ষতি নেই। শতভাগ পরীক্ষার্থী যে, প্রশ্নের শতভাগ উত্তর দিতে পারবে এই রকম কোন কথাও নেই।
* শিক্ষার্থীদের বুঝাতে হবে, ছোটখাটো ভুলত্রæটি হওয়া বা সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা স্বাভাবিক। যা সাধারণত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হয়ে থাকে। তবে তা যাতে সীমার মধ্যে থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
* জেএসসি পরীক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে দৃঢ় ও আতœপ্রত্যয়ী করে তুলতে হবে। যাতে পরবর্তী পরীক্ষা গুলোতে, পূর্ববর্তী পরীক্ষার ছোটখাটো ভুল ত্রæটির কোন প্রভাব না পড়ে।
এখানে উল্লেখ্য অন্যান্য সকল পরীক্ষার মত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিন ধরনের ছাত্র ছাত্রী দেখা যায়; যেমন – উত্তম, মধ্যম ও দুর্বল শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের যার যার অব্স্থানে নিজেদের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে চাপে থাকে। কেউ বৃত্তি পাবার জন্যে চাপ, কেউ এ+ পাবার জন্যে চাপ, আবার কেউবা সম্মানজনক জিপিএ পাবার চাপ ইত্যাদি। আবার অনেকের মধ্যে অকৃতকার্য হয়ে একই ক্লাসে পুনরাবৃত্তি না হবার জন্যে মানসিক চাপও পরিলক্ষিত হয়। তাই তাদের মানসিক ভাবে দৃঢ় ও আতœবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার দায়দায়িত্ব শিক্ষক, মাতা-পিতা ও অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, পশ্চিম গোমদÐী বশরত নগর সরকারি বিদ্যালয় (৮ম শ্রেণি পর্যন্ত)