চন্দনাইশের প্রান্তিক জনপদ ধোপাছড়ি অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা

240

উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকার ধোপাছড়িতে ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাড়াটিয়া শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের অভিযোগও রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষকের পদে রয়েছে ৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ ২ জনকে উপস্থিত পাওয়া যায়। সহকারি শিক্ষক শারমিন আকতার ডিপিএড প্রশিক্ষণে থাকলেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না সহকারি শিক্ষক সোহেল পারভেজ। বিদ্যালয়ে কোহিনুর আকতার নামে একজন ভাড়াটিয়া শিক্ষিকাকে পাঠদান করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আনিসুর রহমান বলেছেন, সোহেল পারভেজ নেতা মানুষ, মাসে ৪ দিনও বিদ্যালয়ে আসেন না। শামুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এনামুল হক নামে একজন শিক্ষককে পাঠদানরত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি আমির হোসেনের পরিবর্তে পাঠদান করছেন বলে জানান। তাছাড়া রুনা আকতার ও জান্নাতুন নুর নামের ২ জন ভাড়াটিয়া শিক্ষককেও পাওয়া যায়। পশ্চিম ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুসসহ ৪ জনের স্থলে সহকারি শিক্ষক শিল্পী রাণী দাশকে গত ১ ফেব্রæয়ারি বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। রিকু সেন ডিপিএড প্রশিক্ষণে রয়েছেন বলে জানান। উত্তর ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক জামশেদুল করিম ২০০৩ সালে ৪ জুন যোগদান করার পর অদ্যবধি এ বিদ্যালয়ে রয়েছেন। তার সাথে সহকারি শিক্ষক হিসেবে আরো রয়েছেন, আছিয়া বেগম চৌধুরী তাকে বিদ্যালয়ে পাওয়া গেলেও উত্তম কুমার সূত্রধরকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদেকা ও সুমি আকতার জানান, জামশেদুল করিম মাসে ২/১ বার আসলেও উত্তম কুমার সূত্রধরকে শ্রেণিকক্ষে পান না তারা। এ বিদ্যালয়ে কোন ঘন্টা দেয়ার বেল নাই। তাছাড়া ল্যাপ্টপ কম্পিউটারটি জামশেদ নিজের বাসায় নিয়ে যান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল নুর চৌধুরী বলেছেন, ৫ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছে ৩ জন। সহকারি শিক্ষক জামশেদ ও উত্তম মাসে ২/১ বার আসেন। সহকারি শিক্ষক আছিয়া বেগমকে দিয়ে চলছে ১টি বিদ্যালয়ের ৬টি শ্রেণির কার্যক্রম। মংলারমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছসহ ৪ জন শিক্ষক রয়েছে। সেখান থেকে সহকারি শিক্ষক অজিত কান্তি দে প্রশিক্ষণে থাকায় ৩ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ে বিউটি খেয়াং নামে ১ জন ভাড়াটিয়া শিক্ষককে পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর বেগম, রিমু আকতার, রাজু খেয়াং, সুতপা ধর শিক্ষক ইউনুছ, মিনু রাণী নাথ ও ভাড়াটিয়া শিক্ষক বিউটি খেয়াং ছাড়া অন্যান্য শিক্ষকদের চিনেন না বলে জানান। চিড়িংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন রয়েছে। তারা পালা করে ২ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন বলে স্বীকার করেছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি কুতুব উদ্দিন। এ সকল বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেছেন, উল্লেখিত ক্লাস্টারটি সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মুনিরুদ্দিনের। এ সকল বিষয়ে তিনি ভাল বলতে পারবেন। সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মনিরুদ্দিন চিড়িংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, প্রধান শিক্ষক দিদার ও সহকারি শিক্ষক এহসানের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সোহেল পারভেজের বিরুদ্ধে শোকজ করা হয়েছে। শামুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির ডিপিএড প্রশিক্ষণে আছেন।
উত্তর ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জামশেদ ও উত্তমের অনুপস্থিতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানান। তাছাড়া বিদ্যালয়ে বেল (ঘন্টা) না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ল্যাপ্টপ চুরি এড়াতে বিদ্যালয়ে প্রতিদিন আনার শর্তে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে। তবে ল্যাপ্টপ আনেন না বলে তিনি স্বীকার করেছেন। মংলারমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছে ৪ জন। ১ জনকে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। ভাড়াটিয়া শিক্ষক বিউটি খেয়াংসহ অন্যান্য ভাড়াটিয়া শিক্ষক সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
লেখক : প্রাবন্ধিক