‘ঘুম রেখেছো লুকিয়ে বুঝি তোমার চোখের পাতায়’

7

 

‘ভোরে দেখা স্বপ্ন যত/ সব যদি আজ সত্যি হতো/ আকাশ কি আর ঢাকতো মেঘে এমন/ সকালবেলায় রাত্রিবেলা ঘুম রেখেছো কোথায়/ ঘুম রেখেছো লুকিয়ে বুঝি তোমার চোখের পাতায়।’মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে ফেইসবুকে যিনি এমন সাবলীল ভাষায় লিখতে পারেন, তাঁর অনুপস্থিতি এ শহরের শিল্প সংস্কৃতি আন্দোলনের মানুষগুলো অল্প সময়ে ভুলতে পারার কথা নয়। তিনি বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ, কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, নাট্যাভিনেতা, সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী শান্তুনু বিশ্বাস। গত ২৫ অক্টোবর ছিল তার জন্মদিন। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তাঁর সৃষ্টকর্ম নিয়ে আয়োজন ছিল কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়ের। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখর ছিল শান্তনু বন্দনায়। মিলনায়তনে চলছিল মূল অনুষ্ঠান। এখানে ওখানে আড্ডা জমেছে, শান্তনু বিশ্বাসের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীরা আড্ডা দিচ্ছেন। প্রমা অবন্তী তাঁর শীষ্যাদের শেষবারের মতো প্রস্তুত করছেন। আবৃত্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে কেউ। শান্তনু বিশ্বাসের লেখা নাটক, গান, কবিতা আর গানের সাথে নৃত্যের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করেছে কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়, অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গণ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট, রক্তকরবী, ত্রিতরঙ্গ ও ওরিয়েন্টাল ডান্স গ্রুপ। সাথে ছিল চা চক্র। মধ্যষাটে এসে শান্তনু বিশ্বাসের যাত্রাপথ থেমে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারেন না তাঁর প্রিয় মানুষগুলো। তাদের অভিমত, মানুষটি সবসময় হেসে-খেলে একটু উড়ে উড়ে গান করেছেন, কবিতা লিখেছেন, নাটক করেছেন, নাটক লিখেছেন। এমন তীরন্দাজ সহসা দেখা যায় না। তাঁর মন ছিল একেবারে অন্যরকম। ভালোবাসা নিয়ে শান্তনু বিশ্বাসের মন্তব্য ছিল, ভালোবাসা, এই বোধ ও অনুভবের একটা অবাধ উন্মোচন হয়তো থাকে। যৌথ জীবনের শুরুটা একটা অন্তঃশায়ী টান থেকে জন্ম নেয় যেখানে আগুনে বা অসুখে দুজনকে পুড়তে হয় পোড়ার সমুজ্জ্বল আনন্দে।