কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য এধারা অব্যাহত রাখতে হবে

35

 

বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের সফলতার কথা সঙ্গতকারণে সরকার বলে আসলেও সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেছে করোনা ভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথাযথ ছিল। যদিও এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রথম দিকে কিছুটা বিশৃঙ্খলা ও অরাজক অবস্থায় পতিত হয়েছিল, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ ও মনিটরিং-এর ফলে করোনা চিকিৎসাসহ এ মহামারি মোকাবেলায় সরকারের সামগ্রিক পদক্ষেপ সাধারণের মধ্যে আশা জাগিয়েছিল, করোনার চরম আঘাত থেকে বাংলাদেশ অনেকটা নিরাপদে ছিল। এখনও করোনার দ্বিতীয ঢেউ-এ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ আবারও সংকটে পড়লেও বাংলাদেশ সবকিছু স্বাভাবিক রেখেই করোনা মোকাবেলা করে যাচ্ছে, মৃত্যু ও সংক্রমণের হারও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য অবশ্যই সরকারের প্রশংসা করতে হয়।
গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এই মুহূর্তে বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ঘটেছে প্রায় ১৮ লাখ। আক্রান্ত ৮ কোটি ১৭ লাখের বেশি। মৃত্যু ও সংক্রমণের দিকদিয়ে সবচেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এরপর ব্রাজিল ও ভারত। এর সাথে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড়ধরনের ধস নেমেছে করোনার কারণে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিক্ষা সংস্কৃতিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। ইউরোপের অনেক দেশেই দ্বিতীয় বারের মতো লকডাউন চলছে। যুক্তরাজ্যের সাথে প্রায় ৪০টি দেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, আমেরিকা-ইউরোপসহ বিশ্বে অনেক শক্তিধর দেশের অর্থনীতির করুণ চিত্র ততই ফুটে উঠছে। এই কোভিডে ভারতে মোট মৃত্যু প্রায় দেড় লাখ, আক্রান্ত ১ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাড়ে সাত হাজারের কাছাকাছি। আক্রান্ত ৫ লাখ ১০ হাজারের মতো। সম্প্রতি আমেরিকার ডাটাভিত্তিক জনপ্রিয় মিডিয়া ব্লুমবার্গ কর্তৃক করোনা মোকাবেলায় সক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বের দেশগুলির উপর একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপে পাকিস্তান ২৯তম, যুক্তরাজ্য ৩০তম এবং খোদ আমেরিকার অবস্থান ৩৭তম। ভারতের অবস্থান ৩৯তম। এছাড়াও বাংলাদেশের নিচে রয়েছে জার্মানি, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, মিশর, সুইডেন, ইরান, ইরাক, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্তত প্রায় ১৮৫টির মতো দেশ। আর বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকা দেশগুলির মধ্যে ২০তম অবস্থানে ওঠে এসেছে। এর থেকেও বড় সংবাদ হচ্ছে, এই জরিপে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশের উপরে অবস্থান করছে। কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের এত বড় সাফল্যের সংবাদ শুনে বিশ্ববাসী অবাক হয়েছে। আমরা আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সম্প্রতি অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জিডিপির গ্রোথ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থানের কথা জানা গেছে। এছাড়াও করোনাকালেও পদ্মসেতুর মত সর্ববৃহৎ সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের সফলতা বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। সূত্র জানায়, বøুমবার্গ কেবল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থান দেখেই এই র‌্যাংকিং করেনি, বরং প্রতিষ্ঠানটি জরিপ চালিয়েছে অন্তত কোভিডের ১০টি মেট্রিকসের উপর। যেখানে ছিল কোভিডে মৃত্যুহার, কোভিড পরীক্ষা সুবিধাদি, জনবল, স্বাস্থ্যসেবা দানের সক্ষমতা, চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি। এই সকল গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিকস থেকে বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে ২০তম অবস্থান ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম হওয়াটা নিঃসন্দেহে অলৌকিক কোন ঘটনায় হয়নি। জনসংখ্যা, আয়তন বা আর্থিক সক্ষমতা কিংবা জনবল, কারিগরি সুযোগ-সুবিধা যেদিকেই বলি না কেন, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে উল্লিখিত ইউরোপ-আমেরিকায় দেশগুলির নিচে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৪ লাখের মতো। সেই তুলনায় আমেরিকার ৩৩ কোটি, যা বাংলাদেশের থেকে দ্বিগুণের কিছুটা কম। অথচ কোভিড আক্রান্তে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ গুণ বেশি। ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটির মতো, যা বাংলাদেশের থেকে সামান্য বেশি। অথচ করোনায় আক্রান্ত বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ১৫ গুণ বেশি। ইউরোপের প্রায় সব দেশেরই বাংলাদেশের থেকে জনসংখ্যা কম, অথচ আক্রান্তে ও মৃত্যুতে বাংলাদেশ থেকে বহুগুণ বেশি তাদের। যুক্তরাজ্যে জনসংখ্যা মাত্র ৬ কোটি, অথচ কোভিডে আক্রান্ত ২৩ লাখ। জনসংখ্যায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অর্ধেকেরও অনেক কম। অথচ বাংলাদেশ থেকে করোনায় মৃত্যুতে ১০ গুণেরও বেশি। ফ্রান্সে জনসংখ্যা সাড়ে ৬ কোটি। কোভিডে আক্রান্ত সাড়ে ২৫ লাখ, যা বাংলাদেশ থেকে ৫ গুণ বেশি, আর মৃত্যুতে ৯ গুণ বেশি। অথচ এই দেশগুলির সক্ষমতা বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ থেকে বহুগুণ বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জনসংখ্যা ১৩৮ কোটি, যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭ গুণ বেশি। ভারতে করোনায় মোট আক্রান্ত ১ কোটিরও বেশি, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের। ভারতের সাথে আমাদের আবহাওয়াগত মিল থেকে শুরু করে সব দিকেই মিল রয়েছে। অথচ ভারতে মৃত্যু বাংলাদেশের থেকে ২৯ গুণ বেশি। এ অবস্থায়ও সরকারের বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে একাগ্রতা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্সে এই কোভিড মহামারির সময়ে অতি আশ্চর্যজনকভাবে সর্বোচ্চ এসেছে। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এই দেশে কোভিডের মতো এত বড় বিপর্যয় সামলানো মোটেও সহজ কাজ ছিল না। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের চিকিৎসাখাত ও দেশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োপযোগী ছিল বলেই এ সংকটকে সহনীয় পর্যায়ে রেখে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। আগামীতেও সরকার তাদের দূরদর্শী ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেবে-এ প্রত্যাশা আমাদের। দেশের স্বীকৃতির জন্য অভিনন্দন জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।