একের পর এক বিস্ফোরণে উদ্বিগ্ন দেশবাসী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিন

17

চট্টগ্রামে সীতাকুÐের কদমরসুল এলাকার কেশবপুরের একটি বেসরকারি অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের রেশ কাটতে না কাটতেই গত রবিবার রাজধানী ঢাকায় সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি তিনতলা ভবনে বিস্ফোরণ এর মাত্র একদিন পর পুরনো ঢাকার ছিদ্দিক বাজার এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশের মানুষ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। চট্টগ্রামের ঘটনায় ৭জন, সায়েন্স ল্যাবরেটরির ঘটনায় ৪জন এবং এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ছিদ্দিক বাজারের ঘটনায় ২০জনের মৃত্যুর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। উপরোক্ত তিনটি ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুÐের ঘটনার বিষয়ে স্পষ্ট জানা গেলেও ঢাকার একদিনের ব্যবধানে দুটি ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, ঘটনার পর সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও সেনাবাহিনীর একটি দল। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর সবারই অভিমত হচ্ছে-এদুটি ঘটনার সাথে নাশকতার কোন সম্পর্ক নেই। গ্যাসলাইন কিংবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে প্রথমে আগুন পরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একইভাবে পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে-বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, জমে থাকা গ্যাস, গ্যাস সিলিন্ডার লিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র-এই চারটির মধ্যে কোনো একটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এসব ঘটনার জন্য তাৎক্ষণিক কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও তদন্ত শেষে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে, তবে ভবনে থাকা ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় সবাই অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন যে, জমে থাকা গ্যাস থেকেই মূলত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। জানা যায়, রাজধানীর দুটিই বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ভবনের উপরতলা থেকে কংক্রিটের টুকরো, ফার্নিচার, দরজা, শাটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাস্তায় ছিটকে পড়ে। এঘটনায় অনেক পথচারী, দোকানের কর্মচারি, মালিক কিংবা ঘরের লোকজন মারাত্মক আহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিক উদঘাটন করা না গেলেও এমন বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য ভবনের দুর্বল অবকাঠামোকে দায়ী করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সিটি করপোরেশন অবশ্য এরই মধ্যে ভবনদুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে বারবার বিভিন্নভবন কিংবা শিল্প-কারখানায় এজাতীয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও সচেতনতা, সাবধানতা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো , ভবন মালিক ও ব্যবহারকারী হিসাবে আমরা যেমন সচেতন নই, তেমনই নজরদারির ক্ষেত্রেও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বস্তুত উপরোক্ত কারণেই দুর্ঘটনার হার ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিবছর দেশে অন্তত ৯ লাখ গ্যাস ও বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ঘটছে। এরপরও সুরক্ষা নিশ্চিতে যতœবান হচ্ছেন না কেউ। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরনের দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সাধারণত তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা প্রভৃতির আয়োজন করে কিছুদিন বেশ সরব ভূমিকা পালন করে, পরে বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধরে নেওয়া যায়, এক্ষেত্রেও এর অন্যথা হবে না। উন্নত বিশ্বে কোনো দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে আধুনিক প্রযুক্তি, জনবল, অর্থবল প্রভৃতির কল্যাণে খুব সহজেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। আমাদের না আছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, না আছে জনবল ও অর্থের জোর। তাছাড়া রাজধানীর সরু রাস্তাসহ অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে উদ্ধার বা সহায়তাকারী দলের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতেও বেশ বেগ পেতে হয়। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যেকোনো দুর্ঘটনা জীবন ও সম্পদবিনাশী। দেশে প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ ও কার্যকর ব্যবস্থা, উদ্ধার প্রক্রিয়া যতটুকু থাকা দরকার, এর প্রায় কিছুই নেই। এ ব্যাপারে সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে-এমনটিই প্রত্যাশা।