আমাদের পাখি এবং পাখি দেখা

0
আমাদের পাখি এবং পাখি দেখা

মুশফিক হোসাইন

পৃথিবীর সকল জীবনকে প্রথমে দুটিভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার একটি উদ্ভিদ জগত অন্যটি প্রাণিজগত। আজ প্রাণিজগতের একটি প্রজাতি পাখি নিয়ে আলোকপাত করা যাক। পালকযুক্ত সকল প্রাণিই হচ্ছে পাখি গোষ্ঠির অন্তর্গত। পালক না থাকলে সে পাখি গোষ্ঠির শ্রেণিভুক্ত হবে না। পাখিদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো উড়তে পারা। তবে তার ক্ষুদ্র একটি ব্যতিক্রম দেখা যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা চলে, আফ্রিকা মহাদেশের উটপাখি, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের ক্যাসোয়ারী, ইমু, কিউই এবং দক্ষিণ আমেরিকার রিয়া। এসব পালকযুক্ত পাখি উড়তে পারে না, তবে প্রচÐ গতিতে তারা দৌড়াতে পারে। এদের পালক আছে তবে উড়ন্ত পাখিদের চেয়ে ভিন্নতর। বাংলাদেশে নানা ধরনের সুন্দর পাখি যেমন আছে তেমনি কুৎসিত পাখিও দেখা যায়। পাখিদের কেউ বড় আবার কেউ বুড়ো আঙ্গুলের মতো ছোট আকৃতির। সকলকে সব সময় দেখা যায় না। এদের প্রায় সকলেই ডাকাডাকি করে। তবে সকলে গান করে না। যারা গান করে তাদের গায়ক পাখি বলা হয়। আবার যারা ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ রক্ষা করে তাদের ঝাড়ুদার পাখি বলা হয়। যেমন কাক ঝাড়ুদার পাখি।
আধুনিক বিশ্বে জ্ঞান প্রযুক্তি উৎকর্ষতার কারণে পাখি দেখা একটি শখ। আবার চলারর সময় পথে, ঘাটে, বনে অনেক পাখি বাস করে। এদের কাউকে দেখা যায় আবার অনেকে পাতার আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। সচরাচর পাখি দেখা যার বিশেষ কৌতুহল নিয়ে পাখি দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের আশেপাশে যে সকল পাখি দেখা যায়, তারা হলো দোয়েল, ফিঙ্গে, টুনটুনি, বুলবুলি, শালিক, কাক, চিল ইত্যাদি। এ সকল পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। গভীর বনের পাখি আড়ালেই থেকে যায়। আবার জলজ এলাকায় কিছু পাখির দেখা মেলে। ডাহুক পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, বক অন্যতম। এজন্য পাখি দেখতে হলে বনবাদাড়ে যেতে হয়। আত্মরক্ষার কারণে পাখি খুব চালাক হয়ে থাকে। মানুষ বা শিকারি প্রাণি দেখলে কিংবা শব্দ শুনলেই এরা পালাতে চায়। তাই সামান্য পাতার নড়াচড়া দেখলে ওরা সতর্ক হয়ে যায়। তবে এ কথা ঠিক যে অধিকাংশ পাখি মানুষ দেখলে ভয় পায়। আবার কেউ কেউ মোটেই ভয় পায় না। আমাদের দেশে সাধারণ যে সকল পাখি দেখা মেলে আমরা আবাসিক পাখি বলতে পারি। আবার অনেকে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বাস করে না, তাদের পর্যটক বা পরিযায়ী পাখি বলে। এরা উত্তরের শীতে আমাদের এখানে আসে আর গ্রীষ্মে চলে যায়। তবে এরা আমাদের পরিবেশে বাসা বানায় ডিম, পাড়ে ও ছানা তোলে। শীত থেকে বাঁচার জন্য হাজার হাজার মাইল উড়ে আসে। এরা দলবেঁধে থাকে এবং খাদ্যের সন্ধানে থাকে। আমাদের দেশে জলাশয় ও হাওর বাঁওড় কমে যাওয়ায় এদের উড়ে আসার হার কমে যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত এদের শিকার করে রসনা তৃপ্ত করে থাকে। এ ভারি অন্যায় কাজ।
পাখিদের যেমন বিচিত্র রঙ আছে তেমনি আছে গান গাওয়ার বিচিত্রি ভঙ্গি। মিষ্টি গলার কারণে আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এরা স্থান করে নিয়েছে। পাখিদের অনেকের বাসা খুব সুন্দর ও কারুকার্যময়। যেমন: বাবুই, মৌটুসি, শ্যামা ইত্যাদি। আবার অনেকের বাসা এবড়ো থেবড়ো। যেমন কাক, ভাত শালিক, চিল ইত্যাদি। আবার অনেক পাখি আছে যারা অন্যের বাসা দখল করে অথবা চুরি করে ছানা তোলে। আবার অনেকে বাগানের একটি কোণে বাসা বেঁধে জীবন কাটিয়ে দেয়। যেমন : টুনটুনি, চঁড়–ই। পাখিদের নামে আছে বিচিত্রতা এবং ভারি সুন্দর। যেমন সহেলি, কমলা বউ, হলদে বউ, ভরত, মুনিয়া, পাপিয়া, খঞ্জনা, প্রিনা, বসন্ত বাউরি, নীলকণ্ঠ, দুধরাজ, শ্যামা, টুনটুনি, মৌটুসী, ফিঙ্গে, ঘুঘু। তেমনি পাখিদের ডিমেও আছে নানা বৈচিত্রতা। বিভিন্ন ধরনের পাখিদের আছে বিবিধ ধরনের আচার-আচরণ। একটি পাখি কেমন করে ডাকে নাচে, গান গায়, কখন গান গাইতে ভালোবাসে, কী কৌশলে বাসা বাঁধে, ¯œান করে, কয়টা ডিম দে, বাসা বানায়, ডিমের রঙ, ছানাদের কিভাবে খাওয়ায়Ñতা দেখা বা পর্যবেক্ষণের মধ্য আছে অনাবিল আনন্দ। পাখিদের কাছ থেকে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। পাখি দেখাকে আধুনিক বিজ্ঞানে বা পক্ষী বিজ্ঞানে বার্ড সিইয়িং বা পাখি দেখা বলে অভিহিত করা হয়েছে। পাখি দেখা মানুষের চোখ, মনকে শুধু তৃপ্তি দেয় না, ওদের সৌন্দর্য ও গান মানুষকে মুগ্ধ করে। মানসিক প্রশান্তি দেয়। পাখি পোকামাকড়, কীট পতঙ্গ, ইঁদুর, সাপ খেয়ে কৃষক তথা মানুষের উপকার করে থাকে। এই উপকারী প্রাণিটিকে জানা প্রয়োজন।

লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)