আজীবন পেনশনের জন্য জীবন বীমার পলিসি

17

আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালু হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে তা ঐচ্ছিক হিসেবেই চালু করা হবে। পুরোদমে এবং বাধ্যতামূলক হিসেবে এ পেনশন-ব্যবস্থা কবে চালু হবে, তা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। আজীবন পেনশনের জন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশনের অধীনে বর্তমানে একটি পলিসি চালু রয়েছে। এর নাম ‘ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি’। এ পলিসি থেকে একই সঙ্গে বিমাসুবিধা ও আজীবন পেনশন পাওয়া যায়। দেশের যেকোনো পেশার মানুষই এই বিমা পলিসি করতে পারেন।
জীবন বীমা করপোরেশন বলছে, ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এতে গ্রাহকের অকালমৃত্যুতে পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা রয়েছে, যা অন্য কোনো সঞ্চয় পলিসিতে নেই। নিয়মটা হচ্ছে, পেনশন বিমা পলিসির টাকা দেওয়া শুরুর ১০ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় বিমাগ্রহীতা মারা গেলে ১০ বছরের বাকি সময়ের জন্য পেনশনভোগীর নমিনি (মনোনীতক) পেনশন পাবেন। পেনশন দেওয়া শুরুর নির্ধারিত তারিখের আগে বিমাগ্রহীতার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে নমিনি চাইলে এককালীন অর্থও নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। প্রথম বিকল্পটি হচ্ছে, প্রথম বছরের প্রিমিয়াম বাদে অন্য প্রিমিয়ামের ওপর ৭ শতাংশ মুনাফাসহ টাকা পাওয়া। অন্য বিকল্প হচ্ছে, কোনো একটি বার্ষিক প্রিমিয়ামের ১৫ গুণ অর্থ। গ্রাহকের জন্য যেটি বেশি লাভজনক, সেটিই তিনি গ্রহণ করবেন।
এ পলিসির সঙ্গে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুবিমারও একটি সহপলিসি রয়েছে। পলিসি চালু থাকা অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুবিমার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অথবা দুর্ঘটনার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে বিমাগ্রহীতা মারা গেলে বার্ষিক প্রিমিয়ামের ৩০ গুণ অর্থ পাবেন নমিনি। মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনের টাকার ৫০ শতাংশ অথবা শতভাগ এককালীন তুলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিমাপত্রের অনুকূলে বিমাগ্রাহক চাইলে ঋণও নিতে পারবেন। জীবনবিমার অন্য পলিসির মতো পেনশন বিমার টাকাও আয়করমুক্ত। প্রিমিয়ামের টাকার ওপরও আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়।
বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিয়েছে জীবন বীমা করপোরেশন। ৩৫ বছর বয়স্ক একজন ৫৭ বছর বয়স পূর্তির পর থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা পেনশনের জন্য একটি পেনশন বিমা পলিসি গ্রহণ করেন। তাঁর এক বছরের প্রিমিয়াম হবে ৯ হাজার ২১০ টাকা। ৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত ২২ বছরে মোট জমা হবে ২ লাখ ২ হাজার ৬২০ টাকা। এ পলিসির আওতায় প্রিমিয়াম দেওয়া যাবে তিন মাস পর পর অথবা বার্ষিক ভিত্তিতে।
২২ বছর ধরে ২ লাখ ২ হাজার ৬২০ টাকা জমা দেওয়ার বিনিময়ে গ্রাহক এককালীন ছয় লাখ টাকা পেনশন তুলে নিতে পারবেন। অথবা মাসে মাসে ৫ হাজার টাকা করে তত দিন পর্যন্ত পেনশন ভোগ করতে পারবেন, যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে এ টাকা জমা হয়ে যাবে। চাইলে অর্ধেক টাকা এককালীন তুলে নিয়েও পেনশন ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আজীবন পেনশনের পরিমাণ হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশবলে দেশের বিমাশিল্পকে জাতীয়করণ করা হয়। জীবনবিমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ৩৭টি কোম্পানির সম্পদ ও দায়দেনা নিয়ে প্রথমে সুরমা ও রূপসা নামে দুটি করপোরেশন করা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জীবন বীমা করপোরেশন। ২০২১ সালের শেষে করপোরেশনের জীবন তহবিলের পরিমাণ ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। দেশে করপোরেশনটির ৮টি আঞ্চলিক, ১২টি করপোরেট, ৮১টি বিক্রয় ও ৪৫৬টি শাখা কার্যালয় রয়েছে। জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পেনশন বিমা পলিসির আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। এই পলিসির আওতায় চাকরিজীবীরা মাসে ২০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ীরা মাসে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে পারেন।’