শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে

206

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১১ নং চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নে একটি মাত্র উচ্চ বিদ্যালয় রযেছে। জনবহুল ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ার পর এখানে গড়ে উঠেনি লেখা পাড়র জন্য একাধিক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। ৬৪ জেলার মানুষ এখানে বসবাস করলেও সুবিধা বঞ্চিতদের মানুষের ছেলে মেয়েদের জন্য মার্ধ্যমিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এলাকার শত শত ছেলে মেয়েদের মার্ধ্যমিক শিক্ষার জন্য এলাকা ছেড়ে দূরে যেতে হয়।
রাঙ্গুনিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা হওয়ার পর ও স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর চন্দ্রঘোনায় উচ্চ শিক্ষার জন্য হাই স্কুল কিংবা কলেজ গড়ে উঠেনি। এক সময় চন্দ্রঘোনাকে উপশহর বলে খ্যাতি ছিল। চট্টগ্রাম শহরের পর চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার ছিল উত্তর চট্টগ্রাম বাসীর জন্য নোয়া শহর হিসেবে যথেষ্ট ডাক নাম ছিল। কালের আবর্তে এখন চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান ও দোভাষী বাজার চট্টগ্রাম শহরের পর অবস্থান। সব কিছু বিস্তার ঘটলেও শিক্ষার জন্য তেমন কিছু গড়ে উঠেনি। লক্ষাধীক মানুষের বসবাসে একটি মাত্র মার্ধ্যমিক স্কুল। এতে করেশিক্ষায় পিছিয়ে ছিল বছরের পর বছর। এরিই মাঝে কিছু স্বপ্ন বাজ শিক্ষা নুরাগী মিলে ১৯৯৮ সালে মরহুম হাজী আব্দুল জলিল কন্ট্রাক্টরের জায়গায় লিচুবাগানে গড়ে তুলে চন্দ্রঘোনা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুল। এখানেই প্রথম কেজি এন্ড হাই স্কুল। কেমন হবে শিক্ষা অগ্রসর ক্ষেত্রে কেমন ভ‚মিকা রাখবে। এলাকার অভিভাবকের মাঝে কেমন সাড়া পড়বে। সব মিলিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর এলাকায় অভূতপূর্ব সাড়া। এলাকার মাঝে কেজি স্কুল বুঝাতে ও এলাকার মানুষের সাথে কেজি স্কুলের ধারনা দিতে বেশী দিন সময় লাগেনি। প্রতিষ্ঠার ১ম বছরেই বাজিমাত। শুরু থেকে স্কুলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্য আসনের চেয়ে দ্বিগুন। এখনও ৭ শত ছাত্র ছাত্রী নিয়ে স্কুলে শিক্ষা কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অভিজ্ঞ ২৮ জন শিক্ষক শিক্ষিকা দিয়ে স্কুলে শিক্ষা কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একদল মেধাবী শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিঞ্জ পরিচালক মÐলী নিয়ে রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুলের পথ চলা। এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করেছে দ্রæত। এলাকায় শিক্ষা বান্ধব ও সময় উপযোগি স্কুল হিসেবে মানুষের এবং ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি ছিল এ স্কুলের দিকে। এ স্কুল থেকে লেখা পড়া করে ডাক্তার শিক্ষক ইঞ্জিনিয়ারসহ সমাজের উচু স্থানে বিরাজ করছে এ স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা। নান্দনিক এবং মেধা নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি নি¤œ মার্ধ্যমিক থেকে মার্ধ্যমিক স্তরেউন্নিত করা হয়।
উপজেলায় পিএসসিতে পর পর ৪ বছর প্রথম স্থান অধিকার ও শতভাগ উত্তীর্ণ। জেএসসিতে শতভাগ পাস হওয়ার গৌরভ এখনও ধওে রেখেছে। ২০১৬ সালে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান থেকে বনগ্রাম কুষ্ট হাসপাতালের সামনে নিজস্ব ভূমিতে ৪ তলা ভবনে স্থায়ীভাবে স্কুলটির শিক্ষা কার্য্যক্রম চালিয়ে আসছে।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন মেধা নির্ভর শিক্ষক শিক্ষিকা দিয়ে স্কুলটির প্রতিষ্ঠার পর যে সুনাম অর্জন করেছে প্রতিনিয়ত সুনামের ঝুলি দিন দিন পরিপূর্ণ হয়ে এলাকায় এ স্কুলের বিকল্প এখনও কেউ ধাওে কাছে নেই। যদিও বা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুলের দেখাদেখিতে এখানে এথন আরো ৫টি কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা হযেছে। ভবিষ্যতে স্কুলটিকে কলেজে উন্নিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সুপরিসর পরিচালক মÐলীর।
স্কুলটির বিশেষত্ব : অভিজ্ঞ ও নিবেদিত শিক্ষক-শিক্ষকামÐলী দ্বারা পাঠদান, পিছিয়ে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা,ক্লাস মনিটরিং সেল গঠনের মার্ধমেআন্তরিক নিবিড় পরিচর্যা, ভচওে ৩টি ক্লাস টেস্ট,২টি মার্ধ্যমিক পরিক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরের উপর চ‚ড়ান্ত ফলাফল, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য পরিচালক মÐলী, আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব,সুপরিসর বিজ্ঞাানাগার, বিনোদনমূলকসহ শিক্ষা কার্যক্রম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, স্পোকেন ইংলিশবিষয়ে পাঠদানের সুবিধা।
চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর জানান, চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম এলাকার ছেলে মেয়েরা এক সময ২ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রঘোনা আদর্শ বহু মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপাড়ার জন্য যেতে হতো। ওই সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খারাপ। এলাকার অনেক ছেলে মেয়ে সেই সময়ে স্কুল দূরে হওয়ার কারণে লেখাপড়া করা থেকে বঞ্চিত ছিল।
সুবিধ বঞ্চিত এলাকার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রথম বারের মত ১৯৯৮ সালে মরহুম হাজী আব্দুল জলিল কন্ট্রাক্টরের জায়গায় লিচুবাগানে গড়ে তুলে চন্দ্রঘোনা রাইজিং সান কেজি এন্ড হাই স্কুল। কেজি স্কুল তখন চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে ছিলনা। শিক্ষা বান্ধব কিছু স্বপ্নবাজ লোকেরা মিলে নান্দনিক পরিবেশে কেজি স্কুলের মেধা নির্ভর শিক্ষা এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। প্রতি বছর জেএসসি এবং পিএসসিতে পাশের হার শতভাগ। এ ধারবাহিকতা এ স্কুলে অব্যাহত রেখেছ্।ে প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পরও স্কুলের শিক্ষা কার্য্যক্রমের সুনাম সমগ্র উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমি এ স্কুলের আরো উন্নতি কামনা করি।
শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমন্বয়ে এখানে পাঠদান করায় আধুনিক শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে এলাকায় অভিভাবকদের স্বীকৃতি পেয়েছে অনেক আগেই। রাঙ্গুনিয়ার বাণিজ্যিক এলাকা চন্দ্রঘোনা লিচুবাগানের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বনগ্রাম কুষ্ট হাসপাতালের সামনে ২০১৭ সালে পুরাতন ক্যাম্পাস ছেড়ে ৪র্থ তলা বিশিষ্টি নান্দনিক ভবনে শিক্ষা কায্যৃক্রম নব উদ্যামে শুরু করে। এ স্কুল ঘিরে অনেক পরিকল্পনা ও উপজেলার শিক্ষার শ্রেষ্ঠ বাতিঘর হিসেবে অনেক দুর নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পরিচালক ডাক্তার তাপস সাহা।
বিদ্যালয়ের অফিস প্রধান গৌরপদ দাশ জানান,বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৬শত শিক্ষাথীকের্ নিয়মিত শিক্ষা কার্য়ক্রম অব্যাহত রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম শিক্ষকের নিবীড় পরিচর্যায় শ্রেণিতেই আদায় করা হয়। ফলে বাড়ির কাজের বাড়তি চাপমুক্ত থাকে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে গতানুগতিক কয়েকতলা ভবনে শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ কেন্দ্রিক কেজি শিক্ষার বাইরে গিয়ে বিদ্যালয়টি যুগউপয্গোী শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার মনোরম পরিবেশে শিক্ষার পর্যাপ্ত উপকরণ, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, প্রজেক্টরে ¯øাইড-শো দিয়ে পাঠকে আনন্দদায়ক করার ব্যবস্থা সহ শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বিদ্যালয়টিতে বিদ্যমান রয়েছে।
এছাড়াও খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ, বার্ষিক শিক্ষা সফর, উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। বিদ্যালয়ের্র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন আকতার, তানজু আকতার, উম্মে হাবিবা, অন্তিকা চৌধুরী, অনিকা আজিজ বলেন, স্কুল মাঠের সংকঠ ছাড়া স্কুলের শিক্ষা কার্য্যক্রম সময় উপযোগি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের আন্তরিকভাবে পাঠদান করে।’
বিদ্যালয়ের অভিভাবক মোহাম্মদ নজরুল, মাসুদ, মোহাম্মদ এনাম, মো.তছলিম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আবদুল আজিজ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অত্যান্ত সন্তোষজনক। এখানে শিক্ষাকার্যক্রম আনন্দদায়ক ভাবে প্রদান করায় শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হয়। অন্যদিকে শ্রেণির কাজ শ্রেণিতেই আদায় করার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাপমুক্ত থাকে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন দাশ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর স্কুলটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া যুগিয়েছে। স্কুলের দক্ষ শিক্ষকরা পাঠপরিকল্পনা করে শ্রেণিতে পাঠদান করে।
সকলের সার্বিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি এগিয়ে যাচ্ছে। এই বিদ্যালয়কে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে বিদ্যালয়টি আরো সম্প্রসারণ করে আধুনিক শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করব।’
স্কুলের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ডাক্তার বিকে দেওয়ানজি জানান, আমরা সব সময় স্কুলে সেরা শিক্ষা দেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেধা নির্ভরযাতে ছাত্র ছাত্রীরা জ্ঞান লাভ করতে পারে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকে। এলাকায় মান স্মমত প্রতিষ্ঠান করতে আমরা সব কিছু করে যাচ্ছি। আমাদেও অনেক স্বপ্ন আছে এ স্কুল ঘিরে। এলাকার মানুষ সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে স্কুলকে কলেজ রুপে পরিণত করব।
স্কুলের পরিচালকমÐলী : ডাক্তার বিপ্লব কুমার দেওয়ানজী, ডাক্তার তাপস কুমার সাহা, বাবু তোষন কান্তি সিংহ, আমজাদ হোসেন, শিবু প্রসাদ সিংহ, আবু জাফর, প্রফেসর বিপ্লব কুমার দত্ত, প্রফেসর সুলতানা রাজিয়া, সরণ ভট্রাচার্য্য, ডাক্তার শহীদুল আনোয়ার চৌধুরী, ডাক্তার মো. জাহাঙ্গীর আলম, ডাক্তার তাপস সাহা, কল্লোল কৃষ্ণ দাশ, প্রফেসর বিশ^জিৎ চৌধুরী, প্রফেসর ডাক্তার কনক কুমার বড়–য়া, ডাক্তার রনজিত কুমার চাকমা, ডাক্তার নারায়ন চন্দ্র দাশ, রাজীব দাশ, বিপ্লব দাশ।
উপজেলা মার্ধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এলাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যান্যটির চেয়ে ব্যাতিক্রম। চন্দ্রঘোনায় এরা প্রথম কেজি স্কুল চালু করে। এদের দেখাদেখিতে লিচুবাগানে এখন ৬ট কেজি স্কুল রয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক শিক্ষার বাতিঘরে পরিণত হয়েছে।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন জানান, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ভাল শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান উপজেলায় কেজি স্কুল গুলোর মধ্যে মেধানির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক আগে স্কীতি অর্জন করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
লেখক : সাংবাদিক