‘গলি বয়’ আবার

142

‘গলি বয়’ নামে খ্যাতি পাওয়া ‘রানা’ মৃধার দ্বিতীয় গানও তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে। ইউটিউবে মুক্তি দেওয়ার দুই দিনের মাথায় গানটি দেখেছে প্রায় সাড়ে সতের লাখ মানুষ। আবার আলোচনার তুঙ্গে ‘গলি বয়’ কামরাঙ্গীরচরের পথশিশু ‘রানা’। প্রথমটির মতো গলি বয়-২ গানটির কথাতেও তুলে ধরা হয়েছে রানার কষ্টভরা জীবনের চিত্র। পাশাপাশি ফুটে উঠেছে দেশের বাকি পথ শিশুদের কথাও। গানটির একটি অংশে বলা হয়েছে, ‘আমি রানা, আমার সবটা জানা, আমার মতো আছে হাজার রানা। এক গান গেয়ে আজ আমি ভাইরাল। বাকি রানাদের বলো কী হবে কাল?’ বাকি রানাদের কী হবে? এমন প্রশ্নই বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে গানটির মধ্যে। আর গানের এই কথাটিই শ্রতাদের মর্মাহত করেছে।
রানার মতো হাজারো শিশু চরম দুর্দশায় বসবাস করে এই শহরে। যারা পথশিশু হিসেবে পরিচিত। রাজধানীর বিভিন্ন গলিতে এদের দেখা যায়। দর্শনীয় স্থানগুলোতে আনাগোনা আরো বেশি। এরা পেটের দায়ে হাত পাতে, ছোটখাটো নানা কাজ করে। বড়দের লাঞ্ছনা, গঞ্জনার শিকার হয়। কারো পরিবার আছে, কারো নেই। কারো বাবা আছে মা নেই, কারো মা আছে বাবা নেই। তাদের বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবই অনিশ্চিত। তাদের এই ভবিষ্যতের ভাবনাই তুলে ধরা হয়েছে ‘গলি বয়-২’ গানটিতে। গানটির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ‘শিক্ষা বিক্রি হয়ে গিয়েছে’ বলেও উল্লেখ করে বলা হয়েছে নয়, শিক্ষার্থীরা এখন স্কুলে যায় চাকরি পাওয়ার আশায়।
গানটির কথা, রেকর্ড ও কম্পোজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাসান তবীব। গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের সামনে প্রথমবার রানাকে দেখেন তিনি। অভাবের সংসারে রানার আহার জোটত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে আসত দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। সারাদিন ঘুরে ফিরে এর ওর কাছে হাত পেতে আহার জুটত। কখনো না খেয়েও থাকতে হয়।
তাবীব রানার জীবন চিত্র নিয়ে একটি গান লেখেন। যার নাম দেয়া হয়, ‘ঢাকাইয়া গলি বয়’। ২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের গানটি রেকর্ড এবং প্রকাশিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গানের কথা এবং রানার প্রতিভা খুব সহজেই সকলের নজর কাড়ে। প্রথম গানটিতে রানার জীবনের সংকট, অভাব, নানা অপ্রাপ্তি, অপূর্ণ ইচ্ছার কথা তুলে ধরা হয়। আর গানের মধ্য দিয়েই ঘুরতে শুরু করে রানা মৃধার জীবনের চাকা। বহু জন তার শিক্ষা, খাদ্যের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে খাবারের জন্য আর হাত পাততে হয় না। আগামী বছর স্কুলেও ভর্তি হবে সে। তার পুরো বিষয়টা দেখভাল করছেন মাহমুদ হাসান তবীব।