গন্ডামারাবাসীর আবাসিক সমস্যা

54

মাটি, বায়ু, পানি এবং মানব সম্পদ হচ্ছে স্রষ্ঠার অফুরন্ত নেয়ামত এবং যেকোন দেশের একটি শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ চার সম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহারের উপর নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ আর্থসামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি। কিন্তু প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি উপকূলীয় অঞ্চলের উপর পড়ায় উপকূলী অঞ্চলে নির্মিত ঘরবাড়ি প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা কিংবা দুর্যোগ সামাল দিতে পারেনা। ফলে প্রতি বছর এসব এলাকায় ঘরবাড়ি হারায় অসংখ্য মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে অবস্থান নেয় শহরে কিংবা নিরাপদ স্থানে। এভাবে উপক‚লীয় অঞ্চলে ক্রমশ গৃহহীনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ঘরবাড়ি মানুষের নিত্য ব্যবহার্য বলে এটি মানুষের প্রধান মৌলিক অধিকার এবং মানবসুখ ও শান্তির জন্য দরকার একটি সুন্দর মানসম্মত বাসস্থান।
সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানুষ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে রক্ষা ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আবাসন তৈরি করে। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের বসবাসরত লোকজনের সাধ থাকলেও নির্মাণযোগ্য জায়গার অভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারেনা। বর্তমান সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত স্বল্প ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজনের জন্য বাসস্থানের বিভিন্ন প্রকল্পবাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হল স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসন প্রকল্প নির্মাণ (পিংক সিটি)। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বিভাগ, চট্টগ্রাম ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকেন। বর্তমান সরকার মিরসরাই ও রাউজান উপজেলাসহ চট্টগ্রাম উত্তর অঞ্চলে পর পর ৫টি আবাসন প্লট নির্মাণ করেন। প্রত্যাশি সংস্থা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ পক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবিত ও সমুদ্র ভাঙ্গণ এলাকা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা হলেও স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসন প্রকল্প নির্মাণ প্রকল্পে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অধিবাসীগণ বঞ্চিত হয়েছে।
মুলত সরকারের কাছ থেকে তদবির ও দাবি আদয়ের জন্য সুদক্ষ অভিবাবক না পাওয়ায় এ অঞ্চলের অধিবাসীগণ বঞ্চিত হন। বর্তমান সরকার সাংসাদ সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদ এমপিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগণ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবাসন প্লট নির্মাণের দাবি আদায় করতে পারেন। জনসংখ্যার চাপের কারনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমির দাম দিনদিন উচ্চহারে বৃদ্ধির কারণে শহরে এক খন্ড জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। শহর এলাকায় যাদের জমি ক্রয় করার সামর্থ নেই তারাই উপজেলা শহরে আবাসান করার চেষ্টা করে করে। শহরের ন্যায় উন্নত জীবন যাপনে প্রত্যাশি উকুলীয় অঞ্চলে বসাবসকারী জনগণের বর্তমান চাহিদা উপজেলা শহরে বাড়ি নির্মাণ করা কারন সেখানে থাকে উন্নত রাস্তা, গ্যাস ও পানীয় জলের ব্যবস্থা, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ, চিকিৎসা ও সরকারি সুবিধা। বৃহৎ জনসংখ্যা নির্ভর ছোট্ট এদেশকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলার জন্য উপশহরভিত্তিক আবাসন নির্মাণ সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ়পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। সরকারের বিশাল এ মহতি উদ্যোগ দেশবাসী আন্তরিকভাবে গ্রহণ করছে তাতে সন্দেহ করার অবকাশ নেই।
চট্টগ্রাম জেলায় মহানগর/ পৌর এলাকাভুক্ত এলাকায় অকৃষি জমি রয়েছে। এসব জমিতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য আবাসন প্লট নির্মাণ করার লক্ষ্যে সম্ভব্যতা যাচাই করা যায়। সকল স্তরের নাগরিককে দিয়ে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিত নগরায়ন সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পরিকল্পিত নগরায়ন গৃষ্টি হলে গ্রামীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নও সম্ভব হবে এবং বাঁচবে কৃষি জমি। তাই কৃষি জমি বাঁচানো / সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে শহরের মতো উপজেলা ভিত্তিক আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো জাতীয় গৃহায়ণ কর্তপক্ষ/ উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উপজেলাভিত্তিক পিংক সিটি নির্মাণ করা যেতে পারে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়ন এখন শিল্প নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় কালের প্রয়োজনে পুরো পশ্চিম শাখালীতে প্রভাব পড়েছে শিল্পায়নে। সরকারি-বেসরকারিভাবে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এসএস পাওয়ার প্লান্ট গন্ডামারায় নির্মিত হচ্ছে। জানা যায়, চায়না সেবকো এইচটিজি এবং এস আলম গ্রæপের যৌথ উদ্যোগে এ বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। গন্ডামারা ইউনিয়নবাসী এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের ভূমি বিক্রিসহ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এ প্রকল্প নির্মিত হলে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ এগিয়ে যাবে। বিদ্যুতায়ন ও শিল্পায়নের সঙ্গে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হবে। মানুষের চাহিদা, আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা বৃদ্ধি পাবে। কৃষিকাজে যেসব মানুষ যুক্ত ছিলো তারা যুক্ত হবে অ-কৃষি কাজে এবং কর্মসংস্থান ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসবে। শিল্পায়নের ফলে এলাকাবাসী হবে এক ধরনের নগরবাসী। তাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে, বাড়বে ক্রয়ক্ষমতা, চাহিদার। সে সাথে কিছু মানুষ হারাবে তাদের বসতবাড়ি। কোনা ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে বসতবাড়ি হারানো মানুষেরা অপরিকল্পিতভাবে আবাসন তৈরি করতে পারেন। তাই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চলমান আবাসন প্লট নির্মাণ প্রকল্পের একটি প্রকল্প গন্ডামারা ইউনিয়নের বসতবাড়ি হারানো মানুষের জন্য বাঁশখালীতে নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি ।
লেখক : কলামিস্ট