স্বাগতিক হওয়ার সুবিধাটা কাজে লাগাতে পারেনি চট্টগ্রাম জেলা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম খেলায় হোমগ্রাউন্ডে বান্দরবান জেলার সাথে ড্র করে মূল্যবান পয়েন্ট হারিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা।
গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ প্রকৌশলী শামসুজ্জামান স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নশিপের হোম পর্বের খেলায় শুরু থেকে প্রাধান্য বিস্তার করে খেললেও দক্ষ স্কোরারের অভাব আর দুর্বল ফিনিশিং এর কারণে অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের অনেকগুলো আক্রমণের বিপক্ষে উল্টো মাঝে মধ্যে পাল্টা আক্রমণে যাওয়া বান্দরবান খেলার ধারার বিপরীতে গোল করে স্বাগতিকদের প্রচণ্ড চাপে ফেলে দেয়। ৭৭ মিনিটে অং থোয়াই মারমার গোলে লিড পায় বান্দরবান জেলা। ডি বক্সে জটলা থেকে আচমকা শটে অং চট্টগ্রামের ডিফেন্ডার ও কিপার সাদ্দামকে পরাস্ত করেন (১-০)। অবশ্য তিন মিনিট পরেই সমতা আনতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম। বদলি ইনতিসারের বামপ্রান্ত থেকে নিখটুত মাইনাসে আমিরুজ্জামান জোরালো শটে সমতা আনেন (১-১)। ম্যাচের বাকী সময়েও প্রাধান্য ছিল হোস্ট টিমের। কিন্তু মাঝ মাঠের দক্ষ জোগানদার এবং ভাল স্ট্রাইকারের অভাবে আর কোন গোল না হওয়ায় এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় শামসুদ্দিনের শিষ্যদের।
নিজেদের মাঠে পয়েন্ট হারানোর ব্যাপারে দুর্ভাগ্য ছাড়া দলীয় কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজি না হলেও ফুটবল সংশ্লিষ্ট একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ফুটবল হচ্ছে টিমওয়ার্কের খেলা। মাত্র কয়েকদিন প্র্যাক্টিস করে ফুটবলে ভাল ফলাফল আশা করা যায় না। তবে টিম ম্যানেজার মসিউল আলম স্বপন পরের ম্যাচে তাঁর দল ঘুরে দাড়াবে বলে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন।
এর আগে বিরতির সময় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দু’দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের সাথে করমর্দন করেন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন। এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সিডিএফএ সহসভাপতি এসএম শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, সিজেকেএস সহসভাপতি আলহাজ দিদারুল আলম চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি মো. হাফিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও মশিউর রহমান চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য জহির আহমেদ চৌধুরী, সৈয়দ আবুল বশর, মোহাম্মদ শাহজাহান, জি এম হাসান, মোহাম্মদ ইউসুফ, প্রদীপ ভট্টাচার্য, নাসির মিয়া প্রমুখ। আগামী ২০ জানুয়ারি অ্যাওয়ে ম্যাচে বান্দরবান স্টেডিয়ামে বান্দরবান জেলার বিরুদ্ধে খেলবে চট্টগ্রাম।
এদিকে গতকালের এ ম্যাচে দু’একটি বিষয় বেশ দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। প্রথমত, এ ম্যাচে মাঠে ছিলনা চেঞ্জিং বোর্ড। খেলোয়াড় পরিবর্তনের সময় দেখা যায় ৪র্থ রেফারি ইনকামিং খেলোয়াড়টিকে ধরে সাইড লাইনে দাড়িয়ে থাকতে। এ ব্যাপারে ম্যাচ কমিশনার ফাইজুল ইসলাম আরিফ বলেন, আয়োজক কমিটির দায়িত্ব মাঠে চেঞ্জিং বোর্ড নিয়ে আসা।
কিন্তু ভুল করে তারা তা আনেনি। তবে খেলা নির্ধারিত সময়ে শুরু এবং শেষ হয়েছে আর খেলার মধ্যখানে উদ্বোধনও ম্যাচ কমিশনারের অনুমতি নিয়েই হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল খেলার শুরুতে দিদার, হাফিজ, মশিউর, জহির, শাহজাহান, শহিদ, দুলাল ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায় নি মাঠে। কিন্তু খেলার প্রথমার্ধের পর বিরতিতে সিটি মেয়র যখন উদ্বোধন করতে মাঠে ঢুকেন তার ঠিক আগ মুহুর্তে দেখা যায় আরো বেশ কিছু কর্মকর্তাদের তৎপরতা। সিজেকেএস কর্মকর্তাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে বন্দর স্টেডিয়াম। মাঠে উদ্বোধনের সময় ফটোসেশনেও তাদেরকে বেশ ঠাসাঠাসি করতে দেখা গেলেও চট্টগ্রাম দলকে অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাদেরকে মাঠে পাওয়া যায়নি। সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক মাঠ ছাড়ার সাথে সাথেই তারাও হাওয়া। টিমের ফলাফল কি তা খবর নিয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। হায়রে কর্মকর্তা! অথচ আগে আমরা দেখেছি হাজী কামাল, পুতু, রাশেদ আজগর, দস্তগীর, শুক্কুর, ফজু, দিদার, হাজী রফিকরা দল বেঁধে উপস্থিত হয়ে চট্টগ্রামের খেলায় গলা ফাটাতেন খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করতে। জেতার জন্য ব্যক্তিগত তরফে পুরষ্কার ঘোষণা করতেন। জিতলে নানা প্রণোদনা দিতেন। আর এখনকার কর্মকর্তারা? তারা মাঠে যান শুধুমাত্র হাজিরা দিতে, নির্ধারিত বা বিশেষ বিশেষ সময়ে। চট্টগ্রামের ফিলিংস তাদের আছে বলে মনে করার লক্ষণ এটা হতে পারে না। এসব ওসি (ওপেনিং-ক্লোজিং) সাহেবদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের খেলাধূলা সামনে এগোবে না চিংড়ির মত হাঁটবে?- বিষয়টি নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।