গুমাইবিলে বোরোর বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

6

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

তীব্র গরমেও থেমে নেই গুমাইবিলের বোরো ধান কাটা। কৃষকরা কোমর বেঁধে কাটছেন ধান। তাদের মধ্যে নেই কোন ক্লান্তি। তারা জানান, এবার বোরোর বম্পার ফলন হয়েছে। তাই সবার মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ-হাসি।
রাঙ্গুনিয়া গুমাইবিলে পাকা ও আধা-পাকা সোনালী ধান দুলছে। এবার বোরো চাষে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সার, বীজ, পানি- সবকিছুই কৃষকের অনুক‚লে ছিল। প্রচন্ড তাপদাহে ধান কাটা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা।
তবে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত কৃষকরা। কয়েকদিন পর ধান কাটা শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এরপরও এবার গুমাইবিলে সুপার বাম্পার ফলনের সুফল ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানান অনেক কৃষক।
কৃষক মো. নুরুল হক জানান, চাষাবাদে যা খরচ হয়েছে, ধান গোলায় উঠলে তার ৩ গুন টাকা উঠে আসবে।
গুমাইবিলসহ নানা বিলে এবার কমপক্ষে ১০ হাজার কৃষক বোরো চাষ করেছেন। তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। সব কৃষকের মুখে হাসি। পানি, সার, বীজ, বিদ্যুৎ- সবকিছু সময়মত পেয়েছেন তারা। পোকার আক্রমণ থেকেও রক্ষা পেয়েছে ফসল।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৩১৫ হেক্টর। আর কৃষকরা আবাদ করেছেন ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। সবখানে ভালো ফলনের খবর পাওয়া গেছে।
বৈরি আবহাওয়ার কবলে না পড়লে এবার বাম্পার ফলনের সুফল পাবেন কৃষকরা। গুমাইবিলসহ নানা জমিতে আগাম বোরো চাষ হওয়ায় অনেকেই ধান কাটা শুরু করেছেন।
সরেজমিন গুমাইবিলের মরিয়মনগর অংশে গেলে দেখা গেছে, কৃষক মো. নুর উদ্দীন এবার ৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। যার মধ্যে ব্রিধান ৮৮ জাতটি ৫ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন। জাতটি আগাম হওয়ায় ইতিমধ্যে ১ হেক্টর জমি থেকে ধান কাটা হচ্ছে। যার ফলন হেক্টরপ্রতি ৬ মে টন/হেক্টর। তিনি এ জাতের ধানের চাষাবাদ করে ব্যাপক লাভের কথা জানান।
মো. ফরিদ নামে আরেকজন কৃষক ১০ হেক্টর জমিতে ব্রিধান ৮৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। তিনিও ধান কাটা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, রোগ এবং পোকার আক্রমণ কম হয়েছে এবার। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার শীলের পরামর্শে কাজ করে ফলন খুব ভালো পেয়েছি। তাছাড়া আগাম ধান কাটায় কমমূল্যে শ্রমিক পাচ্ছি। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা বোরা চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছি।
‘কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে’- মন্তব্য করে কৃষক মো. আলী জানান, আমরা চাষাবাদ করে লাভবান হওয়ায় আবারও বাপ-দাদার পৈতৃক পেশা কৃষিতে ফিরে আসছি। আমার মতো শত শত কৃষক অন্য পেশা বাদ দিয়ে আবার কৃষিকে বেছে নিয়েছেন। আমরা কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছি। কৃষক এখন কোথাও জমি খালি রাখেন না।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার শীল জানান, ধান কাটার পর দেখা গেছে, ধানে কোন চিটা নেই। আগাম বোরো চাষে কৃষকরা ভালো ফলন পেয়ে খুবই খুশি। সামনে আরও নানা জাতের বীজ আসবে। আমরা নতুন জাতের ধান চাষা করে কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করবো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরুল কায়েস জানান, এবার বোরো চাষবাদে সবকিছু কৃষকের অনুক‚লে ছিল। ভালো ফলন হয়েছে। অনেক কৃষক আগাম বোরো ধান চাষাবাদ করায় তারা এখন পাকা ধান কাটছেন। আমরা সব সময় কৃষকের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের বোরো ধান চাষাবাদে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, কৃষকরা এবার তার চেয়ে ১ হাজার হেক্টরের চেয়েও বেশী চাষাবাদ করেছেন।