পূর্বদেশ ডেস্ক
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত সরকার চিনি রপ্তানিতে লাগাম টানার কথা ভাবছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদনকারী দেশ ভারত রপ্তানিতেও দ্বিতীয়। রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ব্রাজিলেও এবার উৎপাদন কম হয়েছে। পাশাপাশি তেলের উচ্চ মূল্যের কারণে মিলগুলো আখভিত্তিক ইথানল উৎপাদনে ঝুঁকছে, যার দাম ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে চড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং দাম বৃদ্ধি ঠেকাতেই ভারত ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, শুরুতে ৮০ লাখ টন চিনি রপ্তানির পর তাতে লাগাম টানার চিন্তা ছিল ভারত সরকারের। কিন্তু প্রাক্কলনের চাইতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় আরও কিছু চিনি রপ্তানিতে সায় দিয়েছে সরকার। এখন এক কোটি টন রপ্তানি হয়ে গেলেই নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
ভারতীয় চিনি উৎপাদকদের সংগঠন দ্য ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন চলতি মৌসুমে ৩ কোটি ১০ লাখ টন চিনি উৎপাদনের প্রাক্কলন ধরেছিল। তবে সংশোধিত হিসাবে তা ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই ৮৫ লাখ টন চিনি রপ্তানিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারতের চিনিকলগুলো। ইতোমধ্যে প্রায় ৭১ লাখ টন চিনি পাঠানোও হয়েছে। এই খবরের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বলরামপুর, ডালমিয়া ভারত, ধামপুর, দ্বারিকেশ ও শ্রী রেনুকা সুগার মিলের শেয়ারের দাম ৮ শতাংশ পড়ে গেছে।
তবে এক কোটি টন চিনি রপ্তানির সম্ভাব্য সীমাকে যৌক্তিক বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। মুম্বাইভিত্তিক এক রপ্তানিকারক বলেন, ‘রপ্তানিসীমা এক কোটি টন আসলেই বড় অংক, এতে চিনিকল ও সরকার উভয়ই লাভবান হবে’।
তিনি বলেন, এক কোটি টন চিনি রপ্তানির পরও ১ অক্টোবর থেকে চিনি সংগ্রহ অভিযানে সরকারের গোলায় ৬০ লাখ টন চিনি আসবে, যা দিয়ে ডিসেম্বর প্রান্তিকের উৎসব মৌসুম অনায়াসেই সামাল দেওয়া যাবে।
মহামারির ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ইউক্রেইন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্য গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউক্রেইন থেকে সূর্যমুখী তেল না পাওয়ায় এবং ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধ রাখায় রান্নার তেলের দাম চড়ে গেছে অনেক দেশেই।
যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্ব বাজারের ৩০ শতাংশ গম আসত রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে। ওই সময় ইউক্রেইনের বন্দরগুলো দিয়ে প্রতি মাসে ৪৫ লাখ টন কৃষি পণ্য রপ্তানি হত, যে কারণে ইউক্রেইনকে বিশ্বের ‘রুটির ঝুঁড়ি’ বলা হত।
কিন্তু ফেব্রæয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করলে এসব রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়; তাতে দাম ঊর্ধ্বমুখি হতে শুরু করে। ভারত গমের সেই ঘাটতি অনেকটা পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তীব্র গরমে ফলনে ক্ষতি হওয়ায় ভারতের বাজারেই গমের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ প্রেক্ষাপটে এ পণ্যটির রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দিল্লি। খবর বিডিনিউজের
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, যুদ্ধের কারণে মূল্য বাড়তে থাকায় দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে; ইউক্রেইনের রপ্তানি যুদ্ধপূর্ব স্তরে ফেরানো না গেলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে আর তা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে।