চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কিনছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান। সরাসরি গ্রামে ঘুরে কৃষকের থেকে সরকারি মূল্যে ধান কেনার উদ্যোগ নেন তিনি। গত ২৭ মে প্রথম দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ইসলামপুর ও লালা নগর ইউনিয়নে গিয়ে ধান কিনেন তিনি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দুই ইউনিয়ন থেকে ৬ টন ধান কেনা হয়। তবে কয়েকজন কৃষকদের ধানে কিছুটা আর্দ্রতা থাকায় শুকিয়ে গত ২৮ মে উপজেলা খাদ্য গুদামে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন তিনি। লালা নগর ইউনিয়নের বাদশা মিয়া জানান, ইউএনও স্যার আমাদের ঘরে এসে ধান কেনার কারণে আমাদের দ‚র্ভোগ কমেছে। ধান গুদামে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। সরকারের নির্ধারিত ম‚ল্যে তিনি ধানের দাম পাচ্ছেন। ধানের এমন ম‚ল্য পেলে কৃষকেরা উপকৃত হবে বলে তিনি জানান।
একই গ্রামের কৃষক আবদুল সবুর বলেন, ধানে কিছুটা আর্দ্রতা থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে ধান নেয়নি। ধান শুকিয়ে খাদ্যগুদামে কৃষি কার্ডসহ নিতে বলেছেন আমাকে। আগে গুদামে কখনো ধান বিক্রির সুযোগ পাননি তিনি। এবারই প্রথম ন্যায্যমূল্য ধান সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ইসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, তিনি তার বাড়িতেই ২৬ টাকা কেজি ধরে ৩ টন ধান বিক্রি করেছেন। বাজারে প্রতি মণ ধান ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রির কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাড়িতে এসে ১ হাজার ৪০ টাকা মণে ধান কিনছে সরকার। এই দামে ধান কিনলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। কৃষকদেরও দুর্ভোগ কমবে। ধান কেনা শেষে ইউএনও মো. মাসুদুরর রহমান বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি কার্ডধারী কৃষকের বাইরে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনো প্রকার দালালের কাছে না গিয়ে সরাসরি আমার অফিসে কিংবা খাদ্যগুদামে এসে মানসম্মত ধান বিক্রি করতে পারবেন কৃষকেরা। ধান বিক্রি করার জন্য যে কেউ আমার অফিসে আসতে পারেন। মানসম্মত ধান ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে।
সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে প্রচারাভিযান ও ধান কেনাবেচায় কৃষকদের সরাসরি সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়। ধান কেনার সময় উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভ‚ইঞা সাথে যান। সেখানে দুই কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ টন ধান কেনা হয়। অন্যান্য কৃষকরা চুক্তি করেন তাদের ধান শুকিয়ে চিটামুক্ত করে খাদ্য গুদামে নিয়ে যাবেন। উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভ‚ঁইয়া বলেন, ধান নিয়ে কৃষকদের সরাসরি খাদ্যগুদামে আসার জন্য প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে, মাইকিং করেছেন। প্রকৃত কৃষক যাতে ধান-চাল দিতে পারেন, সে জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে তালিকা নেওয়া হয়েছে। ধান গুদামে এনে যাতে আবার বাড়িতে ফেরত নিতে না হয়, সে জন্য ধানের আর্দ্রতার মাত্রা ও অন্যান্য গুণমান সম্পর্কে কৃষকদের আগে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। ধান সংগ্রহের এই কার্যক্রম আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। উপজেলা থেকে এবার চাল ৩৬ এবং ধান ২৬ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ২২০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান-চাল উভয়ের সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। ২২ মে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান।