নতুন এক কক্সবাজারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী

14

কক্সবাজার প্রতিনিধি
নতুন এক কক্সবাজারে আজ আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কক্সবাজার তৈরির কারিগর শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার বহু বছর পর কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন তিনি। স্বাধীনতার পরে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকেও যতটা উন্নয়নকর্ম কক্সবাজারের মানুষ দেখেননি, তার কয়েক গুণ বেশি উন্নয়ন হয়েছে গত ১৪ বছরে। কক্সবাজার জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাবমেরিন ঘাঁটি, মেডিক্যাল কলেজ, সাবরাং ইকো ট্যুরিজম, বিকেএসপির মাঠ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ ৭২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প শেষ হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের অর্থনীতি। পর্যটনের আসবে আমূল পরিবর্তন। গতি আসবে দেশের অর্থনীতিতেও। স্থানীয়রা বলছেন, এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে লাখো মানুষের।
এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্যে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে উৎসবে উন্মুখ কক্সবাজারবাসী। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে বর্ণিল সাজে সেজেছে পর্যটন নগরী। প্রায় ৫ বছর পর তিনি আসছেন কক্সবাজার। সর্বশেষ ২০১৭ সালে তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও সিঙ্গেল পাওয়ার মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প কাজও চলছে। সেখানে নির্মিত হচ্ছে এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল।
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। বাকখালী নদীর ওপর ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজসহ ২.৩০ কিমি অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। নির্মিত হয়েছে ৪.৭৭ কি.মি. বাঁধ। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১১টি বাসভবন, ৯৫টি স্কুল কাম সাইক্লেন সেন্টার, ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ১৮টি ভূমি অফিস নির্মাণ, ৪টি মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল জাদুঘর, ১৯৮টি সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন, ২৭টি পুকুর ও খাল উন্নয়ন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ ৫৩ কি.মি. সড়ক ও ৫০ কি.মি. সংযোগ সড়ক, ৩টি বহুমুখি সেবাকেন্দ্র, ৪টি ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার, ৯টি ফায়ার সিসেস্টম ওয়ার হাউজ, ৩টি হাটবাজার, ২.৫০ কিমি ড্রেন, ১০ কিমি ওয়াটারবডি রিটেনশন ক্যানেল, ৪ কিমি প্রটেক্টিভ ওয়ার্ক ও জেলা ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ এবং ১ হাজার ৭২৫ কিমি গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া ৭৮৯ কি.মি. বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক, ১ হাজার ২০০ কিমি এইচবিবি সড়ক নির্মাণ ও ৫২৫ কিমি আরসিসি সড়ক নির্মাণকাজ চলছে।
কক্সবাজার জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিকে অত্যাধুনিক হাসপাতাল হিসেবে বিনির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আধুনিক বহির্বিভাগ ভবন, ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন, ১০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) প্রতিষ্ঠা, ৬৫ বেডের অত্যাধুনিক শেখ রাসেল স্ক্যানো, একটি আধুনিক মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এছাড়া ১৪ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। চকরিয়া এবং পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩টি পাঁচতলা আবাসন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উখিয়া এবং টেকনাফের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও স¤প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তাছাড়া ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিবার পরিকল্পনার জন্য ভবন নির্মিত হচ্ছে।
২০০৯ থেকে ২০২২ সময়কালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের আওতায় ৩৭৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বালাদেশ কোস্টগার্ডের ৩টি স্টেশনে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনস-এ ছয়তলা বিশিষ্ট দোতলা মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া সমুদ্র উপকূলে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর, মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ ও স¤প্রসারণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জেলের জীবনমান উন্নয়ন ও জাতীয় উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় নানামুখি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। চকরিয়া উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ (১৮৬.৫ মিটার) বাগগুজরা রাবার ড্যাম, ৫৯.৬৫ কিমি বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের অভ্যন্তরস্থ পানি নিষ্কাশন, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় লোনা পানির প্রবেশ রোধ ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি কল্পে ৬০.৬০ কি.মি. বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপে ৩ কি.মি. প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে কক্সবাজার সরকারি কলেজে ৩ কোটি ৩১ লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা ব্যয়ে একটি পাঁচতলা একাডেমিক ভবন ও ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭৮৪ টাকা ব্যয়ে পাঁচতলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ, সংস্কার, স¤প্রসারণের জন্য ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ৭হাজার ৮৪৫ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আওতায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডার প্রতিস্থাপন, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছ। এছাড়া ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আবহাওয়ার তথ্যসেবা ও আগাম সতর্কবাণী পদ্ধতি জোরদারকরণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন নির্মাণ, আলোকসজ্জাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা খাদ্য বিভাগের আওতায় জেলা অফিসসহ জেলার ৮টি উপজেলার সব এলএসডি অফিসের গুদাম মেরামত ও সংস্কারকাজ করা হয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলায় ৫০০ মে. টন ধারণক্ষমতার একটি গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। টিডিএস এবং অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ এএসআই কোয়ার্টার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোয়ার্টার, সীমানাপ্রাচীর ও অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনতলা বিশিষ্ট রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের জেলা কার্যালয়।
বিআরডিবির কক্সবাজার কার্যালয়ও জেলায় নানা উন্নয়নকাজ করেছে। রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ৫টি ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া শহরের সার্কিট হাউজ রোডে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল (অরুণোদয়), বইল্ল্যাপাড়ার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে ডিসি কলেজ ও কবিতা সরণিতে শিশু হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। তাছাড়া কস্তুরীঘাট সংলগ্ন সরকারি জায়গায় ‘পথশিশু নিবাস’-এর নকশা তৈরি ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।