সোশ্যাল মিডিয়ায় যতকথা

35

ডাক্তারদের দায়িত্ব

মাসুদ নাসির

মানুষ মানুষের জন্য। কিন্তু প্রায় সময় মানুষ তার দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে উদাসিন হয়ে পড়ে। এতে আর মানুষের জন্য অমানুষে পরিণত হয়। ডাক্তারদের সৃষ্টিকর্তার পর সাধারণ মানুষ অধিক গুরুত্ব দেয়। কিছু কিছু ডাক্তার তাদের দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সাথে যথাযথ আচরন করেননা। মানুষকে সেবার সর্বোচ্চটা দেওয়ার জায়গায় নিজের স্বার্থটা বড় গুরুত্ব দেয়। রোগীকে দায়িত্বের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিলে মানুষ ডাক্তােেদর প্রতি আস্থা বাড়তে থাকে। সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার পারে তার জীবন সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে। এমনি একটি বাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে ডাক্তারদের দায়িত্ব কর্তব্যের বাইরে অনেক কিছু করা যায়। শত বছরের চেয়ে অধিক সময় ধরে সমতল ও পাব্যর্তঅঞ্চলে চিকিৎসাসেবার বাতিঘর হিসেবে সবার মাঝে মানবতার প্রিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত চন্দ্রঘোনার খ্রিষ্টিয়ান হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডাক্তার শেওয়াগগির মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সবার মাঝে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। সম্প্রতি হাসপাতালে গভীর রাতে একজন প্রসুতি রোগী নিয়ে আসা হয় সন্তান প্রসবের জন্য কয়েকজন অভিভাবকসহ প্রসুতির সঙ্গীয়রা। এমনি গভীর রাতে সবাই যখন গুমের নিদ্রায় তখন রোগীটি প্রসব যন্ত্রণায় পুরো হাসপাতালকে জাগিয়ে তুলে। রাতের দায়িত্বে কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীকে দেখে অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। তখন গভীর রাত হাসপাতালের সবাই যে যার মত ঘুমিয়ে পড়েছে। ঐ ডাক্তার সবাইকে জাগিয়ে অপারেশন রুমে প্রসুতি রোগীর অপারেশন শুরু করে। অপারেশন শুরু হলে প্রসুতি রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়। ডাক্তার তখন অপারেশন রুমে রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা করে দেখে তার রক্তের সাথে প্রসুতি রোগীর মিল রয়েছে। সাথে সাথে প্রসুতিকে রোগীকে ১০ মিনিটের মধ্যে রক্ত দেওয়া শুরু করে। রক্ত দেওয়া শেষ হলে আবার অপারেশন শুরু করে। অপারেশন শেষে প্রসুতির সন্তান পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে। গভীর রাত্রে কোথায় প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করতো প্রসুতির পরিবার। রক্ত না পেলে অপারেশন করা সম্ভব হতোনা। প্রসুতি ও তার সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হতোনা। স্যালুট করি মানবিক ডাক্তারকে । এভাবে যেন নিজের অস্তিতর সেবা দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার ব্রত নিয়ে কাজ করে সারা জীবন।
ঠিক সময়ে রক্ত কিংবা ডাক্তারের পেশাদারিত্ব মনোভাবে দৃটি জীবন বাঁচিয়েছে। এভাবে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের যে যে স্থানে আছে।

আত্মহত্যা
সমাধান নয়

রেখা নাজনীন

আত্মহত্যা সমাধান নয় সত্য তবে শখ করে কেউ আত্মহত্যা করেনা, এটাও চরম সত্য। প্রচÐ কষ্ট পাওয়া মানুষটাই নিজেকে শেষ করতে বাধ্য হন। যে বা যারা প্রতিদিন একটু একটু করে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেন / সমাজ- পরিবার- মান সম্মান এর দোহাই দিয়ে কিংবা অবহেলা অনাদরে প্রতিনিয়ত তার কষ্টকে উপেক্ষা করেছেন, অন্যায়ভাবে আপনি বা আপনারাই কিন্তু তার আত্মহত্যার জন্য দায়ী।
সে পরিবারই হোক বা পরিবারের বাইরেই হোক। সবচেয়ে দুঃখজনক সত্য হলো, আপন মানুষগুলোই এ অন্যায় অপরাধটি করে থাকেন। এক্ষেত্রে পরিবারই বেশিরভাগ দায়ী। কষ্টে থাকা একজন মানুষ যখন আপনার কাছে তার কষ্ট বলে, কিংবা সাহায্য চায়, আপনি তাকে সাহায্য করুন। তার কথা শুনুন, তাকে সময় দিন, মমতা দিন, সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখান। বুঝাতে চেষ্টা করুন দুঃসময় চিরকাল স্থায়ী হয়না, সুদিন আসবেই। দুঃখগুলো দূরে যাবেই। মেনে নেওয়া বা মানিয়ে নেওয়ার অজুহাতে, কিংবা সমাজ সংসারের দোহাই দিয়ে কারো কষ্টকে আরো বেশি বাক্সবন্দী করে দেবেন না।
সময় থাকতে হাত বাড়ান, পাশে থাকুন, ভালোবাসুন । দেখবেন, আত্মহত্যা নামক আত্মঘাতী কাজটি বন্ধ হবে।

শোকাবহ আগস্ট

সাবিনা চৌধুরী

পৃথিবীতে সত্য-মিথ্যা,ন্যায়-অন্যায়ের দ্ব›দ্ব চিরকালের। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যকে,অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে মানব সমাজ লিপ্ত হয়েছে যুদ্ধবিগ্রহে। মোকাবেলা করতে হয়েছে ঘাত-প্রতিঘাতের। কিন্তু যুগে যুগে জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে মজলুমদের বিজয় হয়েছে।যদিও বিজয়ের পেছনে রচিত হয় এক মর্মান্তিক ইতিহাস। এবং কোনো না কোনো মহানায়কের হাত ধরে অর্জিত হয় এই বিজয়। তেমনি বাংলাদেশ নামের আমাদের এই সবুজ-শ্যামল স্বাধীন ভূখÐের জন্মেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির মহানায়ক,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে জন্ম লাভ করে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা রূপসী বাংলা খ্যাত ‘বাংলাদেশ’ ভূখÐের। সেই সঙ্গে স্বাধীন দেশ হিসেবে জায়গা করে নেয় বিশ্ব মানচিত্রে। বাল্য কালের ‘খোকা’ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে উঠার গল্প বাঙালি জাতির অজানা নয়। শৈশব থেকে বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন জনদরদি তেমনি ছিলেন দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ।শিশুকালে পিতা শেখ লূৎফর রহমান আদর করে তাঁর নাম রাখেন ‘খোকা’। পরবর্তীতে এই ছোট্ট খোকাই হয়ে উঠেন অত্যাচারিত,সংগ্রামী,সাধারণ মানুষের নেতা। শৈশবে খোকা নিজে ভিজে এসে তাঁর দরিদ্র বন্ধুকে নিজের ছাতা দিয়ে দেন,শীতে কাতর বৃদ্ধা মহিলাকে নিজের চাঁদর জড়িয়ে দিয়ে শীত নিবারণ করে,নিজে কেঁপে কেঁপে ঘরে ফিরে।অসহায় গরিব মানুষের প্রতি খোকার দরদ ছিল অফুরন্ত। গ্রামের সাধারণ দরিদ্র মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তাঁর শিশুমনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করত। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে এসে তিনি দেখতে পান ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়,অত্যাচার এবং শোষণ যা কিশোর খোকার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে। মাত্র পনের বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু প্রথম কারাবরণ করেন। সেই সময় তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ব্রিটিশ সরকার কিশোর মুজিবকে ৭ দিন কারাগারে আটক রাখে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৫৪ বছরের জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ আগ্রাসনের অবসানে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের। ১৪০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখÐের, দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে এক করে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে জন্ম হয় পাকিস্তানের।ফলে স্বাধীন দেশ পেলেও স্বাধীনতা পায়নি বাঙালিরা। পাকিস্তানিরা শাসনের নাম দিয়ে বাঙালিদের উপর জুলুম ও অন্যায় করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু এসব অন্যায়,অবিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে সর্বশেষ চূড়ান্তভাবে ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সংগ্রামের ডাক দিয়ে দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণকে তর্জনী উঁচিয়ে বলেন,
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
এরি ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার উম্মাদ চেতনা, দেশপ্রেম, অত্যাচারি শাসকগোষ্ঠীর ত্রাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ‘বাংলাদেশ’ নামের স্বাধীন দেশের ঘোষণা দেন। স্বাধীনতা অর্জন করে থেমে যাননি এই মহান নেতা,দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে রক্ষা এবং অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার অদম্য প্রয়াসে অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করে দেশকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।মহান রাষ্ট্র পরিচালনার এই অভিভাবক মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসন ব্যবস্থায় মানুষের আহার,বস্ত্র,বাসস্থান,চিকিৎসা,শিক্ষা ও কাজের সৃষ্টির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দেন যার লক্ষ্য ছিল দুর্নীতি দমন,ক্ষেতে খামারে ও কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। আফসোস! দেশীয় এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা এই নির্ভীক স্বপ্নদ্রষ্টা মহানায়ককে চিরতরে রুখে দেয়। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চভিলাষী বিশ্বাসঘাতক সেনা সদস্যরা সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। ঘাতকের দল এতেও থেমে থাকেনি,জাতির জনকের খুনীদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেবার জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে কলঙ্কের শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়। অবশেষে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন এবং প্রমঠু করেন যে কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে কখনো মুছে দিতে পারবেনা। বিশ্ব ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু এক মহানায়ক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।