শুরু হয়েছে বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন

30

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে বহদ্দারহাট বারইপড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। গত মাসে জেলা প্রশাসন ৬ দশমিক ৯৫ একর জায়গা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিলে খাল খননের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। চলতি মাসের মধ্যে ৩ একর ৭৮ শতক জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তাবিত খালটি খনন করতে প্রয়োজন হবে ২৫ দশমিক ১৬৬৬২ একর জায়গার। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষে পর্যায়ক্রমে পুরো জায়গাটি বুঝিয়ে দিবে জেলা প্রশাসন। পূর্বদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মাসুদ কামাল।
দীর্ঘ সাত বছর পরও প্রকল্পটি দ্বিতীয় দফা সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ১১৮ কোটি টাকা। ৯৫ ভাগ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. ফরহাদুল আলম পূর্বদেশকে বলেন, আমরা এক দফা জায়গা বুঝে পেয়েছি। খাল খননের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। জায়গা বুঝে পাওয়ার পর থেকে খাল খননের ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে একনেকে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন পেলে কাজে আরও গতি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খালটি খনন হলে বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, খাজা রোড ও চাক্তাই সংলগ্ন নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশক্রমে ড্রেনেজ এরিয়া ৭ এর ২২৬৪ হেক্টর এরিয়ার পানি নিষ্কাশন হবে খালটি দিয়ে। বিষয়টি নিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, খালটি খনন শেষ হলে একটি বিশাল অংশের জলাবদ্ধতা কমে যাবে। একেবারে পুরো জায়গা বুঝে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে যেটুকু বুঝে পাচ্ছি সেটুকুতে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। এখন কাজ শুরু হয়েছে। ইনশাল্লাহ, নগরবাসীকে নতুন খালটি খনন করে দিয়ে যেতে পারবো। প্রকল্পের গাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, এতোদিন কাজ শুরু হয়নি তাই গাড়িগুলো সিটি করপোরেশনের অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। খাল খনন শুরু হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের তো গাড়ি লাগবে। তাকে প্রকল্পের গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র।
জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালকের ব্যবহারের জন্য ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ডাবল কেবিন পিক আপ (চট্টমেট্রো-ঠ-১১-০৪৮৭) কেনা হয়। যেটি ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে চসিক। আরও ছয় বছর আগে প্রকল্পের কাজের জন্য ৯ লাখ টাকা দিয়ে ৫টি মোটরসাইকেল, ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দিয়ে লং বোম স্কেভেটর, ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ৫টি ডাম্প ট্রাক কেনা হয়। জেলা প্রশাসন জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় গাড়িটি ফেরত চেয়ে চিঠি দেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ফরহাদুল আলম। এ বিষয়ে গাড়ি বণ্টনের দায়িত্বে থাকা চসিক যান্ত্রিক উপ বিভাগের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, মোটরসাইকেলগুলো প্রকল্পটির তৎকালীন পরিচালক বণ্টন করেছিলেন। যান্ত্রিক উপ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এক্সেভেটর ও ডাম্প ট্রাকগুলো বর্জ্যরে টিজিতে ব্যবহার হচ্ছে। গাড়ি ফেরত চেয়ে প্রকল্প পরিচালকের চিঠির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
নতুন খালটি নগরীর বারইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ্ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে প‚র্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পার্শ্বে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের প্রধান অংশ ২৫ দশমিক ১৬৬৬২ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ। সম্ভাব্য ভ‚মিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের এল এ শাখায়। ভূমি অধিগ্রহণ করতে দুই কিস্তিতে সরকার থেকে ৯১৪ কোটি কোটি ৮৭ লাখ টাকা অর্থছাড় করা হয়। পুরো বুঝে পেয়ে জেলা প্রশাসন ২০১৯ সালের জুন থেকে ভ‚মি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনায় তিনটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। ২০১০ সালে নতুন একটি খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ২০১৪ সালে ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নগরীর বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদীর সংযোগ খালের প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে হয়েছে ১২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া তিনদফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও দ্বিতীয় বারের সংশোধনীতে ১১৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন শতভাগ জিওবি (সরকারি অর্থ) অর্থায়নে প্রকল্পটির সংশোধনী চাইলেও ৯৫ ভাগ জিওবি অর্থায়নের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এসবের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব একনেক সভায় উঠলে।
এদিকে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি নগরীর ওয়াইজ পাড়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল প্রকল্পটির। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে ৬ জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।