ঈদগাঁহতে ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ

85

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁহর ৪ ইউনিয়নে পরিবেশ আইন অমান্য করে ৮ টি ইট ভাটার মধ্যে ৬ টিতে জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলের বৃক্ষাদি প্রতিনিয়ত উজাড় হলেও নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। যার কারণে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীদের আশংকা- এ অবস্থা চলতে থাকলে বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়বে পুরো বনাঞ্চল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরের জালালাবাদ পুর্ব ফরাজী পাড়ায় ২টি, ঈদগাঁহ ইউনিয়নের ভোমরিয়া ঘোনায় একটি, জাগির পাড়া এলাকায় একটি, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ফকিরা বাজারের উত্তরে একটি, বাসস্টেশনের উত্তর পাশে একটি, ইসলামাবাদ বোয়ালখালীতে একটি মোট ৬ টি ইটভাটায় রাত দিন পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। চুল্লীর পাশে স্বল্প ওজনের কয়লা রাখা হলেও সেগুলো লোক দেখানো বলে জানান নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক। তবে চৌফলদন্ডীর নতুন মহালের দুটি ইটভাটা ঝিকঝাক বলে সরেজমিনে প্রমাণ মিলেছে। বাস স্টেশনের গরু বাজার এলাকায় অপর একটিতে তেমন কাঠ পোড়ানো দৃশ্য চোখে পড়েনি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের অর্থায়নে এই ইটভাটা স্থাপনাসহ চলতি মৌসুমে পুরোদমে ইট তৈরির কার্যক্রম চলছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নিয়মাবলী উপেক্ষা করে ইটভাটা মালিকরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মাসোহারা দিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ পাচার করে পোড়াচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অন্যদিকে পাথুরে কয়লার পরিবর্তে দিনরাত চারা গাছ পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েকজন ইটভাটার শ্রমিকের সাথে কথা হলে বনাঞ্চলের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। এতে পাশ্ববর্তী বন বিভাগের সংরক্ষিত ও রক্ষিত পাহাড়ের সৃজিত বাগানের কচি বৃক্ষাদি উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জালালাবাদে স্থাপিত ২ টি ইটভাটায় ব্যাপক হারে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে বলে স্থানীয়রা জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রত্যক ইটভাটায় ৩/৪ টি করে লাইসেন্সবিহীন ডাম্পার ও ট্রাক রয়েছে। মালিকদের বেতনধারী চালকরা এসব পরিবহন দিয়ে রাত দিন পার্শ্ববর্তী ঈদগাঁহ, ইসলামাবাদ, ঈদগড়, বাইশারী, রশিদ নগর, খুটাখালী বনাঞ্চল থেকে চারাগাছ কেটে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে স্ব-স্ব ইটভাটায় মজুদ করে রাখে। এভাবে ইটভাটার মালিকরা বেপরোয়া বন বাগানের মূল্যবান উঠতি গাছের চারা ইটভাটায় পুড়িয়ে বিপন্ন করেছে বনাঞ্চল আর পরিবেশ। ফলে একদিকে যেমন বন বিভাগের মূল্যবান বৃক্ষ সাবাড় হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে প্রচুর রাজস্ব।
অন্যদিকে অনবরত গাছপালা কেটে ফেলার ফলে ওজোনস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব ও পরিবেশ তারভারসাম্য হারিয়ে মানব দেহের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে এসে পড়ে। এলাকার সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীদের দাবি ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালিয়ে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি। এছাড়া কাঠ পাচারকারী ও ইটভাটা মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অচিরেই কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন ইটভাটা মালিক বলেন, সংশ্লিষ্টদের প্রতিমাসে মাসোহারা দিয়ে কাঠগুলো আনা হয়। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় কম দামে কাঠ ক্রয় করে পোড়ানো হচ্ছে।
বৃহত্তর ঈদগাঁহর ইটভাটা মালিকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়লার দাম একটু বেশি হওয়ায় মাঝে মধ্যে কাঠ পোড়ানো হয় বলে স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একাধিকবার কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি খোঁজখবর নিয়ে বনাঞ্চলের কাঠ পোড়ালে ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান।