৯ মাসে চট্টগ্রামে ২০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

33

আসহাব আরমান

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি সংস্থার জরিপে। করোনা পরবর্তী বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে জরিপটি পরিচালনা করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। একাডেমিক পড়াশোনার চাপ ও ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তির কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জরিপে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে আত্মহত্যা করেছে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষার্থী আছেন ২০ জন। এবারের জরিপটিতে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুলের ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন, কলেজ পড়–য়া ৮৪ জন। যার মাঝে নারী শিক্ষার্থী ছিলো ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন। জরিপে মোট অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২৩ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের, অন্যান্য ২ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, একাডেমিক চাপ ও ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তির কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা। একাডেমিক চাপের মধ্যে রয়েছে পড়াশোনা কেন্দ্রীক চাপ, সেশনজট, অভিভাবকদে চাপ ও ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা। ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা করোনা পরবর্তী একাডেমিক চাপের কারণে বিভিন্ন ধরনের মানসিক এবং গঠনম‚লক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
অন্যদিকে ডিজিটাল/ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্তির কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যাও আত্মহত্যার দিকে পরিচালিত করছে শিক্ষার্থীদের। মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, আমাদের জীবনকে সহজ করে তুললেও এর উপর অতিরিক্ত আসক্তি ও নির্ভরতা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ পূর্বদেশকে জানান, আমরা জানি আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে সমস্যাগুলো নিয়ে তারা ভুগে থাকেন তাদের অনেকগুলোরই চাইলে সমাধান করা যায়। শিক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে শক্ত ও সামর্থ্যবান করে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে একজন শিক্ষার্থী মানে অনেকগুলো মানুষের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নগুলো যেন কখনোই হারিয়ে না যায়।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড. মো. মাহমুদুর রহমান জানান, করোনার সময় ও করোনা পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে বলে অনেক গবেষণায় ও খবরে উঠে এসেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে মানসিক শান্তির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে পড়াশোনার চাপ, পরীক্ষার চাপ, সামাজিকতা, ব্যক্তিগত হতাশার মত বিষয়। এইসব নানা ব্যাপার শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পিছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে, আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং এর প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে সফলকামও হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধের নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কাজ সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ এ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ও তার শতভাগ প্রয়োগের উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি।