৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে

46

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ৩৩৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। গতকাল রোববার অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বাজেট অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম থেকে যোগ দেন অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, কেন্দ্রিয় সহ-সম্পাদক মনসুর এমওয়াই চৌধুরী ও সদস্য খোরশেদ আলম কাদেরী, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সহ সভাপতি সাংবাদিক খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামরুদ্দিন চৌধুরী, সহ সম্পাদক অধ্যাপক বিদ্যুৎ কান্তি নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জহিরুল হক স্বপন এবং কোষাধ্যক্ষ শাহ মোস্তফা কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল বারকাত বলেন, জনগণতান্ত্রিক ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছি। এটি বর্তমান বাজেটের তুলনায় ৩.৪ গুণ বেশি। যেখানে ৩৩৮টি সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সমাজ থেকে চার ধরনের বৈষম্য যথা- আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য ক্রমাগত হ্রাস করে নির্মূলের দিকে যাওয়া।
কালো টাকা ও অর্থপাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০১৮-২০১৯ বছর পর্যন্ত আমাদের হিসেবে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। আমরা গত ৪৬ বছরে পুঞ্জীভূত কালো টাকার মাত্র দুই শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। যেখান থেকে এক লাখ ৭৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা আসবে। ওই ৪৬ বছরে বিদেশে অর্থপাচারের পরিমাণ ৮ লাখ কোটি টাকা। আমরা তার ১০ শতাংশ উদ্ধার করে বাজেটে আয় খাতে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তাব করেছি। যার পরিমাণ ৭৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।
আবুল বারকাত বলেন, আমাদের বাজেটে মোট বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। এখানে মোট বাজেটের ২১ শতাংশ বরাদ্দ। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি, তৃতীয় হচ্ছে কৃষি খাত। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সবধরনের বৈষম্য বেড়েছে। এসব পাল্টাতে হবে, ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। সেজন্য আমরা গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চায় অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। গবেষণা উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা গবেষণা উদ্ভাবন বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন নামে নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করছি। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলছি। আরেকটি মন্ত্রণালয়ের কথা আমরা বলেছি সেটা হলো গণপরিবহন মন্ত্রণালয়।
আবুল বারকাত বলেন, আগামী বাজেটে অর্থায়নের প্রান্তিক, দরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্য-মধ্যবিত্তের ওপর কর দাসত্ব আরোপ করা যাবে না। এরপর রয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের সুপারিশ। বাজেটে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। শর্ত হলো কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’ সরকার মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে তা বাস্তবসম্মত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের চলমান মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণ নিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট। সেটি হলো- যখন থেকে আমরা অন্তত ৪/৫টি মেগা প্রকল্পের সুদ পরিশোধ শুরু করব, তখন থেকেই ঋণের ক্ষেত্রে সরাসরি আমরা রেড জোনে চলে যাব। যা আনুমানিক হিসাবে আগামী ২০২৭-২০২৮ সালে শুরু হওয়ার কথা। আর ২০৩২ সালে যখন ১২টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে করতে হবে, তখন বিপদ আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এই সংকট সমাধানে নতুন কোনো মেগা প্রজেক্ট নেওয়া যাবে না। প্রজেক্টের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।
রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, আমাদের বিকল্প বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের ৯২ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয়ের ৭৭ শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা পরোক্ষ কর থেকে। যেখানে প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র ৪৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ৭ শতাংশ, যা সরকারের চলতি বাজেটে ঘাটতির তুলনায় অনেক কম। বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ কিংবা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণের প্রয়োজন নেই। সমস্যাটা অর্থনৈতিক হলেও সমাধান তার রাজনৈতিক।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত নিয়ে আবুল বারকাত বলেন, ‘শিক্ষা’ ও ‘প্রযুক্তি’কে এখন একসাথে দেখিয়ে সরকার বলে যে, তারা শিক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেন। দাবিটা সঠিক নয়। আমাদের প্রস্তাব হলো ‘শিক্ষা’ ও ‘প্রযুক্তি’কে দুটি ভিন্ন খাত হিসেবে দেখাতে হবে। যে ক্ষেত্রে ‘শিক্ষা ও গবেষণা’ হবে একটি খাত আর ‘প্রযুক্তি’ হবে অন্য খাত। একই সাথে ‘শিক্ষা ও গবেষণা’ বাজেট বরাদ্দ হবে কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ। আমরা সেটাই প্রস্তাব করছি। শুধু ‘শিক্ষা ও গবেষণা’ খাতে আমাদের প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৯১.২ শতাংশের জোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়। বাকি ৮.৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা হবে বাজেট ঘাটতি।
ড. আবু বারাকাত বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় বাজেটের ব্যয় বরাদ্দ কাঠামোতে গুণগত রূপান্তর ঘটবে। মোট বরাদ্দে এবং আনুপাতিক বরাদ্দে উন্নয়ন বাজেট হবে পরিচালন বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি, যা এখন ঠিক উল্টো। এখন উন্নয়ন-পরিচালন বাজেট বরাদ্দের অনুপাত ৩৯:৬১, যা আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে হবে ৬৬:৩৪। আমাদের প্রস্তাবনায় উন্নয়ন বরাদ্দ চলমান সরকারি বাজেটের তুলনায় ৫.৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হবে, আর পরিচালন বরাদ্দ (যার ৮০-৮৫% বেতন-ভাতা) এখনকার তুলনায় ১.৮৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকায় উন্নীত হবে
এদিকে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জনগণতান্ত্রিক বাজেটে ব্যয় বরাদ্দে আমরা কয়েকটি বড় মাপের পরিবর্তন-সংস্কার প্রস্তাব করছি: অতিকেন্দ্রীভ‚ত শাসনব্যবস্থাকে তৃণমূল-মানুষমুখী ও গণমুখী করার লক্ষ্যে আমরা যেমন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে ভৌগোলিকভাবে স্থানান্তরের প্রস্তাব করছি, তেমনি জনসমৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়াস হিসেবে আমরা দুটি নতুন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যমান মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৬টি নতুন বিভাগ/ ডাইরেক্টরেট গঠন এবং এ লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করছি। সর্বোচচ অগ্রাধিকার পাবে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণখাত (বাজেট বরাদ্দের ২১.৪ শতাংশ), তারপর শিক্ষা ও প্রযুক্তি (১১.৮ শতাংশ), তারপর কৃষি (৯ শতাংশ), তারপর জনপ্রশাসন (৮.২ শতাংশ), তারপর স্বাস্থ্য (৭.৭ শতাংশ) ইত্যাদি।
শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে চলতি অর্থবছর ২০২১-২২ এর বাজেটে সরকারের মোট বরাদ্দ (পরিচালন + উন্নয়ন) ছিল ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। শিক্ষার অগ্রাধিকার এবং বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এ খাতের জন্য আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৪১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করছি, যা আমাদের মোট প্রস্তাবিত বরাদ্দের ১১.৮ শতাংশ এবং চলমান বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ২.৫৪ গুণ বেশি। ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাতে আমাদের এই বরাদ্দ প্রস্তাব বর্তমান জিডিপির প্রায় ৮ শতাংশের সমান। ‘কারিগরি শিক্ষা’ ও ‘মাদ্রাসা শিক্ষার’ উদ্দেশ্য ভিন্ন, সে কারণেই আমরা তা ভিন্নভাবে দেখানো যৌক্তিক বলে মনে করি। আমরা সেটাই করেছি এবং দুটি ভিন্ন বিভাগে রূপান্তরের প্রস্তাব করছি। আমাদের প্রস্তাবে কারিগরি শিক্ষা বিভাগে মোট বরাদ্দ ৩২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, আর মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে (ধর্মভিত্তিক সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ৩ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষাখাতে আমরা ‘নারীর বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছি। এ জন্য আগামী ৫ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকাসহ আসন্ন বাজেটে ৬ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করছি। গবেষণাসংশ্লিষ্ট বাজেট ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাতের অন্তর্গত বিধায় উল্লেখ জরুরি যে, এ বছরই প্রথম আমরা ‘গবেষণা, উদ্ভাবন, বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন’ নামে একটি ভিন্ন (নতুন) মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব করছি। আর এই মন্ত্রণালয়ের জন্য আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমাদের প্রস্তাবিত বরাদ্দ ৮০ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরের জন্য (২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত) মোট ৪ লক্ষ কোটি টাকা।
আমাদের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা একেবারেই বেহাল; স্বাস্থ্যখাত এখন বৈষম্য সৃষ্টি ও দারিদ্র্য সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম; দেশে আসলেই তেমন কোনো শক্তিশালী স্বাস্থ্যখাত নেই; নেই জনস্বাস্থ্য বা পাবলিক হেলথ্ বলে কোনো কিছুর তেমন অস্তিত্ব। স্বাস্থ্যখাতে এখন সরকারি বরাদ্দ ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। আমরা এ বরাদ্দ ৪.৮৩ গুণ বৃদ্ধি করে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। যে বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহ বিবেচনা করেছি, তা হলো, সরকার প্রতিশ্রæত ‘গ্রাম হবে শহর’-এর আওতায় সম্ভাব্য সবধরনের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা প্রদানে যথাসাধ্য বিকেন্দ্রীভ‚ত করার মতো কাঠামো গড়ে তোলা। আমাদের দেশে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সিস্টেম’ বলে কোনো কিছুই তেমন নেই। এ নিয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হলো স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান ডাইরেক্টরেটের পাশাপাশি আরো একটি ডাইরেক্টরেট প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার নাম হবে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ডাইরেক্টরেট’। বিকল্প বাজেটে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হলো ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত এই নবসৃষ্ট বিভাগে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।
প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক বাজেটে সর্বোচচ অগ্রধিকার খাত হলো ‘সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণখাত’। এই খাতে এখন সরকারি বরাদ্দ ৩৪ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসসহ ‘কভিড-১৯’-এর লকডাউন-উদ্ভ‚ত মহাবিপর্যয় এবং সামনের দিকে অনিশ্চয়তা, এসব কারণে আমরা এ বরাদ্দ ১২.৭৬ গুণ বাড়িয়ে ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করছি। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে অন্তত আগামী ৫ বছরের জন্য ‘সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ’ খাতের আওতায় আমরা বেশকিছু নতুন বিভাগ/ ডাইরেক্টরেট প্রতিষ্ঠা এবং সংশ্লিষ্ট বাজেট প্রস্তাব করছি। আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছি। এ লক্ষ্যে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরের (২০২৬-২৭) জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করছি। দরিদ্র-বিত্তহীন-নি¤œবিত্ত-নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকুশলতা উন্নয়ন বিভাগ (গ্রাম-শহর, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান-অনানুষ্ঠানিক, কৃষি, শিক্ষা, সেবা) প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লক্ষ কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরে মোট ৫ লক্ষ কোটি টাকা। নারীর ক্ষমতায়ন বিভাগ (গ্রাম ও শহরের দরিদ্র-বিত্তহীন-নিম্নবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নারীপ্রধান খানা): প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসন্ন অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরে মোট ২ লক্ষ কোটি টাকা। আদিবাসী মানুষের জীবনকুশলতা বিকাশ বিভাগ: প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসন্ন অর্থবছরে ১ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা। শিশুবিকাশ বিভাগ: প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসন্ন অর্থবছরে ৬০ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। বিধিবদ্ধ রেশনিং বিভাগ (দরিদ্র-নিম্নবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষসহ): প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসন্ন অর্থবছরে ৬০ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরে ৩ লক্ষ কোটি টাকা এবং সার্বজনীন পেনশন বিভাগ: প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসন্ন অর্থবছরে ৬০ হাজার কোটি টাকাসহ আগামী ৫ বছরে মোট ৩ লক্ষ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে সরকারি বরাদ্দ এখন ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। আমরা এ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৫২ হাজার ১৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি, যার মধ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে বর্তমান ২ হাজার ৮৬ কোটি টাকার বরাদ্দ ১৫.৪ গুণ বৃদ্ধি করে ৩২ হাজার ১২০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকার বরাদ্দ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ৫২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করছি।
পরিবহন ও যোগাযোগখাতে বর্তমান সরকারি বরাদ্দ ৭২ হাজার ২৮ কোটি টাকা। বিকল্প বাজেটে আমরা এ বরাদ্দ ১.৭১ গুণ বৃদ্ধি করে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ১০ কোটি টাকা প্রস্তাব করছি।
বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ বাবদ আমরা আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করছি। চলতি বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ খাতে সরকারের বরাদ্দ ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আমরা চাই, একদিকে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে, আর অন্যদিকে চাই মূল ঋণ ও সুদ পরিশোধে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক‚টনীতি জোরদার করতে। এ বছরের বাজেটে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘অর্থনৈতিক ক‚টনীতি বিভাগ’ প্রতিষ্ঠা এবং এ জন্য ৩০০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করছি।
ড. আবুল বারাকাত জানান, বাজেটে সরকারের আয়ের ২৭টি নতুন উৎস প্রস্তাব করছি। বাজেটে আয় বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত ২৭টি নতুন উৎস হলো, কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, অর্থ পাচার উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর (অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ), বিলাসী দ্রব্য/ পণ্যের ওপর কর, সংসদ সদস্যসহ অন্যদের ওপর গাড়ির শুল্ক মওকুফ বাতিল-উদ্ভ‚ত আহরণ, বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর, সেবা থেকে প্রাপ্ত কর, বিমান পরিবহন ও ভ্রমণ কর, রয়্যালটি ও সম্পদ থেকে আয়, প্রতিরক্ষাবাবদ প্রাপ্তি, রেলপথ, ডাক বিভাগ, সরকারের সম্পদ বিক্রয়, সেচবাবদ প্রাপ্তি, তার ও টেলিফোন বোর্ড, টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিআইডব্লিউটিএ, পৌর হোল্ডিং কর, ডিজি হেলথ: বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টার অনুমতি ও নবায়ন ফিস, ডিজি ড্রাগস: ঔষুধ প্রস্তুতকারী কোং লাইসেন্স এবং নবায়ন ফিস, বিউটিপার্লার সেবালব্ধ কর, আবাসিক হোটেল/ গেস্ট হাউস ক্যাপাসিটি কর ও বিদেশি পরামর্শ ফিস।
এদিকে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক পেশকৃত ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৩ লক্ষ ৯২ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। আর আমরা আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিকল্প বাজেটে ওই আয় ৪.৭৬ গুণ বৃদ্ধি করে ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি প্রস্তাবনায় ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডনিয়ন্ত্রিত করসমূহ’ ছিল ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা (যা ছিল মোট আয়ের ৮৪ শতাংশ) আমাদের প্রস্তাবনায় এই আয় ৩.৬৩ গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ১১ লক্ষ ৯৯ হাজার ১০০ কোটি টাকায় (যা আমাদের প্রস্তাবিত মোট আয়ের ৬৪ শতাংশ)। আয়ের উপখাত ‘আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর’ থেকে চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে ধরা হয়েছিল ১ লক্ষ ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা (মোট আয়ের ২৬.৭ শতাংশ), এই খাতে আমরা ৫.১০ গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি, যার ফলে এ উপখাত থেকে আয় হবে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (যা প্রস্তাবিত মোট আয়ের ২৮.৬ শতাংশ)। ‘মূল্য সংযোজন কর’ খাতে আমরা বর্তমানে সরকার প্রস্তাবিত ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার (৩২.৬ শতাংশ) ১.১ গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি, ফলে আমাদের প্রস্তাবনায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘মূল্য সংযোজন কর’ থেকে আয় হবে মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা (যা আমাদের প্রস্তাবিত মোট আয়ের ৭.৫ শতাংশ)।