৮ বছর পর বাবর-লিমনসহ ৬৩ আসামির বিচার শুরু

33

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেলওয়ের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সিআরবিতে সরকারি দলের দুই গ্রæপের সংঘর্ষে দু’জন নিহতের মামলায় ঘটনার ৯ বছর পর আসামিদের বিচার শুরু হল। ৬৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে এই বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ‘সিআরবির জোড়া খুন’ হিসেবে বহুল আলোচিত এ ঘটনার জন্য বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা। একজন হলেন যুবলীগের সাবেক নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর অন্যজন হলেন বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন এবং তাদের অনুসারীরা।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এদিকে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, অভিযোগপত্রে মোট ৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে আসামি অমিত মুহুরী কারাগারের ভেতরে খুন হন। তাকে বাদ দিয়ে বাকি ৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।
আসামিদের মধ্যে চার জন পলাতক আছেন। তারা হচ্ছেন, অসিত চক্রবর্তী, সুমন চৌধুরী, টিটু দাশ ও নুরুচ্ছফা টিপু। পাঁচজন সময়ের আবেদন করে শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, ইলিয়াছ, হাসমত আলী রাসেল, গাজী জাফর, রাজু মুন্সি ও রানা। আদালত তাদের আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত দুই শিরোমনি আসামি হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও সাইফুল আলম লিমনসহ বাকি ৫৪ আসামি শুনানির সময় আদালতে হাজির ছিলেন। জামিনে থাকা এসব আসামির প্রত্যেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আদালতের সামনে।
আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আগামী ২৫ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন বলে পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত : ২০১৩ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কৃত সহ-সম্পাদক সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে যুবলীগের কর্মী সাজু পালিত (২৮) ও শিশু আরমান (৮) নিহত হন।
এরপর বাবর-লিমনসহ যুবলীগ-ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। বাবর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং লিমন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সিআরবিতে রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মহিবুর রহমান বাদী হয়ে বাবর-লিমনসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। পরে নিহত সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত বাদী হয়ে অজিত বিশ্বাসকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত দুই মামলা একসঙ্গে তদন্তের আদেশ দেন।
তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ বাবর-লিমনসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তদন্তে উঠে আসে, রেলের ১ কোটি ১০ লাখ টাকার দরপত্র নিয়ে বাবর ও লিমনের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। তবে আদালত অভিযোগপত্র ত্রæটিপূর্ণ উল্লেখ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
পিবিআই তদন্ত করে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। সেই অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার পর গতকাল আলোচিত এই মামলায় উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এর মধ্যদিয়ে আলোচিত এই ডাবল মার্ডার মামলা বিচারে গড়াল।