৭ হাজার কোটি টাকার ১৩ প্রকল্পে ‘কচ্ছপগতি’

38

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৩টি প্রকল্পে প্রায় সাত হাজার ১১২ কোটি ৪১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার কাজ চলছে। চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৮টি উপজেলায় চলমান এসব প্রকল্পের কাজে যেন ‘কচ্ছপগতি’। ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে দু’টি প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। বাকি ১১টি প্রকল্পের কাজ আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব প্রকল্পে এখনো ৭ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ বাকি আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামাণিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে আমরা ঠিকাদারদের তাগাদা দিচ্ছি। তাদের সাথে মিটিং করছি। দ্রæত কাজ শেষ করতে চিঠিও দিচ্ছি। একপ্রকার ঠিকাদারদের চাপে রেখেছি। অনেক প্রকল্প আগের। এগুলোর যে বাজেট ছিল তার চেয়ে বর্তমানে বাজারমূল্য বেড়ে গেছে। এজন্য ঠিকাদারদের মধ্যে কাজের প্রতি অনীহা আছে।’
জানা যায়, বাঁশখালীর উপক‚লীয় ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার এলাকায় ২৯৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০১৫ সালে। গত সাত বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এখনো ১০ শতাংশ কাজ বাকি আছে। এ প্রকল্পে কয়েকদফা সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মিরসরাই উপজেলায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ককাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা ও নিষ্কাশন প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এক হাজার ৬৫৭ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার এ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এখনো ৮২ শতাংশ। এ প্রকল্পের কাজও আগামী জুনে শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ আছে।
সন্দ্বীপের পোল্ডার নং-৭২ এর ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। আগামী জুনে কাজ শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৯ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। এ প্রকল্পের এখনো ২৭ শতাংশ কাজ বাকি আছে। পতেঙ্গা, আনোয়ারা ও পটিয়ার আংশিক অংশ নিয়ে উপক‚লীয় এলাকার পোল্ডার নং- ৬২ (পতেঙ্গা), পোল্ডার নং- ৬৩/১ (আনোয়ারা), পোল্ডার নং ৬১/১বি (আনোয়ারা ও পটিয়া) পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। আগামী জুন মাসে কাজ শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ৫৭৭ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। মেয়াদ দুই মাস থাকলেও এখনো প্রকল্পের ৩১ শতাংশ কাজ বাকি আছে।
সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সাঙ্গু এবং ডলু নদীর তীর সংরক্ষণে ২০১৭ সালে নেয়া হয় ৩৫৪ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার প্রকল্প। আগামী জুনে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পের এখনো ৫৪ শতাংশ কাজ বাকি আছে।
ফটিকছড়ি, হাটহাজারীর হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী জুনে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন হয় ২০১৯ সালে। এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ তিন বছরেও শুরু হয়নি। সম্প্রতি রিটার্নিং ওয়ালের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ। হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর ভাঙন থেকে বিভিন্ন এলাকা রক্ষাকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৯ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অনুমোদন হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও রাঙামাটি পার্বত্যজেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী, ইছামতি নদী এবং শিলকসহ অন্যান্য খালের উভয় তীরে ভাঙন রক্ষা প্রকল্পটি ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়। ৩৯৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার এ প্রকল্পে ড্রেজিং কাজের ঠিকাদার নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ইতোমধ্যে ব্লকের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও খনন কাজ চলমান আছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০২১ সালের জুলাই মাসে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এক হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের দরপত্র আহŸান করে ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রম চলছে।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের পোল্ডার ৬৮ এর বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালে। ১৫১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা আগামী জুনে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার নাফ নদী বরাবর পোল্ডারসমূহ পুনর্বাসনে আরেকটি প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৭ সালে। ১৪১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার এ প্রকল্পের কাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অগ্রগতি এখনো ৫৩ শতাংশ।
চকরিয়া খুটাখালী ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও ভাঙনরোধ শীর্ষক ৩১ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে অনুমোদিত এ প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাউবোর প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেন। সভায় তিনি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেটা করবেন সেটা যেন টিকে থাকে সেভাবে করবেন। এক মাইলের শেষ মাথায় যেতে যেতে শুরুর মাথা ভেঙে যাবে এমন কাজ করা উচিত নয়।