‘৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিকামী বাঙালির জন্য ছিল নির্দেশনা’

14

 

পূর্বদেশ ডেস্ক

সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও জাতীয়ভাবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি স্বাধীনতাকামী বাঙালির উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বার্তা। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই জাতি স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

চসিক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাতই মার্চের ভাষণ দিলেই নিউক্লিয়াসের সদস্যরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু করে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গত মঙ্গলবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘যদিও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংগঠিত হয়, তবে ১৯৬২ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মীরা নিউক্লিয়াস নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য গোপনে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকেন। নিউক্লিয়াসের একজন সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা থাকাকালে আমি রাজনৈতিক সহকর্মীদের নিয়ে চট্টগ্রামে গোপনে সংগঠিত হতে থাকি। সেসময় নিউক্লিয়াসের স্লোগান ছিল বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো, জয় বাংলা, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। এসময় আমাদের কার্যক্রম চলতো একদম গোপনে। সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা শুনেই বুঝতে পারি যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। আমরা গোপনে সশস্ত্র অভিযানের জন্য মাঠে নেমে পড়ি। আর সাধারণ জনগণ মূলত ২৫ মার্চের কালোরাত্রির পর যুদ্ধে অংশ নেয়। যারা রাজনৈতিক সচেতন তারা সাতই মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতা আন্দোলনের ইংগিত পান, যা চূড়ান্ত রূপ পায় ২৬ মার্চ। সাতই মার্চের ভাষণ শুনলেই যে কেউ বুঝতে পারবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধু।’ এসময় তিনি নিউক্লিয়াসের মুছে যাওয়া ইতিহাসকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহবান জানান। বর্ণিল আয়োজনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস উদযাপন শুরু হয় বাটালি হিলস্থ নগর ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। এতে সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
পুস্পস্তবক অর্পণ ও সভায় অংশনেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, আবুল হাসনাত বেলাল, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানসহ সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহিদুল আলম চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. ইয়াছিন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল মাসুদ প্রমুখ।
জেলা প্রশাসন : ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবস উদযাপন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসি, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) একেএম সরোয়ার কামাল, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপি মো. সুলাইমান, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি, আর.আর.এফ কমান্ড্যান্ট (এসপি), চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, আনসার-ভিডিপিসহ বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সকাল সাড়ে ৯টায় বেলুন উড়িয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসিসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা। সকাল ১০টা থেকে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তিশিল্পী এডভোকেট মিলি চৌধুরীর সঞ্চালনায় শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল। আলোচনা সভা শেষে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিতে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, আবৃত্তি, দেশাত্ববোধক গান, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ‘মুজিব আমার পিতা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের তত্ত্বাবধানে ডিসি হিল, সিআরবি, টাইগারপাস মোড় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র, আলোকচিত্র ও ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়।
আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসি বলেন, বাঙালি জাতির শোষণ থেকে মুক্তির আন্দোলনে ৩টি বিষয় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জাতীয় সংগীত, ৭ই মার্চের ভাষণ ও জয় বাংলা স্লোগান। এই ৩টি বিষয় যুগে যুগে বাঙালির সকল উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

মহানগর আওয়ামী লীগ : চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে দেশ আবার ‘লুটেরাদের হাতে সমর্পিত’ হবে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে নগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি স্বাধীনতাকামী বাঙালির উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বার্তা। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই জাতি স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী ও খোরশেদ আলম সুজন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, ধর্ম সম্পাদক জহুর আহমদ, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ মো. আমিনুল হক বক্তব্য দেন। এছাড়া সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও শফিক আদনান, সম্পাদকমÐলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, জোবাইরা নার্গিস খান, আবু তাহের, আব্দুল আহাদ, জহর লাল হাজারী উপস্থিত ছিলেন।