’৭১ ও ’৭৫ এর লড়াকু বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হাসান

54

 

এক শীতার্ত ভোরে ১৯৫৫ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হাসানের জন্ম। চট্টগ্রামের পাকিস্তান বাজারের (বর্তমানে বাংলা বাজার) টিএম কম্পাউন্টস্থ বন্দরের আবাসিক এলাকায়। বন্দরের হারবার প্রকৌশলী পিতা মরহুম জনাব এম এ মালেক এবং মাতা মরহুমা ফাতেমা খাতুনের তৃতীয় ও পুত্র। শৈশব থেকেই রোগা ক্লিষ্ট শফিকুল হাসান খেলা-ধুলায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। সাঁতার, ফুটবল এবং বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনেক পদক ও সম্মাননায় ভ‚ষিত হন। পশ্চিম মাদার বাড়িস্থ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। ষষ্ঠ শ্রেণিতে আগ্রাবাদস্থ জিআরকে উচ্চ বহুমুখী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৮-৬৯ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলে ভর্তি হয়ে সাফল্যের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালে ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে রাজনীতিতে যোগদান। তার আগে ১৯৬৬ সালে লালদীঘি ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণার দিন লালদীঘি মাঠে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বে ও আদর্শে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত হন। পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার, ৬ দফা বাস্তবায়ন এবং ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনে নিজেকে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তখন তিনি মাত্র সদ্য কৈশোর যুবক।
তৎসময়ে চট্টগ্রামের ছাত্ররাজনীতি ও পাকিস্তানে বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল চট্টগ্রাম সিটি কলেজ। মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এবং সিটি কলেজ কাছাকাছি হওয়ায় সিটি কলেজে সংগ্রামী ছাত্রনেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সুলতানুল কবির চৌধুরী ও জাহানারা আঙ্গুর প্রভৃতি নেতৃত্বের সংস্পর্শে এসে নিজেকে আরও সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত করেন।
দক্ষিণ বাংলায় ১৯৭০ সালে প্লাবন ও গোর্কিতে দশ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। বন্যা উত্তর ৭০ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ বাঙালি নিধন ও গণহত্যা শুরু করে। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই মহাকাব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দশম শ্রেণিতে পাঠরত অবস্থায় শফিকুল হাসান মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসীকতার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের এক নং সেক্টরে মুজিব বাহিনীর অধীনে ফটিকছড়িতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করেন। তাঁর সাহস ও যোগ্যতার ফলে তিনি শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের সুদৃষ্টিতে আসেন। নি¤েœ তাঁর রাজনৈতিক পরিচিত তুলে ধরা হলÑ
১. নবম শ্রেণিতে অধ্যয়ন কালে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সদস্যপদ পূরণের মাধ্যমে সরাসরি ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হন। এখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা, আমৃত্যুই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন।
২. ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ জেএম সেন উচ্চ বিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ বাতিলের আন্দোলন তথা ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেন।
৩. বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক (১৯৭৫-৭৬) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক (১৯৭৮-৭৯) হিসাবে অতন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যান। তিনি ছাত্রলীগ জাতীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
৪. বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক (১৯৮৭-১৯৯৭) এবং যুব লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (১৯৯৪-২০১২) পর্যন্ত (শেখ সেলিম-কাজী ইকবাল কমিটি এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক-মীর্জা আজম কমিটি) যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহি কমিটির সদস্য থাকা কালে শেখ সেলিমের নির্দেশে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যুবলীগের শাখা গঠনে সংক্রিয় ভ‚মিকা রাখেন।
৫. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (১৯৯৭-২০০৬) তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক (২০০৬-২০১৯) পর্যন্ত দায়িত্ব কালে সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে যান।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এই নিবেদিত প্রাণ, সকল প্রকার লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থেকে একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এজন্য তাকে জেল, জুলুম, হুলিয়া এবং ব্যক্তিগত হামলার স্বীকার হতে হয়েছে বহুবার। ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে হুলিয়া মাথায় নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন এবং সমগ্র চট্টগ্রাম জুড়ে অগণিত কর্মী ও শিক্ষার্থীর সাথে নিবিড় যোগাযোগ করার সুযোগ ঘটে। যার ফলশ্রæতিতে ওই বছর সিটি কলেজ, মহসীন কলেজ ও এমইএস কলেজের ছাত্র সংসদে ছাত্র লীগের প্রার্থীগণ বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হওয়ার নজীর স্থাপিত হয়। এই অগ্রযাত্রার মূল কারিগর ছিলেন শফিকুল হাসান। যার প্রেক্ষিতে ১৯৭৮-৭৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের (জালাল-জাহাঙ্গীর) সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাÐের পর তার প্রতিবাদে জনমত সৃষ্টির বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রয়াত জননেতা এমএ মান্নান ও মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে সম্মুখ সারির এই কর্মী ও সৈনিককে হুলিয়া মাথায় নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের পাড়ায় পাড়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার এবং বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফেরাতের জন্য মিলাদ মাহফিল ও কাঙালি ভোজের উদ্যোগ নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তার এ ধরনের কাজে প্রয়াত জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই সার্বিক সহায়তা দান করেন।
১৯৭৭ সালে প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় তৎকালীন শাসকদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে চট্টগ্রামে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের’ ব্যানারে হুলিয়া মাথায় নিয়ে জননেত্রী ও দেশরতœ এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি এবং চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে শফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে লালদীঘি মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক খবর পত্রিকার সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান মিজান। উক্ত সভা উপলক্ষে ‘লক্ষ মুজিবের কণ্ঠ’ নামে স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন শফিকুল হাসান। যার সম্পাদক ছিলেন এসএম জামাল উদ্দিন বাবুল। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হারুন ও আওয়ামী প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান কায়সার এ সভাকে সফল করার জন্য সার্বিক সহায়তা দেন।
দলীয় নির্দেশে ১৯৮৫ সালে উপজেলা নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে এক পর্যায়ে গ্রেফতার হন। সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন এবং শাস্তি ভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্ম স্বীকৃত ঘাতক ফারুক-রশীদ চক্র ১৯৮৭ সালে লালদীঘি মাঠে সভা আহŸান করে। ঐ জনসভা ভÐুল করতে গিয়ে তিনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর ডান কানের পর্দা ও চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও তাদের সভা করতে দেয়া হয়নি। ১৯৮৭ সালে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার ইনফরমার (এজেন্ট) দ্বারা বোমা হামলার স্বীকার হয়ে বুকের ডানপাশে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। ঐ সময় তাঁর চিকিৎসাও আত্মগোপনে সহায়তা করেন প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান বাবু ভাই।
এ ঘটনার পরবর্তী সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়ে তাঁকে ঘটনাদি অবহিত করলে, তিনি ডা. মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন, ডা. মাজেদ এবং ডা. মোদাচ্ছে আলীর সমন্বয়ে কমিটি করে চিকিৎসা করাতে পূর্ণ সহযোগিতা দান করেন। তারপরও তাঁর হার্ট, কানে চোখে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় পরবর্তী জীবনে তা তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। প্রায়শ দেশ বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অবশেষে হৃদরোগের মাত্র ৬৫ বছর বয়সে এই অকুতোভয় সৈনিক লড়াকু বীর মুক্তিযোদ্ধা চির বিদায় নেন।
১৯৮৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার, চকরিয়ায় সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াসে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ছিলেন। তখন তাঁর সফর সঙ্গী হয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঐ দলে অধ্যাপক পুলিন দে, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও হাসনাত আবদুল্লাহ সহ অনেকে ছিলেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ প্লাবন ও জলোচ্ছ¡াসে দিশেহারা অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ত্রাণ কার্যক্রম, আশ্রয়কেন্দ্র ও লঙ্গরখানা পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তায় সক্রিয় ছিলেন।
চট্টগ্রামের মুসলিম হলে পঁচাত্তরের মূল ঘাতক ১৯৯৩ সালের ২৩ মে মোস্তাক আহম্মদ সভা করতে গেলে তা প্রতিহত ও ভÐুল করতে সক্রিয়ভ‚মিকা পালন করেন। সেই দিন ঘাতক মোস্তাক সভা না করে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ১৯৯৩-৯৫ সালে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগকে সুসংগঠিত করে জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ঘটাতে ২৮ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে তাঁর সভাপতিত্ব ও নেতৃত্বে লালদীঘি ময়দানে যুব সমাবেশ এবং সর্বকালের সর্ববৃহৎ লাঠি মিছিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক জনাব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৯৯৭-২০০৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসাবে সংগ্রামের অগ্রভাবে নেতৃত্ব দেন।
বঙ্গরতœ শেখ হাসিনা ১/১১ সামরিক জান্তার হাতে গ্রেফতার হলে সংগ্রামী নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী এমদাদুল হক দানুর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে পথ সভা, ঝটিকা মিছিল ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ৭ মার্চ জনাব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হলে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ ও পরামর্শ মতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যান।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাÐে : ১. প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ’। ২. উপদেষ্টা- মুজিব সেনা কেন্দ্রিয় কমিটি। ৩. আহŸায়ক- মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদ, ১নং সেক্টর ২০১০ থেকে আমৃত্যু। ৪. সদস্য- বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠি, মহানগর শাখা। ৫. আজীবন দাতা সদস্য- আনোয়ারা ডায়াবেটিক হাসপাতাল। ৬. আজীবন সদস্য- চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। ৭. সভাপতি- মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল প্রাক্তন সমিতি (২০০৯- হতে মৃত্যু অবধি)। ৮. প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক স্বাধীনতা পদক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর বিজয় দিবস পদক ইত্যাদি।
শফিকুল হাসান কিশোর বয়স থেকে রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। যার দলের প্রতি আনুগত্য, কর্মনিষ্ঠা, আদর্শ, ন্যায়পরায়নতা এবং সাধারণ মানুষের সাথে আত্মিক সম্পর্ক অনুসরণযোগ্য। তিনি যেমনি সাহসী ছিলেন তেমনি ছিলেন বাগ্মী। সাধারণ ছাত্র সমাজ এবং চট্টগ্রামবাসীর মন জয় করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন সরণযোগ্য। হালের অনেক কর্মী ও নেতা শফিকুল হাসানের হাত ধরে দলে এসেছেন। নিষ্ঠাবান ও সৎ রাজনীতিক হিসাবে তিনি জনস্বার্থ রক্ষার্থে এবং নায্য গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে ব্রত ছিলেন। অর্থবিত্ত তাঁর কাছে গৌণ ছিল। অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য তাঁর ছিল না বললেই চলে। সন্তানদের লেখা-পড়া ও সংসার নির্বাহের জন্য জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত ছিলেন। বলা যায় জীবন ও জীবিকার সংগ্রামের পাশাপাশি রাজনৈতিক অধিকার ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে অগ্রণী ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর পর জানা যায় যে, তিনি বেশকিছু এতিমখানা, মাদ্রাসা, মসজিদ ও কবরস্থান সংস্কারে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। তাঁর এক বন্ধু জানান যে এতিম ও মিসকিন এবং দরিদ্র মানুষকে নীরবে নিতৃতে লোকচক্ষুর আড়ালে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি সুন্নী, পীরভক্ত এবং ধর্ম পরায়ন ছিলেন। সাতক্ষীরার হযরত শাহ মাওলানা আবদুল আজীজ (র.) (খুলনার পীর সাহেব) এবং সাতকানিয়াস্থ শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ ইসলাম (র.)’র আশেকান ও মুরিদান ছিলেন। তিনি প্রায়শ খুলনা ও ধর্মপুর মাহফিলে শরীক ও যোগদান করে নেকী হাসিল করতেন। মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগে শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তার বর্তমান পীর সাহেব হযরত শাহ সৈয়দ কাজী আবদুল শকুরের সাথে শেষ বারের মতো সাক্ষাৎ করে ফয়েজ বরকত হাসিল করেন। তাঁর নামাজে জানাজা পড়ান পীর সাহেবের খেলাফত প্রাপ্ত হযরত মাওলানা শাহ সৈয়দ কাজী তাহসিন আহমেদ। জানাজায় মন্ত্রী, মেয়র ও অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি তাঁর জনপ্রিয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সমসাময়িক রাজনীতিতে শফিকুল হাসানের নিষ্ঠা আনুগত্য, সাহসিকতা ও পরিশ্রম তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর সংগ্রাম বৃথা যায় নি। দেশের বর্তমানে উন্নয়নের ধারা দেখে তাঁর আত্মা শান্তি লাভ করবে। মহান সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। তাঁর পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজন, রাজনৈতিক কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের শোক ও দুঃখ সইবার শক্তি দান করুন। আমীন।

লেখক: কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব.)