৬ দরপত্রেও ইজারাদার মিলেনি ৭ পুকুরের

46

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নিজস্ব ২৭টি পুকুর ইজারা দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় হতো। সময়ের পরিক্রমায় এসব পুকুর ইজারায় আয় কমেছে জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পুকুরগুলোর মধ্যে পাঁচটির ইজারা বন্ধ রয়েছে। গত চারমাসে সাতটি পুকুর ইজারায় ছয়বার দরপত্র আহব্বান করা হলেও কাঙ্খিত ইজারাদার মিলেনি। পুকুরগুলো ঘিরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে অস্থায়ী ভিত্তিতে দেয়া এসব পুকুর ইজারায় মানুষের আগ্রহ কম থাকার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৫টি পুকুরের ইজারা হলেও এগুলোর মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সাল ও ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল।
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৮ ফেব্রূয়ারি সাতটি পুকুরের ইজারায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা পরিষদ। এরপর থেকে গত ১২ মে পর্যন্ত ছয় দফা দরপত্র আহব্বান করা হলেও সাতটি পুকুরের কাঙ্খিত ইজারাদার মিলেনি। এখন সপ্তম ধাপের ইজারা কার্যক্রম চলছে এই সাত পুকুরের। পুকুরগুলো হলো পটিয়া সদর পুকুর, পটিয়ার চাপড়া পুকুর, মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর, রাউজানের বিনাজুরী, কাগতিয়া, পটিয়ার হুলাইন ও রাউজানের পাহাড়তলী মহামুনি দিঘি। ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এসব পুকুরের ইজারার মেয়াদ রাখা হয়েছে। এই সাত পুকুর থেকে আগে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আয় করতো জেলা পরিষদ।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবাল পূর্বদেশকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের পুকুর ইজারা থেকেই বড় ধরনের আয় হতো। মাঝখানে পুকুরগুলো ঘিরে জনস্বাস্থ্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকায় আমরা ইজারা দেয়া থেকে বিরত থাকি। এরমধ্যে চারটি পুকুর জনস্বাস্থ্যকে দেয়া হয়েছে। সেগুলো তারা সুপেয় পানি হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করেছেন। বাকি পুকুরগুলোও যে কোন সময় তারা চাইতে পারেন। এরপরেও কিছু আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে পুকুর ইজারার পরিকল্পনা নিই। আগে ইজারাদাররা তিনবছর মেয়াদে পুকুরগুলো নিতেন। এখন দরপত্রে কিছু নিয়মনীতি ধরে দেয়ার কারণে পুকুরগুলোতে ইজারাদার মিলছে না। যে কারণে আমাদের আয়ও কমে গেছে।’
জানা যায়, নিজস্ব আয়ের উপর নির্ভরশীল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। খেয়াঘাট, দোকান, পুকুরসহ নানা আয়বর্ধক স্থাপনার আদায়কৃত অর্থেই উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে জেলা পরিষদ। কিন্তু প্রতি বছরেই বিভিন্ন খাতে আয় কমছে জেলা পরিষদের। অন্যদিকে জেলা পরিষদে উন্নয়ন কাজের পরিধি বাড়ায় মন্ত্রণালয়মুখী থাকতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের ২৭টি পুকুরের মধ্যে দরপত্র আহব্বান করা সাতটি ছাড়াও বোয়ালখালীর ধোরলা, সাতকানিয়ার রূপকানিয়া, পটিয়ার শিকলবাহা, আনোয়ারার ডাকবাংলো পুকুর, পটিয়ার গোবিন্দখীল পুকুরের ইজারা মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালে। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল পটিয়ার ধলঘাট, মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড়, লোহাগাড়ার চুনতি-১, চুনতি-২, আনোয়ারার জয়কালিহাট, বোয়ালখালীর সরোয়াতলী, সীতাকুন্ডের মহাদেবপুর, ফটিকছড়ির নানুপুর-ঢালকাটা, চন্দনাইশের মাইগাতা, ফটিকছড়ির আদালত সংলগ্ন ধুরুং পুকুরের মেয়াদ শেষ হবে। এছাড়াও বোয়ালখালীর জৈষ্ঠ্যপুরা, পটিয়ার পাইকপাড়া, বাঁশখালীর পাইরাং ও মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া পুকুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। মামলাজনিত কারণে ধুরুং-চর রাঙ্গামাটিয়া পুকুরটির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন রায় পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা জেলা পরিষদের পুকুরগুলো নিয়ে পুনখনন করে সুপেয় পানির উপযোগী করার পরিকল্পনা করি। এ লক্ষে সবগুলো পুকুর সার্ভে করে প্রাথমিকভাবে চারটি পুকুর ঘিরে উন্নয়ন কাজ করি। এ পুকুরগুলো পুনখনন করে পিএসএফ (পুকুরের পানিকে পরিশোধন) করে খাবারের উপযোগী করে তুলেছি। ইতোমধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। নতুন করে কোন পুকুর ঘিরে আমাদের তেমন পরিকল্পনা নেই।’