৬ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট

152

সা¤প্রতিক প্রতিকূল আবহাওয়া (জলাবদ্ধতা), পোর্ট কানেকটিং সড়ক সংস্কার, বারিক বিল্ডি থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার উন্নয়ন কার্যক্রম, বন্দরের যানবাহন ও গণপরিবহন একই রাস্তায় চলাচল, সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য মূল সড়ক সংকুচিত হওয়া এবং চট্টগ্রাম শহরের জন্য বিকল্প সড়ক তৈরি না হওয়ায় বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ। গতকাল শনিবার দুপুরে বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব চিহ্নিত কারণগুলো তুলে ধরেন তিনি।
এ সময় তিনি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ঘনঘন সমন্বয় মিটিং করা জরুরি। কারণ সমন্বয় ছাড়া বিকল্প নেই।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, গত ১০-১২ দিন চট্টগ্রাম শহরে টানা বৃষ্টির কারণে বন্দরের বাইরে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চট্টগ্রাম ও বন্দর সংলগ্ন সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় সড়ক সংস্কার কাজ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম চলমান থাকায় এবং বন্দরে ট্রাক, ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় বন্দরের বাইরে যানজটের সৃষ্টি হয়। যা কোনো অবস্থাতেই চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে সৃষ্টি হয়নি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে সৃষ্ট তীব্র যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম শহরের জন্য প্রস্তাবিত দুইটি রিং রোড বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি হলো আগ্রাবাদ এক্সেস রোড-বড়পুল সড়ক-আনন্দবাজার-ইপিজেড সড়ক এবং অন্যটি হলো জিইসি-সাগরিকা-বেড়িবাঁধ সড়ক। বিকল্প সড়ক হিসেবে প্রস্তাবিত এই দুইটি রিং রোড দ্রুত বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম শহরের লাইফলাইন খ্যাত এয়ারপোর্ট-আগ্রাবাদ-লালখান বাজার-বহদ্দারহাট সড়কে যানজটের তীব্রতা কমে আসবে। সেই সাথে চট্টগ্রাম বন্দরসহ এই অঞ্চলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে। এছাড়া নিমতলা-অলংকার-আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সংস্কার কার্যক্রম দ্রæত শেষ করা জরুরি। এই দুই সড়কের উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের উৎপাদনশীলতা ও চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে জুলফিকার আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল ইয়ার্ডের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে এফসিএল কন্টেইনারের পণ্য ডেলিভারীর পাশাপাশী একটি আধুনিক ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলার টার্মিনাল নির্মাণ করছে এই নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হলে চট্টগ্রাম শহরের ভিতরে যানজট কমে আসবে।
বন্দর নিরাপদ থাকলে বিশ্বে শীর্ষ বন্দরসমূহের সারিতে পৌঁছানো কেবল সময়ের ব্যাপার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দর সংরক্ষিত এলাকায় নির্বিঘেœ প্রবেশের জন্য ইতোমধ্যে প্রত্যেক গেটে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম, ব্যাগেজ স্ক্যানার, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেকটর ও ইউভিএসএস স্থাপন করা হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের ৫০ হাজারের অধিক বায়োমেট্রিক ডাটাবেইজ সম্পন্ন করা হয়েছে যার বিপরীতে প্রায় ৪০ হাজারের অধিক ডিজিটাল পোর্ট এন্ট্রি পাস প্রদান করা হয়েছে। আর আর্ন্তজাতিক মানের বন্দর হিসেবে নিরাপত্তার স্বার্থে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ও কন্টেইনার পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির চালক ও সহকারী বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের পাস ইস্যু করার জন্য চালকের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সহকারীর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ইতোমধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কার্যক্রম দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ চেয়ারম্যান বলেন, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল ও ওভারফ্লো ইয়ার্ড নিমার্ণ এবং গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে এনসিটি জেটিতে ছয়টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরো চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন এনসিটি টার্মিনালে স্থাপন করা হবে। এতে করে জাহাজের কন্টেইনার লোডিং-আনলোডিংয়ে কার্যক্রম আরো গতিশীলতা আসবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম, সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টন এম শফিউল বারী, পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল তানভীর আহাম্মদ জায়গীরদার, সচিব ওমর ফারুক এবং উপ-সচিব (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আজিজুল মওলা প্রমুখ।