৬ কারণে আটকা ২৬ হাজার পাসপোর্ট

29

রাহুল দাশ নয়ন

মনসুরাবাদ ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে আবেদেনকৃত প্রায় ২৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু হয়নি। গত দুই অর্থ বছরে এসব আবেদন করা হলেও নানা জটিলতায় পাসপোর্টগুলো আটকে যায়। চিহ্নিত ছয়টি কারণেই নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট ইস্যু হয় না। এরমধ্যে তিনটি কারণে নির্ধারিত সময়ের পরে পাসপোর্ট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বাকি তিনটি কারণে পাসপোর্ট পেতে জটিলতা দেখা দেয়। এসব জটিলতার কারণে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন।
বিরূপ পুলিশ প্রতিবেদন, পুরাতন পাসপোর্টের তথ্য গোপন (এএফআইএস), সংশোধন জনিত কারণ, পুলিশ প্রতিবেদন পেতে দেরি হওয়া, আবেদনের নির্ধারিত সময় পূর্ণ না হওয়া ও প্রক্রিয়াধীন থাকার কারণে আবেদেনকৃত পাসপোর্ট ইস্যু আটকে যায়। এরমধ্যে বিভিন্ন সময় কিছু পাসপোর্ট মিললেও বাকিগুলো পুলিশের বিরূপ প্রতিবেদন, পুরাতন পাসপোর্টের তথ্য গোপন ও সংশোধনের কারণে আটকে যায়।
মনসুরাবাদ পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক আবু সাইদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘পাসপোর্ট পেতে এখন আর ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। ই-পাসপোর্ট আসার পর থেকে জটিলতা অনেক কমেছে। এখন পেন্ডিং পাসপোর্টের সংখ্যা অনেক কমেছে। কিছু পাসপোর্ট আটকে থাকলেও সেগুলো ক্রুটি-বিচ্যুতির কারণেই আটকা আছে। তথ্য ঘাটতি, তথ্য গোপনসহ পুলিশের বিরূপ প্রতিবেদনের কারণেই অনেকগুলো পাসপোর্ট মিলছে না।’
পাসপোর্ট অফিস সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের আবেদনকৃত (৩০ আগস্ট পর্যন্ত) ২৬ হাজার ৩০৭টি পাসপোর্ট ইস্যু হয়নি। মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে ২০২০-২১ অর্থ বছরে এমআরপি ২৪ হাজার ৮৭৫ পাসপোর্টের মধ্যে ইস্যু হয়েছে ২৩ হাজার ৫০১টি। একই বছরে আবেদনকৃত ৬২ হাজার ১৮৩টি ই-পাসপোর্টের মধ্যে ৫৮ হাজার ৪৮২টি পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে (৩০ আগস্ট পর্যন্ত) পাঁচটি এমআরপি আবেদন জমা পড়লেও সেগুলো ইস্যু করা হয়নি। একই সময়ে ই-পাসপোর্টের সাত হাজার ৬৯৫টি আবেদনের মধ্যে চার হাজার ২৮৭টি পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে মনসুরাবাদে আবেদনকৃত এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট মিলিয়ে আট হাজার ৪৮৩টি পাসপোর্ট এখনো ইস্যু হয়নি।
একই সময়ে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে এক লক্ষ ১৬১টি পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়লেও ইস্যু হয়েছে এক লক্ষ ৬ হাজার ৪৯টি। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৪৬ হাজার ৪২১টি আবেদনের মধ্যে ৩৪ হাজার ৪৯০টি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। সেখানে আবেদনকৃত এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট মিলিয়ে ১৭ হাজার ৮১৯টি পাসপোর্ট এখনো গ্রাহকের হাতে পৌঁছেনি।
জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামে। এরমধ্যে করোনায় বিভিন্ন সময় শিক্ষা, মেডিকেল ও এনওসি আছে এমন পাসপোর্ট ব্যতিত অন্যান্য পাসপোর্ট আবেদন বন্ধ ছিল। সাধারণত এমআরপির ক্ষেত্রে জরুরি পাসপোর্ট আবেদনের সাতদিনের মধ্যে এবং সাধারণ আবেদনের ২১দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করার নিয়ম। পাঁচ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি ইলেকট্রিক পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। ৪৮ ও ৬৪ পাতার দুই ধরনের ই-পাসপোর্ট সাধারণ আবেদনে ১৫ কর্মদিবস, জরুরিতে সাত কর্মদিবস ও অতি জরুরিতে দুই কর্মদিবসে ইস্যু করার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন যত দ্রুত হবে তত দ্রুত পাসপোর্ট ইস্যুতে সহায়ক হয়। অনেক সময় প্রিন্টিং জটিলতার কারণেও পাসপোর্ট নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ করা হয় না।
পাসপোর্ট অফিসের একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বলেন, আমরা পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ করার পর যে স্লিপ সরবরাহ করি সেটি আবেদনকারীকে চেক করার পরামর্শ দিই। চেক করে আবেদনকারী সঠিক আছে নিশ্চিত করলেই আমরা আবেদন আপলোড করি। এক্ষেত্রে অনেকেই সঠিক আছে বললেও পাসপোর্ট ইস্যুর পর ভুলক্রুটি হয়েছে বলে অভিযোগ নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে সংশোধন আবেদন নিয়ে পাসপোর্টগুলো পুনরায় ইস্যু করতে দেরি হয়।
বাকলিয়ার রাশেদুল হাসান নামে এক ব্যক্তি আবেদনের পাঁচমাসেও পাসপোর্ট হাতে পাননি। তিনি বলেন, ‘আবেদনকালে দুটি ঠিকানা ব্যবহার করেছি। পাসপোর্ট অফিস আবেদন গ্রহণ করেছে কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট নাকি এখনো আসেনি। যে কারণে পাসপোর্ট ইস্যু হচ্ছে না। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলেও তাঁরা বলেছেন এখনো ভেরিফিকেশন শেষ হয়নি। দুই ঠিকানা থাকার কারণে দুইবারই ভেরিফিকেশন করতে হবে।’