৫ লাখ টাকা না পেয়ে যুবকের পায়ে ‘গুলি’

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে যুবকের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগ এনে বায়েজিদ থানার সাবেক ওসিহসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক অসহায় মা। গতকাল রবিবার দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একবছর আগে পঙ্গু হওয়া সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন সাইফুলের মা ছেনোয়ারা বেগম। মামলায় ছয় পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন সোর্সকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার আসামীরা হলেন বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি মো. কামরুজ্জামান, বায়েজিদ থানার এসআই মেহের অসীম দাশ, এসআই মো. সাইফুল ইসলাম, এসআই কেএম নাজিবুল ইসলাম তানভির, এসআই নূরনবী, এএসআই মো. রবিউল হোসেন ও সোর্স শাহজাহান প্রকাশ আকাশ আমিন। বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী মফিজুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের ১৬ জুন রাত সাড়ে ৯ টায় নগরীর অক্সিজেন মোড়ের হোটেল জামান থেকে বাদীর ছেলে সাইফুল ইসলামকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ তার চোখ বেঁধে দুই ঘণ্টা বিভিন্ন সড়কে নিয়ে ঘোরায়। এরপর বায়েজিদ লিংক রোডে নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ওই টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে। টাকা না দেয়ায় তার পায়ে গুলি করে। এ কারণে তার এক পা হাসপাতালে কেটে ফেলতে হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১৬ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে বায়েজিদ থানার আমিন জুট মিলস্থ বার্মা কলোনির নুরুল আমিনের বাড়ি থেকে পতেঙ্গার নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হোটেল ছেনোয়ারায় যাচ্ছিলেন সাইফুল ইসলাম। এসময় সোর্স আকাশ ফোন করে অক্সিজেন মোড়ে হোটেল জামানে আসতে অনুরোধ করে। এরপর সাইফুল বাবার মোটরসাইকেলে হোটেল জামানে উপস্থিত হন। সেখানে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা তাকে ঘিরে ফেলেন। ওসি কামরুজ্জামান সাইফুলের শার্টের কলার চেপে ধরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন। সাইফুলকে সাদা প্রাইভেটকারে তুলে অন্য একজনকে ফোনে জামান হোটেলের সিডিটিভি ফুটেজ ডিলিট (মুছে ফেলতে) করার নির্দেশ দেন ওসি। গাড়ি বায়েজিদ লিংক রোডে গিয়ে থামে, সেখানে এসআই মেহের অসীম দাশ গাড়িতে উঠে সাইফুলকে বলে, ওপর থেকে তোমাকে ক্রসফায়ার দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। এখন আমাদের ৫ লাখ টাকা দিলে তোমাকে ছেড়ে দিব। সাইফুল তার কাছে এতো টাকা নেই বলে জানান। এরপর সাইফুলকে কলার চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন ওসি। তিনি সাইফুলের বাম পায়ের হাঁটুর ওপর এক রাউন্ড গুলি করে কয়েকটি ফাঁকা ফায়ার দেন। এরপর সাইফুল অজ্ঞান হয়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে তাকে ফেলে চলে যান। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আগারগাঁও জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে সাইফুলের চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে তার বাম পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে পুরো পা কেটে ফেলে দেওয়া হয়। পা ড্রেসিংয়ের পর অস্ত্র আইনে মামলা দিয়ে তাকে চালান দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকের ফেরত দেওয়া হয়নি।