৫ বছরে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশু বেড়েছে

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই শরণার্থীদের বিষয়ে গতকাল রোববার এক সভায় তিনি প্রতি বছর ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্মের তথ্য দিয়ে এই জনগোষ্ঠীর জন্মহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই দেশে তারা (রোহিঙ্গা) আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ বছর হল। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা দেখেছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলবো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলব, তারা যাতে সবাইকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে সবাইকে…।
মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি মুসলমান রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আসে ২০১৭ সালে। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও তারপর তা এগোয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এতদিন একজন রোহিঙ্গা শিশু যে হারে রেশন পেত, একজন বয়স্ক রোহিঙ্গাও সে হারে রেশন পেত। তবে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বয়স বিবেচনা করে রেশন দেওয়া হবে।
এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি’ কাজ করছে। রোববার সচিবালয়ে সেই কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিডিনিউজ/বাংলানিউজের।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আর ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে অবৈধভাবে পাসপোর্ট করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে কতজন রোহিঙ্গা অবৈধভাবে পাসপোর্ট নিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যদি কোনো অভিযান প্রয়োজন হয়, সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে। তিনি বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরও জোরদার করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেষ্টনী তৈরি করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম, সেটার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বেষ্টনী আর ২০ ভাগ যেটা বাকি আছে, সেটা শেষ হলে আমরা আরও কঠোর হবো। অনুমতি ছাড়া কাউকেই আমরা বের হতে দেবো না। তখন কতজন বের হয়ে গেছে, সেই তথ্য ইউএনএইচসিআর দিতে পারবে। তাদের কাছে আপডেট ডাটা আছে। আমরা তাদের রিকোয়েস্ট করবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি হয়েছে, এখানে রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন থাকবে আর রাস্তায় টহল দেবে, কোনো রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে, এটা আমরা জোরদার করছি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এবং আশেপাশে যাতে মাদক ব্যবসা না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাফ নদীতে মাদক চোরাচালান রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে যাচ্ছে। আমরা এ জায়গায় কঠোর হতে যাচ্ছি। আমরা কোনোভাবেই আমাদের সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যাতে মাদক ব্যবসা না করতে পারে, সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। আমরা যেটা অনুমান করছি, এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) মাদক স্টোর করা আছে। এরমধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এরসঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আথতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।